বাংলাদেশের সাহিত্য, গবেষণা ও সাংবাদিকতা অঙ্গনে এক উজ্জ্বল নাম মো. কামাল উদ্দিন। লেখালেখির মাধ্যমে তিনি সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন। গবেষণামূলক প্রবন্ধ, কলাম ও তথ্যনির্ভর লেখার মাধ্যমে তিনি ইতোমধ্যেই একজন ব্যতিক্রমী লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি একজন সংগঠক ও সমাজসেবক। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী এই গুণী ব্যক্তিত্ব পেশাগত ও সামাজিক পরিমণ্ডলে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা: মো. কামাল উদ্দিন ১৯৬৫ সালের ১০ মে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম চরণদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী নজর মোহাম্মদ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সফর মুল্লুক এবং মাতা মোছাম্মৎ জাকিয়া খাতুন। শৈশব থেকেই তিনি জ্ঞানার্জনে আগ্রহী ছিলেন এবং পাঠ্যবইয়ের বাইরেও নানা বিষয় অধ্যয়ন করতেন। তাঁর লেখালেখির প্রতি আগ্রহও ছোটবেলা থেকেই গড়ে ওঠে।
সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চা: সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মো. কামাল উদ্দিন একজন নিবেদিতপ্রাণ লেখক। সমাজ, রাজনীতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর গভীর অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। সমাজের নানান সমস্যা, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনসংগ্রাম, অন্যায় ও বৈষম্য তাঁর লেখার মূল বিষয়বস্তু। তিনি প্রথম বই ‘বাঁকা কথা’ (২০০৮) প্রকাশের মাধ্যমে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর ‘নারীকথা’ (২০০৯), ‘টক্ টক্ কথা’ (২০০৯), ‘বাংলাদেশে নির্বাচন ও নির্বাচনী তথ্য-উপাত্ত’ (২০১০) এবং ‘সমকথা’ (২০১১) প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখা ‘নির্মম নিয়তি’ (২০১৪), ‘মেঘের ভেতর জল’ (২০১৪) ও ‘জানা অজানা কথা’ (২০১৪) পাঠক মহলে বেশ সমাদৃত হয়।বর্তমানে তাঁর ‘ঠাট্টাকথা’ (রম্যগ্রন্থ), ‘কর্ণফুলী কথা’ (নদী বিষয়ক গবেষণা), ‘পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশ’, ‘জীবন কথা’, ‘শোক কথা’, ‘বিদেশ কথা’, ‘প্রেম কথা’ ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
গবেষণা ও সমাজ-সংস্কৃতিতে অবদান: মো. কামাল উদ্দিন কেবল সাহিত্যিক নন, তিনি একজন গবেষকও। তিনি বিভিন্ন ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। তাঁর লেখায় ইতিহাসের প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ উঠে আসে, যা পাঠকদের চিন্তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
তাঁর গবেষণার মূল ক্ষেত্রসমূহ: বাংলাদেশে নির্বাচন ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা, কর্ণফুলী নদীর ইতিহাস পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন, নারীর অধিকার ও সমাজে তাদের ভূমিকা,এইসব গবেষণাধর্মী লেখার মাধ্যমে তিনি ইতিহাস ও সমাজব্যবস্থার এক অনন্য দলিল রচনা করেছেন।
দেশ-বিদেশে ভ্রমণ ও আন্তর্জাতিক সংযোগ: পেশাগত ও গবেষণামূলক কাজে তিনি প্রায় বিশটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। আন্তর্জাতিক সাহিত্য ও সাংবাদিকতা মহলে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। ২০১২ সালে তিনি কোরিয়াতে অনুষ্ঠিত ৭৮তম বিশ্ব লেখক (PEN) সম্মেলনে যোগ দেন। সেখানে তিনি বিশ্বখ্যাত নোবেলজয়ী সাহিত্যিক Wole Soyinka (নাইজেরিয়া, ১৯৮৬), Le Clezio (ফ্রান্স, ২০০৮), PEN International President John Ralton Saul এবং কোরিয়ার জাতীয় কবি Ko Un ও গভর্নর Kwan-yong Kim-এর সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।
সাংগঠনিক ও সামাজিক ভূমিকা: তিনি কেবল লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ নন, বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়নমূলক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন।
তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনিক পদমর্যাদা: যুগ্ম সম্পাদক – দৈনিক ভোরের আওয়াজ, The Daily Banner,
জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক – বাংলা টিভির “চট্টগ্রাম সংলাপ” অনুষ্ঠান, প্রকাশক ও সম্পাদক – সময়ের আলো পত্রিকা কলাম লেখক – বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা। মহাসচিব – চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব – বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি, সদস্য – PEN International, Bangladesh Center, সদস্য – চট্টগ্রাম একাডেমি,
বিভাগীয় সমন্বয়কারী – বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল, সাধারণ সম্পাদক – চট্টগ্রাম গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ গ্রাহক কল্যাণ পরিষদ, জীবন সদস্য – চট্টগ্রাম সমিতি, ঢাকা; চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস সমিতি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল,
কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক – সাদা কালো মাল্টিমিডিয়া।
পুরস্কার ও সম্মাননা: তাঁর সাহিত্য ও গবেষণামূলক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ওশান সিটি সাহিত্য পুরস্কার (২০০৯), সুপ্রভাত রাউজান ট্রাস্ট গবেষক আবদুল হক চৌধুরী স্মৃতি পদক (২০১০),
মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্য পুরস্কার (২০১১),
বোয়ালখালী প্রেস ক্লাব সম্মাননা।
সমাজসেবামূলক কাজ ও বাণিজ্যিক উদ্যোগ: মো. কামাল উদ্দিন কেবল লেখক ও গবেষক নন, তিনি একজন সফল উদ্যোক্তাও। জীবিকার প্রয়োজনে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করেন, পাশাপাশি সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রমেও জড়িত আছেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে তিনি নিবিড়ভাবে যুক্ত আছেন এবং সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। মো. কামাল উদ্দিন একাধারে লেখক, গবেষক, সাংবাদিক, সংগঠক এবং সমাজসেবক। তিনি আপসহীনভাবে সত্য প্রকাশ করেন, ইতিহাস ও সংস্কৃতির সংরক্ষণের জন্য নিবেদিত থাকেন এবং সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরে সমাধানের পথ দেখান। তাঁর গবেষণামূলক লেখাগুলো বাংলাদেশের সাহিত্য ও সাংবাদিকতার জগতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তিনি কেবল নিজের লেখনীর মাধ্যমেই নয়, সামাজিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমেও দেশের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে তাঁর লেখনি ও গবেষণা বাংলাদেশের সাহিত্য ও সমাজবিজ্ঞান চর্চায় আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
—————-
সোহেল ফখরুদ-দীন, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।