বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম. আজিজুল হক আর নেই। ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন এবং সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
কর্মজীবনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
১৯৪০সালের ১৩ ডিসেম্বর শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরভাগা বকাউল কান্দি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এম. আজিজুল হক। তার পিতা আব্দুর রহমান বকাউল ছিলেন তৎকালীন ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য।
প্রশাসনিক দক্ষতা ও শৃঙ্খলার জন্য সুপরিচিত এম. আজিজুল হক দীর্ঘ কর্মজীবনে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮১ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরশাদ সরকারের সময় চার মাসের জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮২ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান।
১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে ১৯৯৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলা আরও সুসংহত হয়। পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক ও কার্যকর করতে তিনি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যা পরবর্তীতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৭ সালে তিনি ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, নৌ পরিবহন এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। প্রশাসনিক দক্ষতা ও দূরদর্শিতার কারণে তিনি সর্বমহলে প্রশংসিত হন।
এছাড়াও তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
যোগ্য পিতার যোগ্য উত্তরসূরি
তার পুত্র হাসিব আজিজ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পিতার দেখানো পথ অনুসরণ করে তিনি চট্টগ্রামের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। সততা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে তিনি পুলিশ বাহিনীর সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছেন।
এক গৌরবময় অধ্যায়ের সমাপ্তি
এম.আজিজুল হকের মৃত্যুতে শুধু পুলিশ বাহিনী নয়, সাধারণ মানুষও গভীর শোকাহত। তার দীর্ঘ কর্মজীবন, অবদান ও নেতৃত্ব বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রশাসনিক উন্নয়নে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তার আত্মার শান্তি কামনা করি।