রাউজানে বিএনপি নেতা মুছা হত্যার মামলাটি গ্রহণ না করার অভিযোগ উঠেছে তৎকালীন রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পর দেশে ফিরে মা-বাবার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ, ফজলুল করিমের নির্দেশে একদল সন্ত্রাসী মুছাকে প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে অমানবিকভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দিবালোকে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরও ওসি জাহিদ, ফজলুল করিমকে খুশি করতে, এই ঘটনায় কোনো মামলা নেননি। বরং, হত্যাকারীদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ফজলুল করিমের প্রভাব ও ওসি জাহিদের ভূমিকা:স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ওসি জাহিদ রাউজান থানায় যোগদানের পর থেকেই ফজলুলে করিমের একজন অনুগত হিসেবে কাজ করছিলেন। তাকে ফজলুল করিমের কথামতো মিথ্যা মামলা দায়ের করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করতেও দেখা গেছে। ওসি জাহিদকে এলাকার মানুষ “ফজলুল করিমের ক্যাডার” হিসেবে উল্লেখ করে, কারণ পুলিশের পোশাক পরে থাকলে তিনি পুলিশ, আর পোশাক খুললেই ফজলুল করিমের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।
মুছা হত্যাকাণ্ডের পর, মুছার পরিবার অভিযোগ করেছে যে, হত্যাকারীদের আড়াল করতে এবং তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে মুছার পরিবারকে হয়রানি করা হয়েছে। এমনকি তাদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। টিটুর ক্রসফায়ারের চেষ্টা ও তার মেয়ের গর্ভপাতের অভিযোগ:এছাড়াও, রাউজানের সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর অনুসারী নোয়াপাড়া গ্রামের কামরুল হাসান টিটুকে চট্টগ্রাম কারাগারের গেইট থেকে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ারের চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে ওসি জাহিদের বিরুদ্ধে। টিটুকে ক্রসফায়ারে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়ে, টিটুর তিন মাসের গর্ভবতী মেয়ে উর্মির ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়, যার ফলে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। উর্মির সন্তান নষ্ট হওয়ার ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, এবং অনেকেই ওসি জাহিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
মামলা ও আদালতের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে।
মুছা হত্যার ঘটনায় রাউজান থানায় মামলা না নেওয়ায় মুছার পরিবার আদালতে মামলা দায়ের করে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ফজলুল করিমের প্রভাব ও চাপের মুখে ওসি জাহিদ সেই মামলাটি বাদির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এতে মুছার পরিবারের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ নষ্ট হয়। আদালতে দায়ের করা মামলার সঠিকভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ওসি জাহিদের প্রত্যাহার ও নতুন করে মামলা দায়েরের পরিকল্পনা:
ওসি জাহিদকে বর্তমানে রাউজান থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে, এলাকাবাসী এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ওসি জাহিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করার পরিকল্পনা করছে। টিটু ও তার মেয়ে উর্মিও ওসি জাহিদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নির্যাতিতদের আশঙ্কা ও দাবির প্রতিক্রিয়া:রাউজানের সাধারণ মানুষের মধ্যে ওসি জাহিদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। তারা মনে করছেন, মুছা হত্যা এবং টিটুর মেয়ের গর্ভের সন্তান নষ্টের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যদি ঠিকভাবে তদন্ত না হয়, তবে এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। তারা ওসি জাহিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।