চট্টগ্রামের রাজনীতিতে সুযোগসন্ধানীদের উত্থান – মুখোশ উন্মোচনের সূচনা , ত্যাগের রাজনীতি থেকে ক্ষমতার বংশধরদের রাজনীতিঃ
চট্টগ্রামের রাজনীতি একসময় ছিল সংগ্রামের প্রতীক। পাকিস্তান আমল থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত—এই রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি ছিলেন সাধারণ কর্মী, তৃণমূলের নিরলস সৈনিক, যারা নির্যাতন, কারাবাস, হত্যা ও রক্তঝরানো লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছিলেন।
কিন্তু সময়ের আবর্তে সেই চিত্র বদলে গেছে ভয়াবহভাবে। আজ আর রাজনীতি মানে ত্যাগ নয়, বরং উত্তরাধিকার। রাজনীতি এখন পরিণত হয়েছে বংশপরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এক প্রকার ক্ষমতার সম্পদে। এর ফলেই চট্টগ্রামে দেখা দিয়েছে “রাজনৈতিক বংশধরদের উত্থান”—যাঁরা তৃণমূলের সংগ্রাম না করেও কেবল পারিবারিক পরিচয়কে মূলধন বানিয়ে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, নীতি নির্ধারক বনে গেছেন।
প্রকৃত ত্যাগীরা কোথায় হারিয়ে গেলেন? আজও চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাজারো তৃণমূল নেতা রয়েছেন, যাঁরা আওয়ামী লীগের পতাকা হাতে রাজপথে সংগ্রাম করেছেন, দমন-পীড়নের মুখে দলকে টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁদের ভাগ্যে মেলেনি নেতৃত্বের আসন। প্রকৃত ত্যাগীরা উপেক্ষিত ও অবহেলিত।অনেকেই রাজনৈতিক জীবনের হতাশায় ঘরে বসে গেছেন।কেউ কেউ প্রান্তিক পর্যায়ে বেঁচে আছেন অচেনা ও অজানা হয়ে।নকেউ আবার সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে হারিয়ে গেছেন। অথচ ত্যাগের মূলধন নিয়েই আওয়ামী লীগ একদিন ক্ষমতায় এসেছিল। আজ সেই ত্যাগীরা দলে আর গুরুত্বপূর্ণ নন—বরং নেতৃত্বের আসনে জায়গা করে নিয়েছেন প্রভাবশালী পরিবার ও ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আশীর্বাদপুষ্টরা। সুযোগসন্ধানীদের কৌশল ও দৌরাত্ম্য-এই নতুন প্রজন্মের নেতারা রাজনীতিকে পেশা বানিয়েছেন। মাঠের আন্দোলনে না থাকলেও তাঁরা—পারিবারিক নামকে মূলধন বানিয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে আত্মীয়তা বা ঘনিষ্ঠতার সনদ ব্যবহার করেছেন। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফলাফল হলো, তৃণমূলের নেতারা যেখানেই গেছেন বঞ্চিত হয়েছেন, সেখানে এই “সুযোগসন্ধানী বংশধররা” রাতারাতি এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। নাম প্রকাশ – কারা এই নেতারা? চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত নামগুলোর মধ্যে রয়েছেন—
নওফেল, জাবেদ, ওয়াসিকা, সনি, মামুন, দিদার, মিতা, নদভী, শামসুল হক, ফজলে করিম, এমএ লতিফ। তাঁরা কেউই প্রকৃত অর্থে তৃণমূল রাজনীতির সৈনিক ছিলেন না। অথচ আজ তাঁরা সংসদের আসনে বসে আছেন।
আশীর্বাদের রাজনীতি : এক অন্ধকার ইতিহাস-শেখ হাসিনার আশীর্বাদে এসব নেতা ক্ষমতার আসনে বসার পর কী ঘটেছে?ত্যাগী নেতাদের বিতাড়ন : প্রকৃত নেতাদের দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জনগণের প্রতি অবিচার : সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি করা হয়েছে। বিরোধীদের দমন : বিএনপি ও বিরোধী দলের কর্মীদের উপর অন্যায় নির্যাতন চালানো হয়েছে। অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গঠন : রাতারাতি শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা : একাধিক দুর্নীতি, দখলবাজি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। ফলাফল—চট্টগ্রামের রাজনীতির চিত্র আজ বিকৃত, যেখানে জনগণের আস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
জনগণের সামনে সত্য উন্মোচন – ভোরের আওয়াজ ও সময়রের আলোর অঙ্গীকার _এই অন্ধকার রাজনীতির মুখোশ উন্মোচনে এগিয়ে এসেছে “দৈনিক ভোরের আওয়াজ” এবং “সময়রের আলো”। আমরা বিশ্বাস করি, সংবাদপত্রের দায়িত্ব কেবল খবর পরিবেশন নয়, বরং জনগণের সামনে সত্য উন্মোচন করা। তাই—প্রতিটি এমপি ও মন্ত্রীর অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড একে একে প্রকাশ করা হবে। প্রকাশিত হবে প্রমাণভিত্তিক তথ্য, যা জনমনে প্রশ্ন তুলবে। জনগণকে দেখানো হবে আসল রাজনীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র।
সামনে আসছে আরও বড় বিস্ফোরণ
এই ধারাবাহিক প্রকাশনার পরবর্তী ধাপ হবে আরও ভয়ঙ্কর। এবার প্রকাশিত হবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপকর্মের ইতিহাস। এখানে উন্মোচিত হবে—দুর্নীতির কৌশল, দখলবাজির ঘটনাবলি,
* জনগণের অর্থ লুটপাটের নেপথ্য কাহিনি।
সবই আসবে দলিল-প্রমাণসহ।
আগাম বার্তা-চট্টগ্রামের রাজনীতির দীর্ঘদিনের দুঃসহ বাস্তবতা, অন্ধকার ইতিহাস ও প্রকৃত ত্যাগীদের বঞ্চনার কাহিনি এবার প্রকাশিত হতে চলেছে ধারাবাহিকভাবে। এ যেন ক্ষমতার আড়ালে লুকানো সত্য প্রকাশের এক নির্ভীক উদ্যোগ। প্রতিটি শব্দ হবে সময়ের সাক্ষী, প্রতিটি তথ্য হবে ইতিহাসের দলিল।
লেখকঃ যুগ্ম সম্পাদক, দৈনিক ভোরের আওয়াজ ,প্রধান সম্পাদক, সময়ের আলো পত্রিকা