বোয়ালখালীর আঁধার ভেদ করে যেন এক আলো ছড়িয়ে পড়ছে—এই আলোর নাম ওসি গোলাম সারোয়ার। পাহাড়ঘেরা এই জনপদে, যেখানে অস্ত্রের ঝনঝনানি আর চোলাই মদের গন্ধ মিশে ছিল বাতাসে, সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি অপরাধীদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছেন। বিগত সরকারের ছত্রছায়ায় যারা চাঁদাবাজি, জায়গা দখল, মদ কারবার আর অস্ত্রবাজিতে লিপ্ত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে নির্ভীক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দিনের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে, বোয়ালখালীর প্রতিটি অলিগলিতে তার উপস্থিতি যেন অপরাধীদের চোখে নিদ্রাহীন স্বপ্ন। মাদক নির্মূল আর অস্ত্র উদ্ধারে ওসি সারোয়ারের এই যুদ্ধ যেন এক নিঃশব্দ বিপ্লব, যা বোয়ালখালীকে ধীরে ধীরে ফিরিয়ে দিচ্ছে হারানো শান্তি।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী যেন এখন অপরাধের এক জটিল জাল। পাহাড়ের নির্জন গহীনে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে টনকে টন বাংলা চোলাই মদ, যা সরবরাহ হচ্ছে সারা চট্টগ্রামে। এই অবৈধ ব্যবসার পেছনে আছে একাধিক গডফাদার, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় লালিত মাদক ব্যবসায়ী এবং তথাকথিত নেতা। কিন্তু এই অন্ধকারের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন একজন সাহসী যোদ্ধা—বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারোয়ার। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নির্ভীক অবস্থান নিয়ে ওসি সারোয়ার বোয়ালখালীকে মাদকমুক্ত করার যে শপথ নিয়েছেন, তা প্রশংসনীয় হলেও চ্যালেঞ্জের শেষ নেই। প্রতিনিয়ত তাকে লড়াই করতে হচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল, রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগী এবং সশস্ত্র মদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।
অন্ধকার জগতের কারিগর: কারা এই মদের ব্যবসায়ীরা?
বোয়ালখালীতে মদের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে একাধিক ব্যক্তি, যাদের মধ্যে রয়েছেন মোঃ সুমন (করুলডেঙ্গা), সাইফু, মোঃ সাদেক, কামরুল, দেলোয়ার, মোঃ হোসেন, কাউছার, রুবেল, বুকবুল, মাসুদ, এস আলম, মোহাম্মদ ইউসুফ, জহির মল্ল, শিবু সরদার (পটিয়া), প্রদ্বীপ সর্দার (পটিয়া) প্রমুখ।
তবে এই ব্যবসার প্রধান হোতা হিসেবে উঠে এসেছে খুনি খল্লাকাটা কামালের নাম, যিনি পাহাড়ি অঞ্চলকে মদের কারখানায় পরিণত করেছেন। কামালের নেতৃত্বে বোয়ালখালী, রাঙুনিয়া এবং পটিয়ার পাহাড়ি এলাকায় চলছে অবৈধ মদের কারবার, চাঁদাবাজি, সশস্ত্র ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ড। কামালের হাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র থাকায় সে হয়ে উঠেছে বোয়ালখালীর অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক।
ওসি সারোয়ারের উদ্যোগ: অভিযান এবং সফলতা
ওসি গোলাম সারোয়ার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বোয়ালখালীকে মাদকমুক্ত করতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছেন। নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে সম্প্রতি বোয়ালখালী থানার পুলিশ কয়েকটি বড় চালান আটক করেছে। এক অভিযানে সুজন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল হোতা সুমন এখনো পলাতক। পাহাড়ি এলাকায় অপরাধী গোষ্ঠীর শক্ত অবস্থান এবং তাদের রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকায় প্রতিটি অভিযানে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এগোচ্ছেন ওসি সারোয়ার। কিন্তু তার অদম্য সাহস ও নিষ্ঠার ফলে বোয়ালখালীতে মাদকের বিস্তার অনেকাংশে কমেছে।
রাজনৈতিক প্রভাব: বাধার দেয়াল
ওসি সারোয়ারের এই অভিযানকে প্রতিহত করতে উঠে পড়ে লেগেছে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা ও তাদের সহযোগী দালালরা। তারা থানাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে এবং অন্যদিকে প্রশাসনের অন্যান্য সংস্থাকে ভুল তথ্য দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ কার্যক্রম।
পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের সহযোগী খুনি খল্লাকাটা কামাল মদের এই সাম্রাজ্যের প্রধান নিয়ন্ত্রক। কামাল পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় বসে অবৈধ অস্ত্রের জোরে পুরো বোয়ালখালীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে।
বোয়ালখালী থানা: আইন-শৃঙ্খলা ফেরাতে দৃঢ় অবস্থান
ওসি গোলাম সারোয়ারের নেতৃত্বে বোয়ালখালী থানার পুলিশ প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি চালান জব্দ করায় সিন্ডিকেটের অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছে। তবে ওসি সারোয়ারের ঘোষণা স্পষ্ট—“বোয়ালখালীকে মাদকমুক্ত না করে আমি থামব না।” তাঁর এই সাহসী উচ্চারণ বোয়ালখালীর সাধারণ মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে। মাদকমুক্ত বোয়ালখালী গড়তে জনগণেরও সহযোগিতা দরকার। ওসি সারোয়ার জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন, কেউ যেন কোনো অপরাধ সম্পর্কে তথ্য গোপন না করেন এবং অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে পুলিশকে সহায়তা করেন। আশার আলো: জনগণের আস্থা ও পুলিশের প্রতিশ্রুতি ওসি গোলাম সারোয়ার বোয়ালখালীর মানুষের কাছে ইতোমধ্যেই একজন সাহসী ও নির্ভীক অফিসার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তার নেতৃত্বে বোয়ালখালীতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নতি করেছে, যা প্রশংসনীয়। তবে এই যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।
“অপরাধীরা যত শক্তিশালী হোক না কেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে।” – এই ঘোষণা শুধু থানার ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি প্রতিটি বোয়ালখালীবাসীর জন্য একটি বার্তা। বোয়ালখালী যেন একদিন সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত হয় এবং এখানকার পাহাড়ি অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসে—এটাই ওসি সারোয়ার এবং
বোয়ালখালীবাসীর সম্মিলিত স্বপ্ন।