কোতোয়ালী থানার জামালখান এলাকায় ব্যবসায়ী মো. নূরুল আমিনকে অপহরণ, নির্যাতন, এবং মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় অভিযুক্ত মাসুদের বড় ভাই এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের ঘনিষ্ঠ পার্টনার জসিম গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই গ্রেপ্তারের পর ধারণা করা হচ্ছে, মাসুদকে গ্রেপ্তার করতে পারলে এই অপহরণসহ পুরো চক্রের সকল অপকর্মের তথ্য প্রকাশ পাবে। অপহরণের ঘটনা ও মুক্তিপণ দাবি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নূরুল আমিন অভিযোগ করেছেন, মাসুদ নামে এক ব্যক্তি নিজেকে প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করেন। ব্যবসায়িক প্রলোভন দেখিয়ে মাসুদ তাকে ৩ সেপ্টেম্বর পাথরঘাটার জসিম টাওয়ারে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পরপরই মাসুদ ও তার সহযোগীরা নূরুল আমিন এবং তার পার্টনার জাবেদ হোসেনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন।
তাদের চোখ-মুখ বেঁধে নির্জন কক্ষে আটকে মারধর করা হয় এবং ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, তাদের বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়, যা ব্যবহার করে অতিরিক্ত ৭৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে পরিবারকে অপহরণ এবং ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক গাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। জসিমের ভূমিকা ও গ্রেপ্তার অভিযোগ অনুযায়ী, এই অপহরণের প্রধান সংগঠক মাসুদের বড় ভাই জসিম, যিনি পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের ঘনিষ্ঠ পার্টনার হিসেবে পরিচিত। পাথরঘাটার জসিম টাওয়ারে ভুক্তভোগীদের আটকে রেখে নির্যাতনের পুরো পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের তৎপরতায় জসিমকে তার অন্য অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে অপহরণকারি মাসুদ এখনও পলাতক রয়েছেন। পুলিশের বক্তব্য ও তদন্ত অগ্রগতি কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানিয়েছেন , এ ঘটনায় জসিমের গ্রেপ্তার তদন্তে নতুন দিক উন্মোচন করেছে। মাসুদকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। সাবেক ওসি আরও জানান, মাসুদ গ্রেপ্তার হলে তার নেতৃত্বে পরিচালিত অপহরণ, ব্ল্যাকমেইলিং এবং অন্যান্য অপরাধের বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে।
জনমনে প্রশ্ন ও প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ এই ধরনের ঘটনা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের ঘনিষ্ঠতার কারণে কি জসিম এতদিন আইনের আওতার বাইরে ছিলেন? স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয় পদক্ষেপ এই অপরাধ চক্রকে ভেঙে দিতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও তৎপরতা এবং নিরলস প্রচেষ্টা অপরিহার্য। জসিমের গ্রেপ্তারের পর মাসুদকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা গেলে এই চক্রের সমস্ত অপরাধ প্রকাশিত হবে। ভুক্তভোগী নূরুল আমিন ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।
ঘটনার বিবরণ: অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার জামালখান এলাকায় ঘটে যাওয়া অপহরণ এবং মুক্তিপণ আদায়ের এই ঘটনা শুরু হয় ৩ সেপ্টেম্বর। ব্যবসায়ী মো. নূরুল আমিন ও তার পার্টনার জাবেদ হোসেনকে মাসুদ নামে এক ব্যক্তি পাথরঘাটার জসিম টাওয়ারে ডেকে নিয়ে যান। মাসুদ তার প্রভাবশালী পরিচয় এবং ব্যবসায়িক প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ফাঁদে ফেলেন। জসিম টাওয়ারে পৌঁছানোর পরপরই মাসুদ ও তার সহযোগীরা নূরুল আমিন এবং জাবেদকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন। তাদের চোখ-মুখ বেঁধে একটি নির্জন কক্ষে আটকে মারধর করা হয়। এই সময় তাদের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হয়। ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ দাবির অভিযোগ নির্যাতনের সময় ভুক্তভোগীদের বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। এই ভিডিও ব্যবহার করে মাসুদ এবং তার সহযোগীরা ৭৫ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য নূরুল আমিনকে চাপ দিতে থাকেন। টাকা না দিলে তার পরিবারকে অপহরণ করার হুমকি এবং ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। জসিমের ভূমিকা ও মাসুদের পরিচয় এই ঘটনার মূলহোতা মাসুদ এবং তার বড় ভাই জসিম। অভিযোগ রয়েছে, মাসুদের বড়ভাই জসিম পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের ঘনিষ্ঠ পার্টনার। তাদের সহযোগিতায় এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অপহরণ এবং ব্ল্যাক মেইলিংয়ের মতো অপরাধ চালিয়ে আসছিল। জসিম বর্তমানে গ্রেপ্তার হলেও মাসুদ পলাতক রয়েছে। পুলিশের ধারণা, মাসুদকে গ্রেপ্তার করা গেলে এই চক্রের সকল অপরাধের বিস্তারিত প্রকাশ পাবে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও আইনি সহায়তা দাবি ব্যবসায়ী মো. নূরুল আমিন এই ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তার ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন। তখন কিন্তু পুলিশের তৎপরতা কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানিয়েছেন, এই ঘটনায় জসিমের গ্রেপ্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। মাসুদকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে নিশ্চয় কোতোয়ালি থানার পুলিশ, বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জের ব্যর্থতা: অপহরণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উপেক্ষিত, পুলিশ কমিশনারের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় এক ব্যবসায়ী অপহরণের ঘটনা ঘটে এবং অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে তৎপরতা নেয়নি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী ও তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) সৈয়দ ওমর। অপহৃত ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, থানায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করার পরও উল্লিখিত কর্মকর্তারা তার অভিযোগটি আমলে নেননি এবং তাকে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সময় নষ্ট করেছেন। তার মতে, যদি পুলিশ তৎপরতা নিয়েছিল, তাহলে অপহরণকারি চক্রসহ সকল অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব হত, এবং নগদ টাকা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা যেত। অপহৃত ব্যবসায়ী জানান, অভিযোগ দায়েরের পর তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলেও, তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেননি এবং অবিলম্বে ব্যবস্থা নেননি। এর ফলে অভিযুক্তরা আরও সময় পেয়ে যায় এবং পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ব্যবসায়ী আরো বলেন, যদি পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিত, তাহলে অপহরণকারীরা গ্রেফতার হয়ে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র ও টাকা উদ্ধার করা যেত, যা সমাজের জন্য এক বড় ক্ষতি থেকে বাঁচানো যেত। এ বিষয়ে তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ সাহেবের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যাতে এই অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
অপহরণের অভিযোগের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহেলা এবং ব্যর্থতা জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে। এভাবে অপহরণকারীদের প্রতি শিথিল মনোভাব ও পুলিশের অদক্ষতা স্থানীয় জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে, এমন ঘটনা পুনরায় ঘটতে পারে এবং সমাজে আরও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে পুলিশ কমিশনারের ত্বরিত হস্তক্ষেপ অপরিহার্য, যাতে অভিযুক্তরা শাস্তি পায় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হয়। চন্দনাইশের সাবেক চেয়ারম্যান সাবেক আইজিপি বেনজিরের পাটনার জসিম গ্রেপ্তার, বাড্ডা থানার হত্যা চেষ্টার মামলায় কারাগারে গত ৫ ডিসেম্বর ২০২৪: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় এক হত্যাচেষ্টা মামলায় চন্দনাইশ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আহমদ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছেন। এ মামলায় জসিমের নাম আসামি তালিকায় ২১ নম্বরে রয়েছে। বাড্ডা থানার তদন্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল পারভেজ বুধবার জসিম উদ্দিনকে আদালতে হাজির করে তার কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম শরীফুর রহমান আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মামলার তদন্ত চলমান এবং অভিযুক্ত জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এ কারণে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে জেলহাজতে রাখা একান্ত প্রয়োজন। এজাহার অনুযায়ী, গত ২০ জুলাই বাড্ডায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণের পর বাদী মো. দুর্জয় আহম্মেদকে আওয়ামী লীগের ‘শীর্ষস্থানীয় নেতাদের’ নির্দেশে তাদের অনুসারীরা এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে বাদীর দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায় এবং মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত পায়। পরে তাকে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে চলে যায় আসামিরা। এ ঘটনায় জসিম উদ্দিন আহমদের নাম উল্লেখ করে মামলার অভিযোগ দায়ের করা হয়। জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করলেও আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।