রংপুরের পীরগাছায় পদ্মরাগ মেইল ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ায় উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ প্রায় ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এতে গাইবান্ধা ও বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনে আটকে পড়ে করতোয়া এক্সপ্রেস, দোলনচাপা এক্সপ্রেস, বুড়িমারী এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেসসহ অন্তত চারটি আন্তঃনগর ট্রেন। হঠাৎ এই বিপর্যয়ে কয়েকশ যাত্রী পড়েন চরম দুর্ভোগে।
১৬ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে আটকে পড়া যাত্রীদের মধ্যে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কান্নাকাটি শুরু হয়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও কোথাও থেকে খাবার কিংবা পানি না মেলায় যাত্রীরা হতাশায় ভুগছিলেন। অনেকেই বিকল্প পরিবহন খুঁজে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেন বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব সাগির খান। তিনি নিজ উদ্যোগে স্টেশনের পাশে খিচুড়ি ও ডিম রান্নার আয়োজন করেন। পরে প্রায় দুই শতাধিক যাত্রী, স্টেশন মাস্টার এবং ট্রেনের অন্যান্য স্টাফদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন। শিশুদের জন্য বিশেষভাবে দুধ ও হালকা খাবারের ব্যবস্থাও করেন তিনি।তার ভাতিজা আরিফ খান জানান, মোহনা পাঠাগারের সামনে রান্নার আয়োজন করা হয়। যাত্রীরা ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েছিল। তাই আমরা খিচুড়ি রান্না করে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেই, বলেন তিনি।
খাবার হাতে পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন অনেক যাত্রী। করতোয়া এক্সপ্রেসের এক যাত্রী বলেন, দুপুর থেকে আমরা কিছু খেতে পারিনি। ছোট বাচ্চা কান্না করছিল। খাবার পেয়ে আমরা যেন নতুন জীবন পেলাম।স্টেশন মাস্টার হাইউল মিয়া বলেন, আটকে পড়া ট্রেনের যাত্রীদের জন্য খাবারের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এতে অনেক মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে পীরগাছা স্টেশনে পদ্মরাগ মেইল ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকাজ শুরু হয়। রাত ১২টার দিকে উদ্ধার কাজ শেষ হলে আটকে থাকা ট্রেনগুলো চলাচল শুরু করে।
স্থানীয়রা জানান, সংকটময় মুহূর্তে সাগির খানের এই মানবিক উদ্যোগ যাত্রীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি আলোচনায় আসে। যাত্রীরা বলেন, এমন উদ্যোগ অন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকেও অনুপ্রাণিত করবে।