শীতের মিষ্টি সকালে, পাহাড়ের সবুজ বুকের মাঝে, মহামায়ার শান্ত জলধারার পাশে আজকের এই দিনটি সত্যিই অনন্য হয়ে উঠেছিল। শতায়ু অঙ্গনের আয়োজনে এই বনভোজন শুধু একটি ভ্রমণই ছিল না, এটি ছিল এক ভালোবাসার বন্ধনে জড়ানো আনন্দ-উৎসব, যেখানে পরিবার, বন্ধু, সহযোদ্ধা—সবাই মিলেছিল এক অভিন্ন আবেগে।
আমি আমার পরিবারসহ এই আনন্দময় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। আমার স্ত্রী সেলিনা, দুই মেয়ে কাশপি ও সাইকি, আমার নাতি কাশিব এবং আমার ভাতিজা সাজিদ—আমরা সবাই একসঙ্গে এসেছিলাম এই প্রাণবন্ত মিলনমেলায়। পাশাপাশি ছিল আমার অসংখ্য প্রিয় বন্ধু, যারা দিনের প্রতিটি মুহূর্তকে স্মরণীয় করে তুলেছে।
সবুজ অরণ্যে প্রাণের উচ্ছ্বাস-
মহামায়ার বিশাল লেকের শান্ত জলে সকাল থেকেই বোটগুলো ছিল ব্যস্ত, শিশুরা আনন্দে চিৎকার করছিল, বড়রা তন্ময় হয়ে উপভোগ করছিলো প্রকৃতির সৌন্দর্য। গহীন সবুজের মাঝে পাখির ডাক, পাহাড়ের বুক চিরে আসা বাতাসের মৃদু শিহরণ—সবকিছু মিলিয়ে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। এই বনভোজনে ছিল নানা আয়োজন, যা আমাদের আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিল। খেলা, হাসি আর প্রতিযোগিতার উচ্ছ্বাস-বনভোজনে অংশ নেওয়া সবাই যেন নিজের শৈশবকে খুঁজে পেয়েছিল। নারীদের জন্য ছিল বালিশ খেলা, যেখানে প্রতিযোগীরা হাসির রোল তুলেছিল তাদের মজার কৌশলে। শিশুরা ব্যস্ত ছিল চকলেট খেলা নিয়ে, আর পুরুষদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হলো দৌড় প্রতিযোগিতা, যেখানে সবাই নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ছুটে গেল আনন্দের গন্তব্যে।
এই প্রতিযোগিতাগুলো শুধু খেলা ছিল না, বরং এটি এক বন্ধন সৃষ্টি করেছিল, যা আমাদের সবাইকে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। হাসি, আনন্দ, উচ্ছ্বাসে একেকটি মুহূর্ত রঙিন হয়ে উঠেছিল।
পিঠার গন্ধে মাতোয়ারা মুহূর্ত-
খেলা আর আনন্দের মাঝেও পেটপূজা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ! আর শীতকালীন বনভোজন পিঠা ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ। আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মতো—খেজুর গুড়ের পাটিসাপটা, চিতই, পুলি, দুধ-চিতলির মতো নানা রকম সুস্বাদু পিঠা, যার স্বাদ আমাদের স্মৃতিতে বহুদিন ধরে রয়ে যাবে। শিশুরা যেমন খুশি মনে পিঠা খেয়েছে, তেমনি বড়রাও গল্প করতে করতে এই ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ উপভোগ করেছে। একসাথে বসে খাওয়ার আনন্দ, একে অপরকে খাইয়ে দেওয়ার ভালোবাসা—এ যেন সত্যিকারের পারিবারিক মিলনমেলা।
রাফেল ড্র ও পুরস্কার বিতরণ-
বনভোজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল রাফেল ড্র। প্রত্যেকের হাতে ছিল কুপন, প্রত্যেকের চোখে ছিল অপেক্ষার আলো। কে পাবে পুরস্কার? এই উত্তেজনা যেন পুরো আয়োজনকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। কেউ পেল পুরস্কার, কেউ পেল না, কিন্তু সবার মুখেই ছিল হাসি—কারণ এটি শুধুই একটি খেলা, আনন্দের খেলা!
সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ও প্রশংসনীয় আয়োজন-
এই আয়োজনটি এত সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এর অন্যতম কারণ ছিল সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা। আয়োজক কমিটি, বিশেষ করে সভাপতি জাকের উল্লাহ ও তার সহযোগীরা যে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে পুরো আয়োজনটি সম্পন্ন করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, খাবারের মান, সময়মতো প্রতিটি কার্যক্রম সম্পন্ন করা—সব কিছু এত সুন্দরভাবে সাজানো ছিল যে, পুরো বনভোজনটি হয়ে উঠেছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। স্মৃতিতে রবে চিরকাল- দিনশেষে, সূর্য যখন পাহাড়ের পেছনে লুকিয়ে পড়ছিল, সবাই বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু মনে হচ্ছিল, এই দিনটি যেন কখনও শেষ না হয়! এই বনভোজন শুধু একটি আয়োজন ছিল না, এটি ছিল স্মৃতি গড়ে তোলার এক সুন্দর অধ্যায়। নতুন বন্ধুত্ব, পুরনো স্মৃতিচারণ, পারিবারিক বন্ধন—সব মিলিয়ে এক গভীর ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে গেছি আমরা সবাই। বিদায়ের সময় সবার মনেই ছিল একটাই আশা—এই আনন্দ আবার হবে, এই মিলনমেলা আবার বসবে, আবার আমরা সবাই একত্রিত হবো প্রকৃতির স্নিগ্ধ কোলে!
ভালোবাসার বন্ধনে একত্রিত শতায়ু পরিবার-মহামায়ার সবুজ অরণ্য, শান্ত লেক, পাহাড়ের ছায়ায় কাটানো এই দিনটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। শতায়ু অঙ্গনের এই বনভোজন আমাদের মনে শুধু আনন্দের স্মৃতি রেখে যায়নি, বরং আমাদের আরও কাছাকাছি এনেছে, আরও গভীর বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। এই মিলনমেলা শুধু একটি দিনের জন্য ছিল না, এটি এক চিরস্থায়ী অনুভূতি, যা আমাদের হৃদয়ে জ্বলজ্বল করবে বহুকাল ধরে