প্রথম পরিচয়: স্বপ্নের যাত্রা শুরু-
১৯৯০-এর দশকের কথা। আমরা তখন সবাই তরুণ, উদ্যমী, সমাজ বদলের স্বপ্নে বিভোর- আমি তখন ছাত্র সংগ্রাম কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি, আমার সাথে তখন যারা রাজপথে ছিল তাদের মধ্যে ওরা কয়েকজন অন্যতম ছিল – আমরা তখম
চট্টগ্রামের বেকার যুবকদের কল্যাণের কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম। বেকারত্ব দূর করা, যুবসমাজকে স্বাবলম্বী করা—এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা গড়ে তুলেছিলাম “আর্থ” (EARTH)নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। নামটির পেছনের মানুষটি ছিলেন সৈয়দ তসলিম উদ্দিন। “আর্থ” শব্দটি তারই প্রস্তাবিত—পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার প্রতীকী নাম।
আর্থের প্রতিষ্ঠা: এক ঝাঁক তরুণের অগ্রযাত্রা- ১৯৯৬ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আর্থের রেজিস্ট্রেশন নেওয়া হয়। প্রথম সভাপতি ছিলেন আমাদের প্রিয় নেতা এস. এম. জয়মাল উদ্দিন (চট্টলবন্ধু) এবং আমি (কামাল উদ্দিন) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাই। পরিচালক হিসেবে আমরা সবাই একসাথে কাজ করতাম। অফিস ছিল বহদ্দারহাট মোড়ে—যেখানে এখন আর সেই চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। সেই দিনগুলোর কথা মনে হলে চোখে ভাসে মেজবা উদ্দিন কচি, ইছাক, ওসমান সহ আরও অনেকের মুখ। তারা সবাই আমার রাজপথের আন্দোলনের অকৃত্রিম সঙ্গী ছিলেন। আমরা শুধু এনজিও চালাতাম না, স্বপ্ন দেখতাম বড় কিছু করার। হাভার্ট স্কুল এন্ড কলেজ”তসলিমের স্বপ্নের ফসল-
এনজিও চালাতে গিয়ে আমাদের মনে হলো, শিক্ষার মাধ্যমেই তরুণ প্রজন্মকে আলোর পথে আনা যায় । তাই আমরা একটি আধুনিক মানের স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিলাম। জায়গা ঠিক করলাম কালুরঘাট শিল্প এলাকায়, এফআইডিসির ভেতরে, ওসমানিয়া পুলের পাশে রাজা মিয়া মার্কেটের উপর তলা*। আমার বন্ধু **জামাল* সেখানকার জায়গা ভাড়া দিয়েছিলেন। স্কুলের নামকরণ আবারও করলেন তসলিম—”হাভার্ট স্কুল এন্ড কলেজ””। নামের পেছনে কোনো বিশেষ অর্থ ছিল কি না, জানি না, কিন্তু তসলিমের দেওয়া নামটি আমাদের খুব পছন্দ হয়েছিল। স্কুলের প্রথম সভাপতি করা হয়েছিল আমাকে, আর “প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তসলিম নিজেই- তসলিমের নাটক-প্রীতি ও স্কুলের মজার ঘটনা- তসলিম শুধু একজন দক্ষ শিক্ষকই ছিলেন না, তার মধ্যে ছিল অভিনয়-প্রতিভা। সে নিয়মিত নাটকে অভিনয় করত, বিশেষ করে মঞ্চ
নাটকে- তার ভূমিকা ছিল অনবদ্য। মাঝে মাঝে সে, মেকাপ না ঘেঁচেই সরাসরি স্কুলে চলে আসত। মুখে গাঁদা রঙের প্রলেপ, কখনো বা নাটকের পোশাক—এসব দেখে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হেসে লুটোপুটি করত। কিন্তু তসলিম কখনোই রাগ করত না। তার হাসিমাখা মুখ, উদার মনোভাব সবাইকে মুগ্ধ করত। আমেরিকায় পাড়ি: স্বপ্নের আরেক ধাপ- তসলিমের মুখে প্রায়ই শুনতাম—”আমি একদিন আমেরিকা যাব।” আমরা তখন হেসে উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু আজ সে সত্যিই আমেরিকায় স্থায়ী হয়েছেন। তার চলে যাওয়ার পরও হাভার্ট স্কুল চলছে, এখন সেটি পরিচালনা করছেন ইছাক। তবে প্রতিষ্ঠাকালীন জায়গায় নেই—স্থানান্তরিত হয়েছে।
আমাদের যৌথ সংগ্রাম: শিক্ষা আন্দোলন-
তসলিমের কথা ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-এর দিনগুলো। আমরা তখন দাবি তুলেছিলাম—শতভাগ চট্টগ্রামের লোকই যেন বোর্ডে নিয়োগ পায়। সেই আন্দোলনও সফল হয়েছিল। অনুভূতি: তসলিম আজও স্মৃতিতে-কী অদ্ভুত! আজও তসলিমের কথা মনে হলে হাসি পায়। সে কি আমাদের সব কথা মনে রাখে? হয়তো বা। হয়তো সময়ের স্রোতে কিছুই ঝাপসা হয়ে গেছে। তবুও আমি বিশ্বাস করি, যে বন্ধুত্ব একবার গড়ে ওঠে, তা কোনোদিন মরে না।
ইনশাআল্লাহ, একদিন আবার সবাই মিলবো। হয়তো চট্টগ্রামের কোনো এক কোণে, হয়তো আমেরিকায়।ততদিন পর্যন্ত—স্মৃতির পাতায় তসলিম, তুমি জ্বলজ্বলে থাকো।