সাধারণ জনগনের হাঁটার জন্য দাগনভূঞার উপশহরের মোটামুটি সব সড়কের পাশেই আছে ফুটপাত। তবে কোনো সরকারের আমলেই হেঁটে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি দাগনভূঞা বাসী। হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ফুটপাতের ‘চাবি’ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে। সেখানকার অবৈধ দোকানের ভাড়ার টাকা গুনতেন সরকারদলীয় নেতারা। এমনকি টাকার ভাগ যেত পুলিশের পকেটেও। শক্তি হারিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা যে যার মতো পালালেও ফুটপাতজুড়ে এখনও আছে সারি সারি দোকান, আছে নানা স্থাপনা। তবে এখনকার দখলবাজ কারা? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে প্রতিবেদক অনুসন্ধান বলছে, দাগনভূঞার ফুটপাতে দখল, চাঁদাবাজি, উৎপাত– সবই আছে আগের মতো। শুধু বদলেছে কুশীলব। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেই মিলেছে বেশির ভাগ দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ। তবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে দখল-চাঁদাবাজির বিষয়ে নেওয়া হয়েছে শূন্য সহনশীল নীতি। এসব অপকর্মে জড়িত থাকলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকজন স্থানীয় নেতাকে বহিষ্কারও করেছে দলটি। তবু অনেক এলাকায় ফুটপাত দখল-চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মী। দাগনভূঞার প্রায় সব সড়কের ফুটপাতের দখল ও নিয়ন্ত্রণ হাতবদল হয়েছে। নতুনভাবে ভাগাভাগিতে ব্যস্ত নতুন দখলদাররা। তবে দলটির শীর্ষ নেতাদের হুঁশিয়ারিতে কিছু কিছু এলাকা এখনও চাঁদামুক্ত আছে বলে মনে করেন ফুটপাত দোকানিরা। দাগনভূঞার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো ফুটপাত ও সড়ক দখল হয়ে যাওয়ায় অনেক সড়কেই মানুষের চলার পথ সংকুচিত হয়ে বেড়েছে যানজট। কোথাও অবৈধ স্থাপনা, আবার কোথাও বিভিন্ন মালপত্র রাখার কারণে অনর্থক কষ্টে পড়ছেন পথচারী। ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কে নেমে হাঁটতে হচ্ছে উপজেলা বাসীকে । তবে ফুটপাত দখলমুক্ত করার ব্যাপারে দাগনভূঞা পৌরসভার পৌরপ্রশাসকের যেমন দৃষ্টিপাত নেই, তেমনি চাঁদাবাজি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও নেই হেলদোল। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাগনভূঞা সড়কের ফুটপাতগুলো জেলা ছাত্র দলের সহসভাপতি কাজী জামসেদুল আলম ফটিকের গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। সিএনজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্ট্যান্ডও তার দখলে। নাম না বলার শর্তে এক বযবসায়ী বলেন বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে দুইশ করে দোকানের চাদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে দোকান তুলে ফেলার হুমকি দেয়। এক পোশাক বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু করে নতুন দোকান বসানো হচ্ছে। কারও কারও দোকান দখলেরও চেষ্টা চলছে। এই সব দখল ও চাঁদা বাজির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরে আসে। ভিডিওতে দেখা যায় গত ১৪অক্টোবর ২০২৪ তারিখে দাগনভূঞা সহকারি কমিশনার ভূমি শাহিদুল আলম দুপুর বেলা বাজারে অবৈধ দোকান ও ফুটপাত দখল মুক্তের উচ্ছেদ অভিযান করতে গেলে নির্বাহী মেজিষ্টেস এক ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করে দোকান কে বসিয়েছে ও এই দোকানের থেকে কে টাকা নেয়। তখন ঐ ব্যবসায়ী কাজী জামশেদুল আলম ফটিকের নাম বলে। এই ভিডিওটি প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষণ আছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দাগনভূঞায় ফুটপাতের দৈর্ঘ্য আদা কিলোমিটার।
সেখানে অন্তত দুই শত হকার ব্যবসা করেন। চাঁদা বাজরা তাদের কাছ থেকে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে সংগ্রহ করে। তাদের কাছে থেকে প্রতিমাসে চাঁদা তোলে ১২ লক্ষ টাকা । আর সিএনজি থেকে প্রতি মাসে আদায় করা হয় আরও ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা। সিএনজি মালিকদের থেকে প্রতি মাসে আদায় করা হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।ফুটপাতকেন্দ্রিক চাঁদাবাজির টাকা যায় পুলিশ, রাজনৈতিক ব্যক্তি আর লাইনম্যানের পকেটে। দাগনভূঞা তোয়া বাজারের ইজারাদার ফয়েজ আহম্মেদ বলেন একটি পক্ষ ফুটপাত থেকে টাকা তোলার কারনে ফুটপাতের দোকানদারেরা আমার ইজারার টাকা দিতে চায় না। এতে করে আমার লোকসানের সম্ভাবনা রয়েছে।
ফুটপাতের চাঁদা বাজির বিষয়ে ছাত্র দল নেতা কাজী জামসেদুল আলম ফটিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাদাবাজির বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ঈর্ষাণিত হয়ে একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন বলেন, বিএনপি জনগণের রাজনীতি করে। এখানে দুর্বৃত্তের কোনো স্থান নেই। দলের নাম ভাঙিয়ে যারাই অপকর্মের চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে এর মধ্যে বেশির ভাগই ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের দোসর। যারা বিএনপির রূপ ধারণ করে কৌশলে ষড়যন্ত্র করছে।
দাগনভূঞা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, চাঁদাবাজদের কোনো দল নেই। চাঁদাবাজির ব্যাপারে আমরা সব সময় সজাগ। বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। যারাই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করুক আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দাগনভূঞা পৌরসভার প্রশাসক স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, ফুটপাত ব্যবসায়ীদের পেছনে অনেক বড় শক্তি থাকে। তবে সরকার বদলের পর এটা অনেকটাই কমে গেছে। এখন ফুটপাত দখলমুক্তের চেষ্টা করছি। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়। তবে এখন পুলিশ সেভাবে পাওয়া না যাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যকর কম হচ্ছে। সামনের দিকে এই কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।