চট্টগ্রামের এবারের পহেলা বৈশাখ শুধু উৎসব নয়, হয়ে উঠেছিল এক অনন্য মানবিকতার সাক্ষর। যেখানে ব্যস্ত শহরের কোলাহলে হারিয়ে যাওয়া পথশিশুরাও পেয়েছে একটু সম্মান, একটুখানি ভালোবাসা, নতুন জামা-কাপড় আর পেটভরে খাওয়ার সুযোগ। এই ব্যতিক্রমী আয়োজনের পেছনে ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সম্মানিত কমিশনার জনাব হাসিব আজিজ এবং কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মো. আবদুল করিম।
কমিশনার সাহেবের দূরদর্শী দিকনির্দেশনা ও ওসি করিম সাহেবের নিবেদিত নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা এই আয়োজনে শুধু দায়িত্ব নয়, হৃদয়ও দিয়ে ছিলেন। পথশিশুদের চুল কেটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন জামা-কাপড়। তারওপর ছিল বৈশাখের পরম ঐতিহ্য—পান্তা-ইলিশের ভোজ। পুরো আয়োজনটি হয়ে উঠেছিল উৎসবমুখর, পরিবারবিক আনন্দে ভরপুর।
এই আয়োজনে আমি নিজেও অংশ হতে পেরে আত্মতৃপ্তি অনুভব করেছি। বাটালি হিলের সবুজ ছায়ায় আমি নিজ হাতে দুজন পথশিশুকে বৈশাখী পোশাক ও পান্তা-ইলিশ খাওয়ার টোকেন দিয়েছি। তাদের চোখে যে বিস্ময় আর আনন্দ ছিল—সেটাই আমার বৈশাখের সবচেয়ে বড় আনন্দ। পথশিশুরা যখন নতুন জামায় হাসছে, পেটভরে খাচ্ছে, তখন মনে হচ্ছিল—এই সমাজে এখনো মানুষ আছে, যারা শুধু নিজের উৎসবেই সীমাবদ্ধ থাকেন না, বরং অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে ভালোবাসেন।
এখন প্রশ্ন হলো, এই সুন্দর ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ কেন শুধু পুলিশের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবে? সমাজের বিত্তশালী, ব্যবসায়ী, কর্পোরেট হাউজ কিংবা সামাজিক সংগঠনগুলোও কি এভাবে এগিয়ে আসতে পারেন না? প্রতিটি উৎসবেই যদি এইরকম কিছু শিশু হাসতে পারে, তবে সেটাই হবে আমাদের প্রকৃত উৎসব, আমাদের মানবিক জয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এই উদ্যোগ আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—শুধু রাইফেল নয়, ভালোবাসাও পুলিশের হাতে শোভা পায়। Commissioner হাসিব আজিজ ও ওসি আব্দুল করিম প্রমাণ করেছেন, নেতৃত্ব মানে কেবল প্রশাসন নয়—নেতৃত্ব মানে মমতা, উদারতা এবং একজন মানুষের আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সাহস।
এই বৈশাখে তাই বারবার মনে হয়েছে—আনন্দ তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন তা অন্যের মুখেও হাসি ফোটাতে পারে। আর সেই হাসি ছড়িয়ে দিতে পারে একেকজন মানুষ, যাঁরা অন্তরে ধারণ করেন সত্যিকারের ভালোবাসা।
সোচ্চার কণ্ঠে, আপসহীন মনোভাব নিয়ে একজন পুলিশ কমিশনার যখন দায়িত্ব পালন করেন, তখন সমাজে একটি আলাদা আস্থা জন্ম নেয়। বর্তমান পুলিশ কমিশনার সেই বিরল চরিত্রের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি কেবল একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নন, বরং একজন মানবিক নেতা, যিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সমাজকে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল রাখার জন্য।
তিনি নিঃস্বার্থভাবে জনগণের পাশে দাঁড়ান, অপরাধ দমনে যেমন কঠোর, তেমনি অসহায় মানুষের প্রতি তার হৃদয়ের দরজা সবসময় খোলা। তাঁর চোখে অপরাধী মানেই অপরাধী—সে যেই হোক না কেন। এই আপসহীন নীতিই তাঁকে আলাদা করে দেয়।
পুলিশ বাহিনীকে তিনি কেবল প্রশাসনিক বাহিনী হিসেবে নয়, বরং জনগণের বন্ধু হিসেবে গড়ে তুলতে চান। সড়ক থেকে শুরু করে সমাজের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত তাঁর নজরদারি, পরিকল্পনা ও তৎপরতায় এক নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে।
দেশপ্রেম তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হয়। তাঁর কর্মদক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠা আজ আমাদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। একজন প্রকৃত সেবকের মতোই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন, কোনো বাহবা কিংবা স্বীকৃতির আশায় নয়, বরং দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকেই।
এই সমাজে এমন মানুষ বিরল, যিনি নিজের সুবিধার চেয়ে জনগণের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেন। এই পুলিশ কমিশনার সেই দুর্লভ উদাহরণ, যাঁকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবো তাঁর অবদান ও সাহসিকতার জন্য।