1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ১০:৪০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশন এর এডহক কমিটির আত্মপ্রকাশ আইজিপি ব্যাজপ্রাপ্ত ওসি সোলাইমান: জনবান্ধব পুলিশিংয়ের অনন্য প্রতিচ্ছবি! বিশ্ব সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা দিবস ও সংবাদ পত্র নিয়ে কিছু কথা! বাকলিয়া থানার আলোচিত ডাবল মার্ডারের প্রধান আসামি হাসান গ্রেফতার চট্টগ্রামে এনসিপির বিক্ষোভে উত্তাল জনসভার দাবি: আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন! আইজিপি ব্যাজে ভূষিত পাহাড়তলী থানার ওসি বাবুল আজাদ: নিষ্ঠা, নেতৃত্ব ও মানবিক পুলিশের উজ্জ্বল প্রতীক! চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিনকে আইজিপি ব্যাজ: নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব ও জনগণের আস্থার প্রতীক! কোতোয়ালি থানায় সাজাপ্রাপ্ত দুই পলাতক আসামী গ্রেফতার শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর তিনদিনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ইজতেমা বালুকাবেলার আত্মঘোষণা: যেখানে সাংবাদিকতা হয়ে ওঠে প্রতিবাদের কবিতা

নিঃসঙ্গ ছায়াঃ এক নতুন অধ্যায়: জোবায়েদা ও রূপসী

মো. কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১১২ বার পড়া হয়েছে

মনের কথা বলার জন্য কখনো কখনো একটি চরিত্র সৃষ্টি করা প্রয়োজন হয়, যা আমাদের হৃদয়ের গভীরতা, বেদনা এবং অজানা কাহিনির প্রতিনিধিত্ব করে। জোবায়েদা ছিল তেমনই একজন, যিনি একদিকে ছিলেন প্রেমের প্রতীক, অন্যদিকে জীবনের বাস্তবতার নিষ্ঠুরতার শিকার। তার গল্পের মাঝে লুকিয়ে ছিল একটি অনন্য ব্যাখ্যা, যা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
জোবায়েদা, একটি সুন্দর এবং প্রতিভাবান নারী। সে ছিল সমাজের চোখে একজন আদর্শ স্ত্রী, কিন্তু তার হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে ছিল এক শূন্যতা। স্বামী তাকে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে সে ছিল নিঃসঙ্গ। রাতের আঁধারে, যখন অন্য পুরুষদের সাথে তার স্বামী কাটাতো সময়, তখন জোবায়েদা একাকী রাত কাটাতো। সে জানত, তার স্বামী একজন খলনায়ক, কিন্তু নিজের মর্যাদা ও ইজ্জত রক্ষার জন্য তার মুখ খুলতে পারছিল না। একদিন, জোবায়েদার জীবনে নতুন একটি চরিত্রের আগমন ঘটে—রূপসী। রূপসী ছিল একটি রহস্যময়ী নারী, যার সৌন্দর্য ছিল অপূর্ব এবং আকর্ষণীয়। কিন্তু সে কেবল একটি রূপের প্রতীক ছিল না; তার জীবনেও ছিল কিছু অজানা কাহিনি। সমাজের কাছে এক দিকে তার আকর্ষণ, অন্যদিকে তাকে ভোগের খেলায় নিযুক্ত করার প্রবণতা ছিল। রূপসী জেনেছিল, জীবনে তার নিজস্ব দুঃখ ও অভিজ্ঞতা আছে, যা সে কখনো কাউকে জানানোর সাহস করেনি।
জোবায়েদা এবং রূপসীর মধ্যে একটি অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তারা একে অপরের বেদনা, আশা ও স্বপ্ন ভাগ করে নেয়। এক রাতে, তারা দুজনে পাশাপাশি বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। জোবায়েদা প্রথমবারের মতো রূপসীকে বলে, “তুমি
জানো, আমি কখনো সত্যিকারের ভালোবাসা অনুভব করতে পারিনি। স্বামী আমার প্রতি ভালোবাসার অভিনয় করে, কিন্তু আমি জানি, সে অন্য পুরুষদের সাথে রাতে সময় কাটায়। আমার হৃদয় ভেঙে যায়, কিন্তু আমি কিছু করতে পারি না।”
রূপসী তার দিকে তাকিয়ে বলে, “জোবায়েদা, জীবন এমনই। আমরা অনেক সময় নিজেদের ইচ্ছাকে চাপা দিয়ে রাখি, কিন্তু আমাদের অনুভূতি কখনো মিথ্যা হয় না। আমি নিজেও এমন এক প্রেমে পড়েছিলাম, যেখানে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। আমি জানি, আমাদের সুন্দরী শরীরের অধিকারী হতে পারে অনেক পুরুষ, কিন্তু আমাদের আত্মা ও হৃদয়ের স্বাদ অনুভব করার সুযোগ খুব কম।”
জোবায়েদার চোখে অশ্রু দেখা যায়। সে বুঝতে পারে, রূপসীর জীবনের কাহিনি হয়তো তার চেয়েও বেশি জটিল। রূপসী নিজের জীবনের অসাধারণ গল্প তুলে ধরে—কিভাবে সে এক অজানা পুরুষের প্রেমে পড়েছিল, এবং কিভাবে তার প্রেমিকের প্রতারণার কারণে সে সবকিছু হারিয়েছে। তবে, রূপসী তার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুনভাবে বাঁচার চেষ্টা করছে।
“আমরা যেন একটি বৃত্তে আটকে আছি,” জোবায়েদা বলে, “কিন্তু আমরা কি কখনো এর বাইরে বের হতে পারব?”
“হয়তো,” রূপসী উত্তর দেয়। “যদি আমরা নিজেদের প্রকৃত রূপটি খুঁজে পাই এবং সাহস করে জীবনকে নতুন করে সাজাই।”
সেই রাতের আলোচনার পর, জোবায়েদা ও রূপসী তাদের জীবনের গল্প লেখার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা, প্রেম, প্রতারণা এবং আত্ম-অনুসন্ধানের নানা গল্প মিলে একটি উপন্যাস লেখার পরিকল্পনা করে। তারা জানে, এটি শুধু তাদের গল্প নয়, বরং সমাজের প্রতিটি নারীরও গল্প, যারা নিজেদের সৌন্দর্যকে কেবল বাহ্যিক আকর্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন।
জীবনের এই যাত্রা শুরু হয় তাদের জন্য, যেখানে তারা একে অপরের প্রতি সমর্থন ও সাহস যোগায়। দুই নারীর বন্ধুত্ব কেবল একটি সম্পর্ক নয়, বরং একটি আন্দোলন, যা নারীর আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে। বৃএভাবেই, জোবায়েদা ও রূপসীর গল্পটি রূপ নেয় এক নতুন দৃষ্টান্তে। তাদের মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন আসে, যা তাদের জীবনের পথকে নতুনভাবে চিত্রিত করে।
হাজারো জোবায়েদা ও রূপসীর গল্প সমাজের প্রতিটি কোণে দাঁড়িয়ে আছে হাজারো নারী, যারা নিজেদের গল্প লিখতে পারেননি। তারা হলো সেই জোবায়েদা ও রূপসী, যারা একাধিক কারণে দিশাহারা, সংসার হারানো, পরিবার হারানো, স্বামী হারানো, সন্তান হারানো। তাদের জীবনের গল্পগুলো কখনো জানা যায় না, কারণ সমাজের নীরবতা তাদের কণ্ঠরোধ করে রেখেছে। জোবায়েদা, যে জীবনের সকল আনন্দ ও আশা নিয়ে গড়ে তুলেছিল একটি পরিবার, আজ সে নিঃস্ব। তার স্বামী, যার কাছে সে ভালোবাসা ও সমর্থন আশা করেছিল, অন্যের কাছে হারিয়ে গেছে। প্রত্যেক রাত জোবায়েদা বিছানায় শুয়ে থাকে, কিন্তু তার পাশে একা। তার কানে ভেসে আসে সেই পুরনো কথা, “তুমি সুন্দর, তুমি আমার।” কিন্তু আজ সেই কথাগুলো কেবল কাঁদে। স্বামী তার জন্য তার দৃষ্টিতে কিছুই আর নেই।
রূপসী, অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী। তার শরীরের আকর্ষণ অনেক পুরুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু সে জানে, সেই সব পুরুষ তার জন্য কিছুই নয়। তার হৃদয়ের গভীরে একটি শূন্যতা রয়েছে, যা কোনো পুরুষ পূরণ করতে পারে না। একসময় সে প্রেমের আবেশে হারিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আজ সে জানে, প্রেম শুধু এক মায়া, যা তাকে কেবল ভোগ করেছে। রূপসী এখন অচিন্তনীয় দিক থেকে শক্তিশালী হয়েছে, কিন্তু তার অতীতের ছায়া তাকে এখনও তাড়া করে। তবে শুধু জোবায়েদা ও রূপসী নয়, সমাজের আনাচে-কানাচে রয়েছে আরো অনেক নারী। তারা নিজেদের গল্প বলার সাহস পাননি। তারা নানা কারণে সংসার হারিয়েছে—কেউ বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে, কেউ স্বামী বা সন্তানের অকাল মৃত্যুর কারণে। তাদের চোখে আশা ছিল, কিন্তু বর্তমানে তা হারিয়ে গেছে। তারা গোপনে নিজেদের মনে প্রশ্ন করেন, “আমার কি হলো? আমি কি অপরাধী?” একটি নারীর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা কেবল তার নিজের জীবন নয়, বরং পুরো সমাজের উপর একটি ছাপ ফেলে। একজন নারী যখন তার সুখ হারায়, তখন তা তার পরিবার, সমাজ এবং সন্তানদের উপর প্রভাব ফেলে। তারা সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ চান, কিন্তু বাস্তবতা কখনো তাদের সহায়তা করে না।
এই সকল জোবায়েদা ও রূপসীর কাহিনি সমাজের বাস্তবতার একটি প্রতিচ্ছবি। তাদের চাহনি, তাদের কান্না, তাদের কষ্ট—সব কিছুই এই সমাজের অস্বস্তির একটি অংশ। তারা যা খুঁজছে তা হলো একটি শুদ্ধ সম্পর্ক, একটি নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু তাদেরকে নিজেদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে হয়। মআমি তাদের কাহিনিগুলো লিখবো, তাদের অজানা কাহিনিগুলো তুলে ধরবো। তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া অসংগতির কথা বলবো। এই গল্পগুলো শুধুমাত্র তাদের নয়, বরং সমাজের প্রতিটি নারী ও পুরুষের জন্য একটি শিক্ষা। আমি জানি, তাদের জীবন কেবল কষ্ট নয়, সেখানে রয়েছে প্রেম, সাহস ও নতুনভাবে শুরু করার আকাঙ্ক্ষা।
এভাবেই, আমি জোবায়েদা ও রূপসীর অজানা কাহিনিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবো, যেন সমাজ তাদের কথা শোনে, তাদের কষ্ট বোঝে, এবং তাদের জন্য একটি নতুন সূর্যের আলো ফেলে।
জোবায়েদার সংগ্রাম
জোবায়েদা, দুই সন্তানের মা হলেও, আজ একমাত্র বড় ছেলের প্রতি আবদ্ধ। ছোট সন্তান, যার নাম রোহান, তাকে নিপীড়ক স্বামী কৌশলে নিয়ে গেছে। মা হওয়ার পর থেকে জোবায়েদার জীবন ছিল শুধু যুদ্ধ—একটি যুদ্ধ, যা তার স্বামী আর রোহানের জন্য। জোবায়েদা ছোট্ট রোহানকে ফিরে পাওয়ার জন্য আইনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে, কিন্তু প্রতিবারই ফিরেছে নিঃস্ব হাতে।
মামলার জটিলতায় আটকে গিয়েছিল সব কিছু। নিষ্ঠুর স্বামী, যার কাছে নেই কোনো মানবতা, রোহানকে তার কাছে আটকে রেখেছিল। জোবায়েদার আকুতি ছিল অন্তত একবার রোহানকে দেখার। কিন্তু সে সুযোগও তাকে জুটেনি। যখন স্বামী তার কাছ থেকে সন্তানকে কেড়ে নিয়েছিল, তখন জোবায়েদা জীবনের অন্ধকারে হারিয়ে যায়। জীবনের কঠিন এই যুদ্ধে জোবায়েদা নিজের স্বপ্ন, আশা, সবকিছু হারিয়ে ফেলেছিল। স্বামীর সাথে তালাক হলেও, মামলার নিষ্পত্তি করতে অনেক মাস লেগেছিল। সেই সময়, তার বাবা যখন এই পৃথিবী থেকে চিরতরে চলে যান, তখন জোবায়েদার মনে এক বিপর্যয় নেমে আসে। বাবার শূন্যতা তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়, যেন সে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে একা। জীবনের এই কঠিন অধ্যায়ে জোবায়েদার একমাত্র সঙ্গী ছিল তার বড় সন্তান, আর এই সন্তান ছিল তার জীবনের বেঁচে থাকার একটি কারণ। জোবায়েদা জানতো, তার সন্তানদের জন্য বাঁচতে হবে।
আকিন্তু জীবন সহজ নয়। জোবায়েদার স্বামী একজন পেশাদার মামলাবাজ, পুলিশের দালালি করে চলে। তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে তাকে একটি শক্তিশালী প্রমাণ নিয়ে আসতে হবে, কিন্তু সব সময়ই সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াতো স্বামীর লব্ধি। এই লড়াইয়ের মাঝে জোবায়েদা যতটুকু শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, ততটুকুই সে হারিয়ে ফেলেছিল।
এখন, জোবায়েদা নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। সে প্রতিজ্ঞা করে, নিজের সন্তানকে ফিরে পেতে সে আরেকবার যুদ্ধ করবে। সে চায়, রোহানকে ফিরে পেতে আরেকটি সুযোগ, আরেকটি সুযোগ জীবনকে নতুন করে শুরু করার। বিপর্যয় ও অন্ধকারের মাঝে জোবায়েদার অন্তরে আশা জেগে ওঠে। সে জানে, তার জীবনের এ অধ্যায় শেষ হতে পারে, তবে নতুন সূর্যের আলো সবসময়ই আসবে। একদিন, সে মনে করে, “আমি হারবো না। আমি রোহানকে ফেরত পাব।” জোবায়েদা তার ভবিষ্যতের দিকে তাকায়, যেখানে নতুন জীবন অপেক্ষা করছে, যেখানে সে আবারো বাঁচার, হাসার, ভালোবাসার অধিকারী হবে।
জোবায়েদার কষ্ট 
জোবায়েদার জীবন একটি অন্ধকার প্রেক্ষাপটের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রতিটি গোধূলির রঙ তার মনকে তাড়িত করে, কারণ সে জানে, জীবন তাকে যত কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছে, তত বেশি সে নিজেকে একাকী অনুভব করে। স্বামী, যিনি প্রথমে ছিল তার স্বপ্নের রাজপুত্র, পরে হয়ে উঠেছে তার জীবনের এক নিষ্ঠুর অবরোধ। জীবনে জোবায়েদা বিশ্বাস হারিয়েছে। পুরুষের প্রতি তার অবিশ্বাসের মূল কারণ, তার জীবনযাপনের গল্প। তিনি যখন ছোট ছিলেন, তখন তার বাবা-মা তাকে অটুট ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছিলেন। কিন্তু যখনই তিনি সংসার জীবন শুরু করেন, তখনই সেই ভালোবাসার জন্যে তাকে প্রতারিত হতে হলো। স্বামীর অন্য নারীর প্রতি আকর্ষণ, তার মনকে এক লহমায় ভেঙে দেয়। প্রতারিত হয়ে, জোবায়েদা বুঝতে পারে, যে প্রেমের নামে সে ভালোবাসা খুঁজেছিল, তা ছিল নিছক অভিনয়। জীবন যখন তার সমস্ত আনন্দ কেড়ে নেয়, তখন জোবায়েদার মনে গুমোট অনুভূতি সৃষ্টি হয়। প্রতিটি স্বপ্ন, প্রতিটি আশা—সবকিছু একদিনে শেষ হয়ে যায়। তিনি ভাবেন, “এখন আমি কেমন করে ফিরে পাব আমার জীবনের রং?” তার সুখের দিনগুলো কেমন যেন একটি অদ্ভুত স্মৃতির মতো মনে হয়, যেখানে সবকিছু ছিল অবাস্তব।
এখন, প্রশ্ন জাগে, জোবায়েদা বা রূপসীর মতো নারীরা আর কতবার প্রতারিত হবে? সমাজের চেহারাটা কেমন? তারা যে সৃষ্টির দানে এই পৃথিবীতে এসেছে, তারা কি আজও নিজেদের অধিকার খুঁজে পাবে? জোবায়েদা জানে, অনেক নারীর জীবন তার মতো। তারা একই পীড়নে আছে, একই ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন। তবে জোবায়েদা একজন সাহসী নারী। সে জানে, প্রতিটি রাতের পর একটি নতুন দিন আসে। জীবন থেকে বের হয়ে আসার উপায়? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো জোবায়েদার কাছে নেই, কিন্তু সে মনে করে, ভালোবাসা, সম্মান, এবং মর্যাদা পাওয়ার অধিকার তার আছে। সে চায়, একদিন সে তার জীবনের দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে, এবং আবারো তার পরিচয়ে ফিরে আসবে।
“আমি কি ন্যায় বিচার পাবো?”

—এই প্রশ্নটি জোবায়েদার মনে ঘুরপাক খায়। জীবন যত কঠিনই হোক না কেন, ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় সে ক্ষুদ্র হলেও চেষ্টা করতে থাকে। প্রতিবারের মতো, সে কষ্টগুলোকে মন থেকে জমিয়ে রাখে, আর প্রতিবারই নতুন শক্তি নিয়ে সামনে এগিয়ে চলে।
জীবনের এই অনিশ্চয়তার মাঝে, জোবায়েদা প্রতিদিন নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলতে চায়। সে জানে, তার অভিজ্ঞতা অন্য নারীদের জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে। সে বলতে চায়, “আমি একজন নিরীহ অসহায় নারী, কিন্তু আমি পারবো। আমি আমার কষ্টকে শক্তিতে পরিণত করবো।” জীবন যুদ্ধের এই প্রতিজ্ঞার সঙ্গে, জোবায়েদা জানে—একদিন সে নিজেকে, তার সন্তানকে, এবং তার ন্যায় বিচারের জন্য অপেক্ষা করবে। জোবায়েদার কষ্ট
জীবনের কঠিন সময়গুলোতে, জোবায়েদা জানতেন যে তার ছোটবেলার স্মৃতিগুলো তাকে সাহস যোগাতে পারে। মা-বাবার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা, তাদের দেওয়া আদর্শ—এগুলোই তার অস্তিত্বের ভিত্তি ছিল। তিনি ছিলেন সেই রকম এক মেয়ে, যিনি ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন—একটি সুখী সংসার, একজন প্রেমময় স্বামী এবং দুটি সুস্থ সন্তান। কিন্তু বাস্তবতা তাকে এক অন্য গল্পের দিকে ঠেলে দেয়। শিক্ষা জীবন শেষে, জোবায়েদা যখন সংসার পাতার সিদ্ধান্ত নেন, তখন প্রথমে সবকিছুই ছিল রঙিন। তার স্বামী, যারা তখনকার দিনে রাজপুত্রের মতো মনে হয়েছিল, তাকে ভালোবাসার নামে প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে। জোবায়েদা বিশ্বাস করেছিলেন, তাদের সম্পর্ক অনন্তকাল স্থায়ী হবে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই বিশ্বাস ধীরে ধীরে ভেঙে যায়। স্বামীটি যে একজন পেশাগত মামলাবাজ, এ সম্পর্কে তিনি তখনও অবগত ছিলেন না শ্বশুরবাড়ির জটিলতা, স্বামীর অবিশ্বাস্য আচরণ—সবকিছু তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। বিশেষ করে যখন তার ছোট সন্তানকে কৌশলে নিয়ে যায়, সেই সময় জোবায়েদার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। বড় সন্তানকে নিয়ে তিনি সংগ্রাম করেন, কিন্তু কিছুতেই ছোট সন্তানটির খবর জানতে পারেন না। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার জন্য তিনি আইনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেন, কিন্তু প্রতিবারই হতাশা তার সঙ্গে ফিরে আসে।
জীবনের সেই রূঢ় বাস্তবতার সাথে মোকাবেলা করতে করতে, তিনি একসময় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। যখন তার বাবা মারা যান, তখন তার জীবন আরও বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে। বাবা ছিল তার মাথার ছায়া। তার মৃত্যু তাকে একা করে দেয়। সেই মুহূর্তে জোবায়েদা অনুভব করেন, তার আশ্রয়স্থল নেই। শুধু সন্তানকে ফিরিয়ে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তার মাঝে জ্বলে উঠেছিল।
তিনি আদালতে দীর্ঘ সময় ধরে বিচারের জন্য অপেক্ষা করেন, কিন্তু প্রত্যেকবার নিষ্ঠুর স্বামী তার সন্তানকে ফিরিয়ে দেয়ার কোনো চিন্তাই করেনি। জোবায়েদা, যিনি একদিকে নিজেকে আরেকবার শক্তিশালী করার চেষ্টা করছিলেন, অপরদিকে প্রতিদিন কষ্টের সাগরে ডুবছিলেন। জীবনযুদ্ধে হারানোর এক পরিণতি, তার স্বামী একজন পুলিশ দালালের মতো আচরণ করে। কোনোভাবেই এড়িয়ে চলতে পারেন না, কারণ শ্বশুরবাড়ির অনেকেই তার প্রতি বিরূপ। প্রতিটি টানাপোড়েনে, সমাজের অশুভ প্রভাব যেন আরও জটিল হয়ে উঠছে। জোবায়েদা এক সময় বুঝতে পারেন, সমাজের এই চেহারায় ভালোবাসা নেই, আছে শুধু শোষণ। একদিন, তার প্রিয়তম সন্তানের জন্য সে সমস্ত কষ্টকে ভুলে গিয়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তিনি ভাবেন, “আমি কি সত্যিই আরেকটি জীবন শুরু করতে পারি?” তার মনে একটি প্রশ্ন ধীরে ধীরে জাগতে থাকে। “জীবনে কিভাবে প্রাপ্তি আসবে?”—এই প্রশ্নটি তাকে রাতের অন্ধকারে জাগ্রত করে রাখে। তার সুন্দর জীবন কিভাবে নষ্ট হলো, কেন তাকে এমনভাবে মূল্যায়িত হতে হলো? সে জানতে চায়, তার মতো আরও কত নারীর জীবন এমন নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। তবুও, জোবায়েদা কখনো প্রতিভাষা হারায় না। তার মধ্যে একটি আলোর মশাল জ্বলে ওঠে, যা তাকে আবারো নতুনভাবে সংগ্রাম করার জন্য প্রস্তুত করে। তিনি জানেন, নারীরা একা নয়, তাদের কষ্টের গল্পও একটি শক্তি। জীবনের সকল বাধা পেরিয়ে, তিনি নিজেকে শক্তিশালী করার সংকল্প করেন। সমাজের প্রতি তার এক বিরূপ অভিব্যক্তি জন্ম নেয়। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, একজন নিরীহ অসহায় নারী হয়েও তিনি নিজের জীবনের কষ্টের গল্প তুলে ধরবেন। তার কাহিনি অনেক নারীর জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে। “আমি ন্যায় বিচার চাই,”—এটি তার নতুন প্রতিজ্ঞা। যদিও প্রতিটি দিন তাকে নতুন করে সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়, তবুও তার মনের মধ্যে জন্ম নেয় একটি শক্তিশালী ইচ্ছা। তিনি বুঝতে পারেন, ন্যায় বিচার পেতে হলে তাকে লড়াই করতে হবে।
আজীবন যুদ্ধের এই সংকল্প নিয়ে, জোবায়েদা প্রতিদিন নতুন করে উঠে দাঁড়ায়। তিনি যেন পৃথিবীকে জানান দিতে চান, “আমি একজন নিরীহ অসহায় নারী, কিন্তু আমি পারবো। আমি আমার কষ্টকে শক্তিতে পরিণত করবো। জীবনযুদ্ধে আমি হার মানবো না।”
চলবে…

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট