
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে শীতকালীন সবজি চাষে নিরব বিপ্লব ঘটেছে।আধুনিক প্রযুক্তি, সময়োপযোগী কৃষিনীতি ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বদলে গেছে শাহজাদপুরে চিত্র।দেড় যুগ ধরে কৃষিক্ষেত্রে শাহজাদপুরের চাষীরা ব্যাপক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও সমৃদ্ধি অর্জন করছে। এখানে সবজির উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে কৃষকের আয়। শাহজাদপুর উপজেলার উঁচু এলাকা হিসেবে পরিচিত গাঁড়াদহ ইউনিয়নের নবীপুর, চর নবীপুর, বারই টেপরী, পুরান টেপড়ি, চর নরিনা পোরজনা ইউনিয়নের পাড় জামিরতা ও ফেচুয়ামারা গ্রাম এখন সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত। ৭টি গ্রামের চাষীরা সবজি চাষে উপজেলার মধ্যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ফলে শতাধিক কৃষকের ভাগ্য খুলে দিয়েছে সবজি চাষ। এসব এলাকার যেদিকেই দৃষ্টি দেয়া যায় সেদিকেই সবুজের সমারোহ। এসব এলাকায় চলতি বছর ব্যাপক শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, বেগুন, পটল, মুলা, আলু, টমেটো, ডাটাশাক,লালশাক, পালংশাকসহ নানা রকমের তরকারি।
কৃষকরা এসব সবজির মধ্যে অনেকগুলো আগাম চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন। এসময় আগাম শীতকালীন শাক-সবজির দাম বেশি। কৃষকরা হালকা শীতে আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত সময় কাটায়। মুনাফার আশায় কৃষকরা এবছরও আগাম সবজি চাষ করছেন। কৃষকরা এখন সহজেই উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছেন। এ কারণে কৃষি কাজ এখন লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে। যদিও সার, বীজসহ আনুষঙ্গিক পণ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে মাঝে মধ্যেই কৃষকরা হোঁচট খায়। তবে পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে কৃষকরা আরও অধিক জমিতে সবজি চাষে আগ্রহী হবে বলে জানান এলাকার কৃষক। সবজির মধ্যে বর্তমানে শিম, লাউ, পটল,বেগুন অধিক লাভজনক। শিম ও বেগুন চাষে লাভ বেশি হওয়ায় অনেকেই এতে উৎসাহিত হচ্ছেন। মিষ্টি কুমড়া, কচু, আলু ইত্যাদি ফসলের প্রতিও কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। কম সময়ে সবজি চাষে বেশি লাভ হয় বলে অনেকে ঝুঁকে পড়ছেন সবজি চাষে। এ বছর সবজির দাম বেশি পাওয়ায় অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে। আর বদলে যাচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকদের অর্থনীতিও।
উপজেলার পাড় জামিরতা গ্রামের মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি প্রায় ৩বিঘা জমিতে বেগুন এবং একবিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। প্রতিবছর বেগুন ও টমেটো চাষ করে তিনি খরচ বাদে ২লক্ষাধিক টাকা আয় করেন।
ফেচুয়ামারা গ্রামের জাকির হোসেন জানান, তিনি ২বিঘা জমিতে আগাম ফুলকপি চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় বাজার মূল্যও ভালো পাচ্ছেন।
উপজেলার নবীপুর গ্রামের সবজি চাষী মনছুর আলী জানান, তিনি ৪বিঘা জমিতে ফুলকপি ও বাঁধা কপি চাষ করেছেন। ইতিমধ্যেই ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। ভাল ফলন ও দাম পাওয়ায় বেশ লাভবান তিনি। আশে পাশের হাট-বাজার থেকে পাইকারিরা জমিতে এসে সবজি নিয়ে যায়। প্রতি বছর সবজি চাষ করে খরচ বাদে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আয় করেন।
উপজেলার বারইটেপরী গ্রামের কৃষক সুজাব আলী জানান, তিনি ৩বিঘা জমিতে বেগুণ চাষ করেছেন।আর এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করলে খরচ হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। আর সঠিকভাবে উৎপাদিত হলে প্রায় ২ থেকে আড়াইশ’ মণ বেগুন হয়। এতে প্রতি বিঘায় বেগুন চাষ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ আসে।
শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতি বছর শীতকালীন সবজি চাষে শাহজাদপুরের কৃষকরা ব্যাপক অবদান রেখে যাচ্ছে।উপজেলার সর্বত্রই কমবেশি কৃষকেরা সবজি চাষ করলেও গাঁড়াদহ ইউনিয়ন ও পোরজনা ইউনিয়ন সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত। এখানকার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের সবজি চাষে উৎসাহ যোগানোপর পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ ও বীজ প্রদান করে থাকে। সবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়তে থাকলে আগামীতে উপজেলার কৃষিখাত আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।