রাউজানে সম্প্রতি চাঁদাবাজি, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ৩১ জানুয়ারি (বুধবার) রাউজানের একটি স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সচেতন মহল এসব অপরাধের তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রশাসনের প্রতি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, “গত ১৭ বছর ধরে রাউজানের সাধারণ মানুষ স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারেনি। বাকস্বাধীনতা বলতে কিছু ছিল না। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে পুরো রাউজানবাসী জিম্মি ছিল।” তারা আরও বলেন, “৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, যারা দীর্ঘ সময় রাউজানে অনুপস্থিত ছিল, তারাই এখন পরাজিত আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে পুনরায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও লুটপাটের মাধ্যমে এলাকায় অরাজকতা সৃষ্টি করছে।”
বক্তারা প্রশাসনের নিরব ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “৫ আগস্ট রাউজান থানায় হামলা চালিয়ে যারা অস্ত্র লুট করেছিল, তাদের চিহ্নিত করা সত্ত্বেও এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। বরং তারা প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা রাউজানের শান্তিপ্রিয় জনগণের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক।”
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, “রাউজানের ৪৮টি ইটভাটা থেকে প্রতিটিতে ২ লাখ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়েছে, যার পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া, রাঙ্গামাটি থেকে চট্টগ্রামগামী কাঠ বোঝাই প্রতিটি ট্রাক থেকে বন বিভাগের মাধ্যমে ৩০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।” এছাড়া, গহিরা, রাউজান মুন্সিরঘাটা ও নোয়াপাড়া এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, “পশ্চিম গুজরায় ১৫% চাঁদা পরিশোধ না করায় একটি ব্রিজের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সিআইপি ইয়াছিনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া, সিআইপি ফোরকানের ওপরও হামলা করা হয়েছে।” গত ২৪ জানুয়ারি চাঁদার দাবিতে রাউজানের নোয়াপাড়ায় আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর
আলম নামে এক পাইকারি সুটকি ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহত জাহাঙ্গীর আলম বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
বক্তারা বলেন, “এ হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা চলছে। প্রকৃত খুনিদের আড়াল করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম জড়ানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে প্রকৃত হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হোক।” সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করেন, “৫ আগস্টের পর থেকে রাউজানে যারা সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত, তারা এখন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। তারা বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, সাবেক সাংসদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।” তারা আরও বলেন, “গোলাম আকবর খোন্দকার আজীবন চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালানো একটি গভীর ষড়যন্ত্র। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”
বক্তারা বলেন, “রাউজানের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে বিএনপির হাইকমান্ড কঠোর অবস্থানে আছে। আমরা রাউজানের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।”
সংবাদ সম্মেলনে রাউজানের শান্তিপ্রিয় জনগণকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা, নির্যাতন ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় এবং প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।