ঘুমিয়ে আছে কুকুরের সাথে, পথের ধুলো বালিশ,
অভিশপ্ত এ সমাজ, করে নিঃসঙ্গ বাস,
সন্তানের ঘরে ঠাঁই হলো না, ফুটপাতে আজ শেষ ঠিকানা,
মানবতা কাঁদে রাতে, কিন্তু সকালে ভুলে যায় ইতিহাস।
রাত তখন দুটো। নিস্তব্ধ নগরীতে হালকা বাতাস বইছে, কিন্তু ফুটপাতে শুয়ে থাকা বৃদ্ধের শরীরে সেই বাতাস ঠান্ডা শিহরণ ছড়িয়ে দিচ্ছে। তার গায়ে সাদা মলিন পোশাক, শরীর কুঁকড়ে আছে ঠান্ডায়। পাশে একটি কুকুর গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে, যেন বৃদ্ধের একমাত্র সঙ্গী সে। অথচ আশেপাশে আলো ঝলমলে শহর, চোখ ধাঁধানো হোটেল, আর উঁচু বিল্ডিংয়ের জানালায় পর্দা টেনে ঘুমিয়ে থাকা মানুষেরা।
এই মানুষটিরও তো নিশ্চয়ই কোনো ঘর ছিল, কোনো পরিবার ছিল। হয়তো কোনোদিন তিনিও সন্তানের জন্য নতুন জামা এনেছিলেন, কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন খেলার মাঠে। সেই সন্তানরাই কি আজ তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে? নাকি সমাজের নিষ্ঠুর নিয়তির শিকার হয়ে একদিন এসে ঠাঁই নিয়েছেন এই নির্জন ফুটপাতে?
একটু পাশে চকচকে গাড়ি থামে, কেউ একজন দামি হোটেলে ঢুকে পড়ে। সেখানে ইফতারের পরও জমে থাকা খাবার প্লেটের পর প্লেট ফেলে দেওয়া হয়। অথচ এই বৃদ্ধ? তিনি কি ইফতার করেছিলেন? কেউ কি তাকে একবার জিজ্ঞেস করেছে, “চাচা, কিছু খেয়েছেন?”
এই দৃশ্য দেখে কি কারও হৃদয় কেঁপে ওঠে? কুকুরের সাথে ঘুমিয়ে থাকা এই বৃদ্ধ আমাদের চোখে কি লজ্জা আনে না? আমাদের সমাজ, আমাদের পরিবার, আমাদের সভ্যতা কি এতটাই নির্মম হয়ে গেছে যে, একজন মানুষকে তার শেষ জীবনে পথে নামতে হয়?
রমজান মাস চলছে। মসজিদে মসজিদে মানুষ নামাজ পড়ছে, দান করছে। কিন্তু এই বৃদ্ধ? তার নামাজের জায়নামাজ কি শুধু এই রুক্ষ পাথরের ফুটপাত? তার দোয়া কি কারও কান পর্যন্ত পৌঁছাবে?
একদিন এই মানুষটি হয়তো এই শহরেরই কোনো কারখানায় কাজ করতেন, হয়তো কোনো অফিসের কর্মচারী ছিলেন, হয়তো কোনো সংসার সামলেছেন। অথচ আজ তার ঠিকানা ফুটপাতে, কুকুরের পাশে।
আমরা কি কিছুই করবো না? শুধু ছবি তুলে, দেখে, কয়েক মুহূর্ত দুঃখ পেয়ে ভুলে যাবো? নাকি সমাজের কাছে প্রশ্ন তুলবো—একজন বাবা-মার শেষ ঠিকানা কেন ফুটপাত হবে? কেন তাদের সঙ্গী হবে কুকুর, সন্তান নয়?
কেউ কি এগিয়ে এসে বলবে, “চলুন বাবা, আপনাকে ঘরে নিয়ে যাই?”