1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:১৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
‎পুলিশের প্রতিবেদনে উঠে এলো রংপুরের হিন্দু পাড়ার হামলার ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শ্রীমঙ্গল থেকে ভুলে পঞ্চগড়ে, পরিবারকে ফিরে পেতে চায় ছোট্ট রিয়াদ নবীনগর পৌর শাখার ৫, ৬, ৭,নং ওয়ার্ডের কৃষক দলের উদ্যোগে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত খুলনায়  অবৈধ পলিথিন বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জুলাই যোদ্ধাদের সংবর্ধনা ভোটকেন্দ্রভিত্তিক সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসে জামায়াতের কৌশলী সম্মেলন: গলাচিপার উলানিয়ায় নেতাদের দৃঢ় অবস্থান টানা চতুর্থবারের মতো শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক ইনস্পেক্টর নির্বাচিত হলেন লোহাগাড়ার গর্ব মোঃ হাসানুজ্জামান হায়দার পঞ্চগড়ে জুলাই হত্যার বিচার ও জুলাই সনদ ঘোষণার দাবিতে শিবিরের জুলাই দ্রোহ  হাটহাজারীতে ‘জাগৃতি’র উদ্যোগে ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প,শাহ আনোয়ার (রহঃ) ফাউন্ডেশন চৌধুরীহাটে কিশোরীকে তুলে নিয়ে বিয়ে, সালিশে বাবাকে পিটিয়ে হত্যা: গ্রেফতার ২

জাতীয় ঐক্য ও ইতিহাসের সত্য: বিভক্তি থেকে একতার পথে

ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন
  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস আমাদের জাতীয় গর্বের অংশ। তবে দুঃখজনকভাবে, এ ইতিহাস নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক, বিভাজন এবং ব্যক্তিগত আক্রমণের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। দেশের স্বাধীনতার জন্য যাঁদের অবদান আছে, তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে প্রতিনিয়ত একে অপরকে খাটো করার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—আমরা কি পারি না ইতিহাসের সত্যগুলো স্বীকার করে একে অপরকে সম্মান জানাতে? একজন নেতাকে অবজ্ঞা করলে তার অনুসারীরাও প্রতিক্রিয়াস্বরূপ আপনার পছন্দের নেতার প্রতি একই আচরণ করবে। এতে শুধু বিভক্তিই বাড়ে, জাতীয় ঐক্যের কোনো সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় না। অথচ আমরা সবাই বলে থাকি, কারও অবদান অস্বীকার করা উচিত নয়। তাহলে কেন মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ঘোষণা, যুদ্ধকালীন নেতৃত্ব এবং পরবর্তী সময়ের ইতিহাস নিয়ে এতো বিতর্ক?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে—এ কথা যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে তৎকালীন কর্নেল (পরবর্তীতে জেনারেল) এম. এ.জি. ওসমানীর ভূমিকা, সেক্টর কমান্ডারদের বীরত্ব, মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার ভূমিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ—এসবও সমানভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি রাখে। একইভাবে বিএনপি যদি মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান খাটো করে দেখে, তাহলে সেটিও ইতিহাস বিকৃতির শামিল।
আমরা কি পারি না ইতিহাসকে তার যথাযথ মর্যাদায় রাখতে? স্বাধীনতার ইতিহাসকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে তুলে ধরে সত্যের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে?
ইতিহাসকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোর পরিণাম-
আজকের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্ত। ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে, কারণ তারা দেখছে বড়দের মধ্যে অবিরাম বিতর্ক চলছে। একপক্ষ অন্য পক্ষকে ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ বলে, আরেক পক্ষ ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, টকশোতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিতর্ক নতুন প্রজন্মের মনে একধরনের অস্বস্তি তৈরি করছে। আমরা কি চাই যে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিভ্রান্ত হয়ে ইতিহাস ভুলে যাক? তাদের কাছে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা জরুরি। এক্ষেত্রে সরকারগুলোর ব্যর্থতা স্পষ্ট। বিগত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতাসীন সরকার জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি তৈরি করতে পারেনি। ইতিহাসকে নিরপেক্ষভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি। বরং রাজনৈতিক স্বার্থে ইতিহাসকে ব্যবহার করেছে, যা বিভক্তিকে আরও গভীর করেছে। জাতীয় ঐক্য: কেন জরুরি? বাংলাদেশের রাজনীতিতে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার, প্রতিশোধপরায়ণতা এবং হিংসাত্মক আচরণ লক্ষ করা যায়। অথচ অতীতে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের বিপরীত মতাদর্শের সঙ্গেও জোট গড়েছে, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছে। তাহলে দেশের স্বার্থে কেন ঐক্যমত হতে পারে না? স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এখনো যদি ইতিহাস নিয়ে আমরা বিভক্ত থাকি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কী বার্তা যাবে?
জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি গড়তে হলে—
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে রেখে সত্য স্বীকার করতে হবে।
ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করতে হবে।
একপক্ষ অন্য পক্ষের অবদান খাটো না করে বরং সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতে শিখতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কার: সময়ের দাবি-জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতির সংস্কার জরুরি। এ জন্য কিছু মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন—
১. অর্থ ও পেশীশক্তির দাপট বন্ধ করা- রাজনীতিতে টাকা ও শক্তির দাপট বন্ধ না করলে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে না। ভোট কেনাবেচা, গুণ্ডামি ও পেশীশক্তির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
২. নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু করা-
সব প্রার্থীর জন্য সমান প্রচারের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে বড় দলের একচেটিয়া আধিপত্য ঠেকাতে নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
৩. নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করা-একজন ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে। একইভাবে, কেউ যেন দুই বা তিনবারের বেশি এমপি না হতে পারেন। এতে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসার সুযোগ পাবে।
৪. দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নিশ্চিত করা-
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব যেন উত্তরাধিকারসূত্রে না আসে, সেজন্য দলীয় প্রধানদের নির্বাচনব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। দলে ভিন্নমতের মানুষ যেন দমিত না হয়। ৫. অতীতের অন্যায়ের বিচার করা- সব হত্যা, নির্যাতন, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের নিরপেক্ষ বিচার করতে হবে। এতে জনগণের আস্থা ফিরবে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।
৬. রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা বন্ধ করা-
প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় এসে আগের সরকারের লোকজনের ওপর দমননীতি প্রয়োগ করে। এ প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
দেশের স্বার্থ আগে, দলের স্বার্থ পরে-আমরা কি পারি না একবার শুধু দেশের কথা ভাবতে? মতাদর্শগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও দেশকে এগিয়ে নিতে একযোগে কাজ করতে? বিভাজন, সংঘাত ও প্রতিশোধের রাজনীতি বন্ধ করতে?
আমাদের সন্তানরা যে দেশটিকে সামনে এগিয়ে নেবে, সেটি যেন আর সংঘাতের দেশ না হয়। তারা যেন দেখে, তাদের আগের প্রজন্ম সত্যের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই দেশ আমাদের সবার। দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে যদি আমরা সত্যকে মেনে নিতে শিখি, একে অপরকে সম্মান করি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারব। এখনই সময়, দেশকে রক্ষা করার, দলীয় বিভক্তির ঊর্ধ্বে ওঠার, ইতিহাসের সত্যকে স্বীকার করার। দল নয়, দেশ—এই মানসিকতা গ্রহণ করলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
পরিশেষে-আমি এই কথাগুলো বলেছি নিজের বিবেক ও অভিজ্ঞতার আলোকে, কোনো দলীয় অবস্থান থেকে নয়। যদি কেউ ভিন্নমত পোষণ করেন, তাহলে যুক্তিসঙ্গতভাবে আলোচনা করতে প্রস্তুত আছি।
কিন্তু একটি বিষয় পরিষ্কার—বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে বিভাজন নয়, ঐক্যের পথেই হাঁটতে হবে। আমরা কি সে পথে হাঁটতে প্রস্তুত?
লেখকঃ চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট