আগামী মঙ্গলবার
শাহ সুফী শেখ অছিয়র রহমান আল ফারুকী চরণদ্বীপী (রাঃ)-এর ১৩৩তম বেলায়েত ও বেলাদত বার্ষিক ওরশ অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রামের মাটি সুফী সাধকদের পবিত্র পদধূলিতে বারবার ধন্য হয়েছে। এখানকার প্রতিটি কোণ আধ্যাত্মিকতার অনন্য আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল। এই মাটির উর্বরতায় যুগে যুগে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য আল্লাহর প্রিয় বান্দা, যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন গাউসুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (রাঃ)। তাঁর জন্ম ১৮২৬ সালের ১ মাঘ চট্টগ্রামের মাইজভান্ডার গ্রামে। সুফীবাদের প্রচার ও প্রসারে তাঁর ভূমিকা ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। তাঁর হাতে গড়া খলিফাদের মধ্যে বারোজন সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেছেন, যাঁরা নিজেদের কর্মগুণে ইসলামের আধ্যাত্মিক আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।
গাউসুল আজমের (রাঃ) প্রথম এবং প্রধান স্থলাভিষিক্ত খলিফা ছিলেন বোয়ালখালীর চরণদ্বীপের গর্ব হযরত শাহ সুফী শেখ অছিয়র রহমান আল ফারুকী (রাঃ)। তিনি ১৮৫২ সালের ২১শে জানুয়ারি (৭ই মাঘ) বুধবার বোয়ালখালীর পশ্চিম চরণদ্বীপ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ মোহাম্মদ আজম আল ফারুকী ওরফে মাগন আলী এবং মাতা মোছাম্মৎ জয়নাব বিবি।
আধ্যাত্মিক উত্থান ও দায়িত্বপ্রাপ্তি
হযরত শেখ অছিয়র রহমান (রাঃ) ছিলেন গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী (রাঃ)-এর আধ্যাত্মিক পথের প্রথম আলোকবর্তিকা। তিনি জীবদ্দশাতেই একমাত্র গদীনশিন হওয়ার অনুমতি পান, যা তাঁকে গাউসুল আজমের (রাঃ) কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। তাঁর আধ্যাত্মিক জ্ঞান, বিনয়, ও মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বানের অতুলনীয় ক্ষমতা তাঁকে এক অনন্য স্থানে অধিষ্ঠিত করে।
চরণদ্বীপ দরবার শরীফ ও তাঁর অবদান চরণদ্বীপ দরবার শরীফ শুধু বোয়ালখালী নয়, বরং সমগ্র চট্টগ্রামের একটি উল্লেখযোগ্য আধ্যাত্মিক কেন্দ্র। এখান থেকে গাউসুল আজমের (রাঃ) বারোজন শীর্ষস্থানীয় খলিফা তাঁদের কর্ম শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
১. হযরত শাহ সুফী কাজী আছাদ আলী (রাঃ): বোয়ালখালীর আহল্লা গ্রামে তাঁর মাজার।
২. হযরত শাহ সুফী সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (রাঃ): ফরহাদাবাদ গ্রামের নাম তাঁর নামে।
৩. হযরত মাওলানা শাহ সুফী আবদুল আজিজ খিতাবচরী (রাঃ): যাঁর মাজার খিতাবচরে।
৪. হযরত শাহ সুফী সৈয়দ গোলামুর রহমান (বাবা ভান্ডারী, রাঃ): যাঁর প্রচেষ্টায় মাইজভান্ডারী তরীকার বিস্তার ঘটে। ১৩৩তম বেলায়েত ও বেলাদত বার্ষিক ওরশ
চরণদ্বীপ দরবার শরীফে হযরত শাহ সুফী শেখ অছিয়র রহমান আল ফারুকী (রাঃ)-এর ১৩৩তম বেলায়েত ও বেলাদত বার্ষিক ওরশ আগামী ২১শে জানুয়ারি (৭ মাঘ) মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে।
এই ওরশ শরীফে দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও অনুসারীদের সমাগম হবে। একদিকে এটি হবে ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির এক অনন্য পরিবেশ, অন্যদিকে এটি ভক্তদের মিলনমেলায় পরিণত হবে। ওরশের মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকবে:
খতমে কোরআন ও মিলাদ মাহফিল।
দেশি-বিদেশি ইসলামী বক্তাদের বয়ান।
জিকির, দরুদ পাঠ, এবং বিশেষ দোয়া মাহফিল।
চরণদ্বীপ দরবার শরীফের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন।
আধ্যাত্মিক দীক্ষা ও প্রেরণা
হযরত শাহ সুফী শেখ অছিয়র রহমান (রাঃ)-এর জীবনী ও আদর্শ ভক্তদের মাঝে ঈমানি জ্ঞান ও শক্তি প্রদান করবে। তাঁর শিক্ষার মূলমন্ত্র ছিল আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য এবং মানবসেবার মাধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন।
এই ওরশে অংশগ্রহণ কারীরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমে নিজেদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারবেন। এটি শুধু একটি আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি সামগ্রিক জীবনদর্শন, যা মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বকে আরও সুসংহত করবে।
লেখক: সাংবাদিক, গবেষক, টেলিভিশন উপস্থাপক, মহাসচিব – চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরা