চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার বাসিন্দা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আবছার উল্লাহ ফারুক (৩২) সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে ষড়যন্ত্রমূলক একটি মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। এই ঘটনায় সুবিচার চেয়ে তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন। আবছার উল্লাহর দাবি, তিনি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং চলাফেরায় পুরোপুরি অন্যের উপর নির্ভরশীল। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সমাজ সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কার্ডধারী এবং নিয়মিত ভাতা প্রাপ্ত। চিকিৎসকের সনদ অনুযায়ী, তাঁর শারীরিক অবস্থা তাঁকে স্বাভাবিক কার্যক্রমে সম্পূর্ণ অক্ষম করে তুলেছে। আবছার উল্লাহ জানান, তাঁর সৎ মা কোহিনুর আকতার (৩৭) গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ডবলমুরিং থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-০৮/০৯/২০২৪)। মামলাটিতে আবছার উল্লাহ ছাড়াও তাঁর স্ত্রী হাসিনা আকতার (২৮), ছোট ভাই আরিফ উল্লাহ (২৬) এবং বোনের জামাই মুসাকে (৩২) আসামি করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর সৎ মা সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলা করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, তাঁর সৎ মা ডবলমুরিং থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলুল কাদের পাটোয়ারীর সঙ্গে সুসম্পর্কের সুযোগ নিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। আবছার উল্লাহর পক্ষ থেকে আদালতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ার প্রমাণ হিসেবে চিকিৎসকের সনদ ও সরকারি কার্ড জমা দেওয়া হয়। আদালত এই প্রমাণ যাচাই করে তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সমাজের সর্দার এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। সংবাদকর্মীরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং আবছার উল্লাহর পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আবছার উল্লাহর ভাষায়, “আমি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ। চলাফেরায় আমি পুরোপুরি অন্যের ওপর নির্ভরশীল। আমার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে আমাকে বঞ্চিত করার জন্যই এই মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। আমি পুলিশের কাছে ন্যায়বিচার ও মানবিক সহযোগিতা কামনা করছি।” আবছার উল্লাহ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারের কাছে এই মামলার যথাযথ তদন্তের আবেদন করেছেন। তিনি তাঁর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সনদ, চিকিৎসকের রিপোর্ট এবং মিথ্যা মামলার নথি যুক্ত করে দ্রুত বিচারিক কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, চট্টগ্রাম পুলিশের প্রতি আমার এই আবেদন আমলে নেওয়া হবে। আমি একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে মানবিক সহযোগিতা এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রাখি।”
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, “এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক মামলা শুধু ব্যক্তিকে নয়, সমাজের সামগ্রিক মূল্যবোধকেও আঘাত করে। আমরা আশা করি, প্রশাসন দ্রুত এই বিষয়টি সমাধান করবে।” দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আবছার উল্লাহর অভিযোগ একটি মানবিক ও আইনি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ করা গেলে তাঁর জন্য সুবিচার নিশ্চিত হবে এবং মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পেতে তিনি আশ্বস্ত হবেন। সমাজের অসহায় ও প্রান্তিক মানুষের অধিকার রক্ষায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ একান্ত জরুরি।