1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
‎পুলিশের প্রতিবেদনে উঠে এলো রংপুরের হিন্দু পাড়ার হামলার ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শ্রীমঙ্গল থেকে ভুলে পঞ্চগড়ে, পরিবারকে ফিরে পেতে চায় ছোট্ট রিয়াদ নবীনগর পৌর শাখার ৫, ৬, ৭,নং ওয়ার্ডের কৃষক দলের উদ্যোগে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত খুলনায়  অবৈধ পলিথিন বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জুলাই যোদ্ধাদের সংবর্ধনা ভোটকেন্দ্রভিত্তিক সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসে জামায়াতের কৌশলী সম্মেলন: গলাচিপার উলানিয়ায় নেতাদের দৃঢ় অবস্থান টানা চতুর্থবারের মতো শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক ইনস্পেক্টর নির্বাচিত হলেন লোহাগাড়ার গর্ব মোঃ হাসানুজ্জামান হায়দার পঞ্চগড়ে জুলাই হত্যার বিচার ও জুলাই সনদ ঘোষণার দাবিতে শিবিরের জুলাই দ্রোহ  হাটহাজারীতে ‘জাগৃতি’র উদ্যোগে ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প,শাহ আনোয়ার (রহঃ) ফাউন্ডেশন চৌধুরীহাটে কিশোরীকে তুলে নিয়ে বিয়ে, সালিশে বাবাকে পিটিয়ে হত্যা: গ্রেফতার ২

আবর্জনার স্তুপ থেকে জ্ঞানের মিনার: হোসে আলবার্তো গুটিরেজের আশ্চর্য সংগ্রহ

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

আরজ আলীর উক্তিটি মানবজীবনে লাইব্রেরির গুরুত্ব বোঝাতে দারুণ এক দৃষ্টান্ত। তিনি বলেছিলেন—
“বিদ্যাশিক্ষার ডিগ্রী আছে, কিন্তু জ্ঞানের কোনো ডিগ্রী নেই। জ্ঞান ডিগ্রীবিহীন ও সীমাহীন। সেই অসীম জ্ঞানার্জনের মাধ্যম স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তা হচ্ছে লাইব্রেরী।”
এই বক্তব্যে তিনি শিক্ষা ও জ্ঞানের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য তুলে ধরেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডিগ্রি দিতে পারে, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানার্জন ঘটে নিরবচ্ছিন্ন পাঠ ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে। লাইব্রেরিই সেই চিরন্তন জ্ঞানের ভাণ্ডার, যেখানে একাগ্র পাঠক অবিরত শিখতে পারেন। তাই আরজ আলীর জন্য লাইব্রেরি ছিল শুধু জ্ঞানের উৎস নয়, বরং তাঁর জীবনের প্রধান আনন্দক্ষেত্র।
-আমি একজন বইপ্রেমী—বইকে আমি অকুণ্ঠ ভালোবাসি। আমার কাছে সর্বোত্তম উপহার হচ্ছে একটি বই, আর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠ ভান্ডার হলো একটি লাইব্রেরি। আমার বিশ্বাস, প্রকৃত জ্ঞানভান্ডারের প্রকৃত মালিক একজন লাইব্রেরিয়ান। যেমন একজন চিকিৎসক বা ফার্মাসিস্ট বিভিন্ন ওষুধের নাম ও কার্যকারিতা মনে রাখেন, তেমনি একজন বই বিক্রেতা অসংখ্য বইয়ের নাম, লেখক এবং তাদের লেখার ধরণ সম্পর্কে জানেন। এই বই-ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা।
আমার বাড়িটি এক ছোট্ট লাইব্রেরির মতো, আর অফিসেও আমি লাইব্রেরির আবহ তৈরি করে বই সংগ্রহ করেছি। বই সংগ্রহের যে আনন্দ, তা আমি গভীরভাবে অনুভব করি। তাই যখন আজ ফেসবুকে হোসে আলবার্তো গুটিরেজের গল্পটি পড়লাম, তখন সেটিকে আরও বিস্তারিতভাবে, নিজের মতো করে লিখতে চাইলাম—একজন বইপ্রেমী হিসেবে এই অভিজ্ঞতা হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। বইয়ের প্রতি মানুষের ভালবাসার কত রকম প্রকাশই না দেখা যায়। কেউ বইয়ের বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলে, কেউ বইয়ের পাতায় হারিয়ে যায়, আবার কেউ বই লিখে নিজেকে ইতিহাসের অংশ করে নেয়। তবে এক মানুষ আছেন, যিনি বইকে তার জীবন বানিয়েছেন, অথচ তিনি লেখক নন, গবেষকও নন। তিনি এক ময়লার ট্রাক চালক—হোসে আলবার্তো গুটিরেজ Jose Alberto Gutierrez কলম্বিয়ার বোগোটার এক দরিদ্র অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করা গুটিরেজ কখনোই প্রথাগত উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাননি। কিন্তু তিনি জানতেন, শিক্ষা মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আর সেই উপলব্ধিই তাকে পরিণত করেছে এক ব্যতিক্রমী সংগ্রাহকে, যিনি পরিত্যক্ত বইগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন, ছড়িয়ে দিয়েছেন শিক্ষার আলো।
শুরুর গল্প: এক সন্ধ্যায় পথের ধুলোয় পড়ে থাকা বই
১৯৯৭ সালের কথা। রাতের আঁধারে যখন বোগোটার ফাঁকা রাস্তায় ময়লার ট্রাক চালাচ্ছিলেন গুটিরেজ, তখন আচমকা এক জিনিস তার চোখে পড়ে। একটি আবর্জনার স্তূপে পড়ে আছে লিও টলস্টয়ের কালজয়ী উপন্যাস আন্না কারেনিনা।গুটিরেজ থমকে যান। বিশ্বসাহিত্যের এক অমূল্য রত্ন কীভাবে আবর্জনায় এসে ঠাঁই পেল? বইটিকে তিনি যত্ন করে তুলে নিলেন, ধুলো ঝেড়ে বাড়িতে নিয়ে গেলেন। এ যেন এক নতুন জগতের দরজা খুলে গেল তার সামনে।
এরপর থেকে প্রতি রাতে যখন তিনি বোগোটার অলিগলি দিয়ে ময়লার ট্রাক নিয়ে যেতেন, তখন আর শুধু আবর্জনা দেখতেন না, খুঁজতেন বই। তিনি দেখতে পেলেন, শুধু টলস্টয় নয়, অন্যান্য বিখ্যাত লেখকের বইও পড়ে থাকে রাস্তার ধুলোয়—গার্সিয়া মার্কেস, পাবলো নেরুদা, মিগেল দে সার্ভান্তেসের মতো লেখকদের অমূল্য রচনাগুলোও।
তিনি ভাবলেন, এই বইগুলোর স্থান তো ডাস্টবিনে নয়! এদের হাতে তুলে দেওয়া উচিত যাদের সত্যিই এগুলোর প্রয়োজন। আর সেই চিন্তা থেকেই শুরু হলো এক অভাবনীয় সংগ্রহের যাত্রা।
পঁচিশ হাজার বইয়ের লাইব্রেরি: জ্ঞানের আলো ছড়ানোর মিশন
ধীরে ধীরে গুটিরেজের সংগ্রহে বইয়ের সংখ্যা বাড়তে লাগল। প্রথমে নিজের বাড়ির একটি ছোট ঘরে বইগুলো রাখতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জায়গা কমতে শুরু করল। ফলে বই রাখার জন্য নিজের বাড়ির নিচতলাকে সম্পূর্ণভাবে লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত করলেন। এই লাইব্রেরির নাম দিলেন লা ফোর্সা দে লাস প্যালাব্রাস (La Fuerza de las Palabras), যার অর্থ “শব্দের শক্তি”।
আজ তার সংগ্রহে রয়েছে ২৫,০০০-এরও বেশি বই! শুধু সংগ্রহ করাই নয়, তিনি এসব বই দান করতে থাকেন স্কুল, পাঠাগার ও কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে। তার দান করা বইয়ের মাধ্যমে ২৩৫টি স্কুল ও পাঠাগার সমৃদ্ধ হয়েছে। ৪৫০টির বেশি লাইব্রেরি, রিডিং সেন্টার এবং স্কুলের লাইব্রেরি তার সংগ্রহের বইয়ে উপকৃত হয়েছে। তার এই উদ্যোগ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক ময়লাবাহী ট্রাক চালকও এখন বই পেলেই গুটিরেজের কাছে দিয়ে যান। ফলে তার সংগ্রহশালা ক্রমেই সমৃদ্ধ হচ্ছে। বই শুধু কাগজের মলাট নয়, বই হলো ভবিষ্যতের আলো
গুটিরেজ বিশ্বাস করেন, শিক্ষা শুধু বড় ডিগ্রি অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রকৃত শিক্ষা হলো মনুষ্যত্ব, জ্ঞানের আলো এবং বইয়ের প্রতি ভালোবাসা। তিনি বলেন—
“আমরা উত্তরাধিকার হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সবচেয়ে মূল্যবান যা দিতে পারি, তা হলো জ্ঞান। বই হলো সেই আলো, যা দারিদ্র্যের অন্ধকার ভেদ করতে পারে।”

তার এলাকায় অনেক শিশুই দারিদ্র্যের কারণে স্কুলে যেতে পারে না। ছোট বয়সেই তারা কাজে নেমে পড়ে। তাদের হাতে যদি বই তুলে দেওয়া যায়, তবে হয়তো তারা একদিন নতুন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যেতে পারবে।
একজন ময়লাকর্মীর অনন্য জীবনদৃষ্টি
বইয়ের প্রতি ভালোবাসা একজন মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, গুটিরেজ তার অনন্য উদাহরণ। নিজের সংগ্রহ করা হাজার হাজার বইয়ের দিকে তাকিয়ে তিনি যে স্বপ্ন দেখেন, তা আরও বড়—তিনি চান, একদিন গোটা কলম্বিয়াকে বই দিয়ে সমৃদ্ধ করবেন। জীবনে যদি কখনো কোনো ভালো বই অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখেন, তবে মনে করুন হোসে আলবার্তো গুটিরেজের কথা। হয়তো সেই বইটিই বদলে দিতে পারে কারও জীবন, যেমন বদলেছে এই ময়লার ট্রাক ড্রাইভারের জীবন।
জ্ঞানের শক্তি অমর, আর সত্যিকারের শিক্ষিত সেই, যে এই শক্তিকে ছড়িয়ে দিতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট