গতকাল, যখন আমি জুমার নামাজ পড়তে হাজির হয়েছিলাম পাঠান্যাগোদা মৌলভী পুকুর সংলগ্ন হযরত সুলতান শাহা জামে মসজিদে, তখন আমার হৃদয়ে এক অদ্ভুত প্রশান্তি ও অভিজ্ঞতার উপলব্ধি হয়। মসজিদটির নতুন ভবন এখনো উদ্বোধন না হওয়ায়, মাজার এবং মাজার সংলগ্ন স্থানেই নিয়মিত নামাজ আদায় করা হয়। কিন্তু আমার জন্য বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল যখন আমি সুলতান আহাম্মদ শাহার মাজারের বারান্দায় নামাজ পড়লাম। আমার বন্ধু আইয়ুব খান, যিনি হযরত সুলতান শাহের নাতি, আমাকে তাদের মাজারের ভিতরে নামাজ আদায়ের সুযোগ দেন। এই সুযোগটি আমি সত্যিই মহামূল্যবান হিসেবে অনুভব করেছিলাম, কারণ আমি সুলতান শাহার মাজারের ব্যাপারে আগেই অবগত ছিলাম, তবে আইয়ুব খানের আত্মীয়তা আমাকে কিছুটা বিশেষ সম্মান দিয়েছে, যা আমাকে সত্যিই অভিভূত করেছে।
নামাজ পড়ার সময়, আমি এমন এক শান্তি অনুভব করেছি যা ভাষায় প্রকাশ করা খুব কঠিন। নামাজের পূর্বে মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ নেজাম উদ্দীন নিজামী আল ক্বাদেরী সাহেব যেভাবে বয়ান করেছেন, তা আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি কোরআন ও হাদিসের মাধ্যমে মুসলমানদের কাছে কিছু অপ্রিয় কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সত্য তুলে ধরেছেন, যা আমার হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে তিনি একটি বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেছেন—যা হচ্ছে, আমরা অনেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিকভাবে আদায় করি না। অনেকেরই সময়ের অভাবে নামাজ পড়া হয় না এবং কেউ কেউ একাধিক দিনের নামাজ কখনোই সঠিকভাবে আদায় করেন না।
তবে, আমাদের মধ্যে কিছু লোক আছেন যারা শুধু শুক্রবারের নামাজ নিয়মিত আদায় করে, কিন্তু সেটা করেও পুরোপুরি জামাতে অংশগ্রহণ করেন না। তারা মসজিদে প্রবেশ করে কখনোই শেষ জামাতের আগে নামাজ শেষ করে চলে আসে। মাওলানা নেজাম উদ্দীন সাহেব এর এই বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছিলেন এবং তিনি হাদিসের আলোকে মুসলমানদের প্রতি উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, কিছু মানুষ নামাজের জন্য মসজিদে আসে, কিন্তু তারা শুধুমাত্র দুই রাকাত নামাজ পড়েই তাড়াতাড়ি চলে যায় এবং ইমামের মোনাজাতেও অংশগ্রহণ করেন না, যা সত্যিই দুঃখজনক।
বয়স, কাজের ব্যস্ততা বা অন্য কোনো কারণে যদি নামাজে ভুল হয়, তবে সবার উচিত নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া এবং ইসলামিক আদব অনুযায়ী নামাজ আদায় করা। অনেক সময় আমরা এমন কিছু মানুষ দেখি যারা নামাজ পড়ে মসজিদে আসা এবং অন্যদের প্রতি এক ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করে চলে যায়। তাদের দেখে খুবই লজ্জা অনুভব করি, কেননা তাদের অদৃষ্ট আর নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধা কম।
নামাজ শেষ হওয়ার পর, আমি সুলতান শাহের মাজার জিয়ারত করতে গেলাম। আইয়ুব খান আমাকে নিয়ে গেলেন সুলতান শাহার খানকাহে, যেখানে সুলতান শাহের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র হাতে ধরে দেখে আমি এক অদ্ভুত আবেগ অনুভব করছিলাম। সুলতান শাহের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও তাঁর জীবনের প্রতিটি দিক আমাকে মুগ্ধ করেছিল। ওই মুহূর্তে আমার মনে হলো, আমি যেন সুলতান শাহের জীবনী লেখার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। তাদের ইতিহাস, সংগ্রাম এবং জীবনধারা সম্পর্কে লিখলে পৃথিবী জানবে কত মহান এবং আলোকিত ছিলেন তিনি।
এ কারণেই, আমি মনে মনে প্রস্তাব করলাম—এত বড় একটি ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের জীবন এবং অবদান সম্পর্কে আমি একটি বিস্তারিত জীবনীগ্রন্থ লিখব। সুলতান শাহের জীবন থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে, এবং আমি বিশ্বাস করি, তার ইতিহাস আমাদের জন্য এক অমূল্য রত্ন হয়ে থাকবে, যা ভবিষ্যতের প্রজন্মকে ইসলামি আদর্শ এবং জীবনের সঠিক পথ দেখাবে।
এই স্মরণীয় জুমার নামাজ এবং মাজার জিয়ারতের অভিজ্ঞতা আজও আমার মনে উজ্জ্বল। আমি মনে করি, আল্লাহর কাছে আরও বেশি পরিমাণে দোয়া এবং তওবা করার জন্য এটি একটি সেরা সুযোগ ছিল, এবং আমাদের সব মুসলমানদের উচিত নিজেদের ধর্মীয় দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালন করা। হযরত সুলতান শাহ এর ইতিহাসকে জানিয়ে এবং তার জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমরা আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর এবং উন্নত করতে পারব।