স্মৃতি কখনো মুছে যায় না, বিশেষত যদি তা হয় এক অনন্য অভিজ্ঞতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি। পেন ইন্টারন্যাশনালের বিশ্ব লেখক সম্মেলন—কোরিয়ায় কাটানো সেই দিনগুলো এখনো আমার স্মৃতির আয়নায় ঝলমল করে। সাত তারকা হুন্দায় হোটেলের রাজকীয় পরিবেশ, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা গুণী লেখকদের মিলনমেলা, সাহিত্য নিয়ে গভীর আলোচনা—সবকিছুই যেন এক স্বপ্নের মতো মনে হয় এখনো।কিন্তু সেই সম্মেলন শুধু সাহিত্যিক ভাবনার বিনিময় ছিল না, সেখানে জন্ম নিয়েছিল কিছু হৃদয়ছোঁয়া সম্পর্কও। আর তারই মাঝে ছিল হা-রিন—এক অনন্য উজ্জ্বল স্মৃতি, এক মিষ্টি পরিচয়ের গল্প।
প্রথম দেখা—রেজিস্ট্রেশনের মুহূর্তে
সেদিন ছিল সম্মেলনের প্রথম সকাল। আমি হুন্দায় হোটেলের অভ্যর্থনা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে রেজিস্ট্রেশনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চারপাশে পরিচিত-অপরিচিত লেখকদের ব্যস্ততা, কোরিয়ান আয়োজকদের হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানানো—সবকিছুতেই এক উচ্ছ্বাসের ছোঁয়া।
ঠিক তখনই তাকে প্রথম দেখি।
দীর্ঘ, কালো চুল পেছনে বাঁধা, পরনে নীল রঙের হালকা গাউন, চোখে বুদ্ধিদীপ্ত দৃষ্টি—একজন কোরিয়ান তরুণী, যার চোখের ভাষা ছিল অদ্ভুতভাবে গল্প বলার মতো। সে ছিল হা-রিন। প্রথম দেখাতেই মনে হলো, যেন কোনো কবিতার চরিত্র বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
আমাদের দৃষ্টি মিলল। সে হাসল, আমি বিনীতভাবে মাথা নোয়ালাম।
—”আপনি কি বাংলাদেশ থেকে?”
তার কণ্ঠস্বরে একধরনের উষ্ণতা ছিল, যা বিদেশ-বিভুঁইয়ে আপনজনের মতো মনে হলো। আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম। সে জানালো, সে একজন কোরিয়ান কবি, পেন ইন্টারন্যাশনালের একজন সক্রিয় সদস্য। তার কবিতায় কোরিয়ার প্রকৃতি, জীবন আর ইতিহাসের ছাপ স্পষ্ট।
বন্ধুত্বের সূচনা—সাহিত্যের সেতুবন্ধন
সেই মুহূর্ত থেকে হা-রিনের সঙ্গে আমার কথোপকথন শুরু হলো, যা ধীরে ধীরে এক অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বে রূপ নিল। সম্মেলনের ফাঁকে ফাঁকে আমরা সাহিত্য, সংস্কৃতি, কোরিয়ান কবিতা ও বাংলার কাব্যধারা নিয়ে আলোচনা করতাম।
সে আমাকে বলেছিল, “বাংলাদেশের কবিতা আমি পড়েছি, বিশেষ করে নজরুলের কবিতা আমাকে খুব আকর্ষণ করে। তার বিদ্রোহ, তার ভালোবাসা—সবকিছুই আমার হৃদয়ে দাগ কেটেছে।”
আমি বিস্মিত হলাম—কোরিয়ার এই তরুণী নজরুলের কবিতা পড়ে তার প্রাণে আগুন ধরিয়েছে! তখনই মনে হলো, সাহিত্য সত্যিই কোনো সীমানা মানে না।
স্মৃতির পাতায় অমলিন এক সন্ধ্যা
সম্মেলনের চতুর্থ দিন ছিল এক বিশেষ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। সেখানে বিভিন্ন দেশের লেখকরা নিজেদের সংস্কৃতি ও সাহিত্য নিয়ে পরিবেশনা করছিলেন। হা-রিন মঞ্চে উঠে তার একটি কবিতা আবৃত্তি করল—”Autumn’s Last Leaf” (শরতের শেষ পাতা)। তার কণ্ঠস্বর, তার আবেগ, তার উচ্চারণ—সবকিছুই যেন এক মোহময় সুর সৃষ্টি করল হলরুমে।
আমি অনুভব করলাম, একজন প্রকৃত কবির আত্মা ভাষার বাঁধনে বন্দী থাকে না, তা মুক্ত হয়ে উড়ে যায় পৃথিবীর যে কোনো কোণে।
সেই রাতে আমরা অনেকক্ষণ গল্প করেছিলাম। কোরিয়ার চন্দ্রালোকিত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আমরা বাংলা ও কোরিয়ান কবিতার মিল-অমিল নিয়ে আলোচনা করছিলাম। হা-রিন বলেছিল—
“সাহিত্য এক অলিখিত সেতু, যা মানুষকে এক করে। আমাদের ভাষা আলাদা হতে পারে, কিন্তু অনুভূতি একই থাকে—এটাই সাহিত্যের সবচেয়ে সুন্দর দিক।”
বিদায়ের দিন—এক অসমাপ্ত গল্প
সম্মেলনের শেষ দিন এলো। হা-রিন বিদায়ের আগে আমাকে তার একটি কবিতার বই উপহার দিল। কভারের ভেতরে সে লিখে দিল—
“To my friend from Bangladesh, May our words travel beyond time and borders.”
(“বাংলাদেশ থেকে আসা আমার বন্ধুর জন্য, আমাদের শব্দগুলো যেন সময় ও সীমানার বাইরেও ভ্রমণ করতে পারে।” )
আমি তখনো জানতাম না, এই ছোট্ট বাক্যটি কতটা গভীর অর্থ বহন করে। কারণ আমরা সত্যিই এরপর আর কখনো দেখা করিনি।
স্মৃতির আয়নায় হা-রিন ও কোরিয়া
আজ এত বছর পরও পেন ইন্টারন্যাশনালের সেই কোরিয়া বিশ্ব লেখক সম্মেলনের স্মৃতি ঝলমল করে ওঠে। বিশেষ করে হা-রিনের সেই হাসি, তার কণ্ঠস্বর, তার দেওয়া বইটি—সবকিছুই যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে স্মৃতির আয়নায়।
আমরা অনেক বন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হই, কিন্তু কিছু মানুষ থাকে, যারা আমাদের মনে গভীরভাবে দাগ কেটে যায়। হা-রিন আমার সাহিত্যিক জীবনের এমনই এক স্মৃতি, যা কখনো মুছে যাবে না। সত্যিই, সাহিত্য কখনো শেষ হয় না—সে কেবল ছড়িয়ে পড়ে মানুষের হৃদয়ে, ভাষা আর সময়ের সীমানা পেরিয়ে…পেন ইন্টারন্যাশনালের কোরিয়া বিশ্ব লেখক সম্মেলন ও হা-রিনের স্মৃতি। তার সাথে পরিচয়ের বিষয়টা লেখা শুরুতেই বলেছি- সেই সাহিত্য আলোচনায়, সৃজনশীলতার মহামিলনে, হা-রিন ছিল আলোকবর্তিকার মতো—উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত ও মুগ্ধকর। তার কথার সুর, তার শব্দের জাদু এখনো আমার মনে রয়ে গেছে। কখনো কখনো মনে হয়, সময় কি সত্যিই বয়ে গেছে? নাকি সেই মুহূর্তগুলো এখনো কোথাও জীবন্ত হয়ে আছে?
আজও স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে হা-রিনের সেই মুগ্ধকর উপস্থিতি। তার কথা, তার হাসি, তার দৃষ্টি—সবকিছুই যেন এক অসমাপ্ত গল্পের মতো রয়ে গেছে আমার মনে। আমি আবারও পুনরায় বলছি ভিনদেশি প্রেম—হা-রিনের স্মৃতির কথা-
ভালোবাসা কখনো সীমান্ত মানে না, কখনো ভাষার বাঁধনে আটকায় না। কিছু সম্পর্ক হয়ত এক জীবনের জন্য নয়, কিন্তু এক মুহূর্তেই তা চিরন্তন হয়ে যায়। কিছু মানুষ আসে, থেকে যায় না, কিন্তু হৃদয়ের পাতায় তারা রয়ে যায় অমলিন স্মৃতির মতো। আজ বহু বছর পর, এক কোরিয়ান তরুণী লেখিকার কথা মনে পড়ছে—হা-রিন।
সে ছিল এক অপূর্ব মায়াবতী, যার চোখের ভাষা শব্দের চেয়েও স্পষ্ট ছিল, যার হাসির মধ্যে ছিল এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতা। তার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত যেন আজও আমার স্মৃতির পাতায় আঁকা রঙিন ছবির মতো।
কখনো কখনো আমি ভাবি, সে এখন কোথায়? কেমন আছে? তার স্বপ্নগুলো কি সত্যি হয়েছে?
সে কি কখনো আমার কথা ভাবে? আমি জানি না। কিন্তু আমি জানি, কিছু সম্পর্ক সময়ের কাছে হার মানে না। কিছু অনুভূতি অব্যক্ত হয়েও থেকে যায়। হা-রিন, হয়তো তুমি আমাকে ভুলে গেছো, হয়তো তুমি তোমার জীবনের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছো।
কিন্তু আমি আজও সেই প্রথম দেখার মুহূর্ত, সেই নীরব চাহনি, সেই হাসির উজ্জ্বলতা, সেই অব্যক্ত ভালোবাসাকে স্মরণ করি—এবং এক বিনম্র শ্রদ্ধায় তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার সম্মান জানাই। হা-রিন: এক রঙিন স্মৃতির নাম
আমি এই লেখাটি উৎসর্গ করছি হা-রিনকে—একজন কোরিয়ান তরুণী লেখিকা, যার উপস্থিতি ছিল আমার জীবনের এক অপূর্ব অধ্যায়। ভালোবাসা হয়তো চিরকালীন নয়, কিন্তু কিছু অনুভূতি এমন থাকে যা কখনো পুরোনো হয় না, যা হৃদয়ের অলিগলিতে বেঁচে থাকে এক সুরেলা প্রতিধ্বনির মতো। হা-রিন—তোমার কথা আজও মনে পড়ে। তোমার চোখের গভীরে যেন এক অদ্ভুত রহস্য ছিল, যা আমি কখনো পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। তোমার হাসির উজ্জ্বলতায় আমি প্রতিবার নতুন করে মুগ্ধ হয়েছি। তুমি যখন কথায় কথায় হেসে উঠতে, তখন মনে হতো যেন বসন্তের হাওয়ায় akura ফুলের পাপড়ি উড়ে যাচ্ছে। তোমার কণ্ঠের প্রতিটি শব্দ ছিল কবিতার মতো, তোমার উপস্থিতি যেন এক চিরসবুজ অনুভূতি।
তোমার সাথে কাটানো সময়গুলো আমার মনে এখনো স্পষ্ট—বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের খোলা আকাশের নিচে বসে গল্প করা, সন্ধ্যার বাতাসে হারিয়ে যাওয়া হাসির শব্দ, তোমার হাত ধরে প্রথম কোরিয়ান ভাষার ‘사랑해’ (আমি তোমাকে ভালোবাসি) শোনা। তখন মনে হয়েছিল, ভাষা আলাদা হলেও হৃদয়ের বোঝাপড়া কখনো বাধা পায় না।
তুমি বলেছিলে, একদিন তুমি আমার সঙ্গে বাংলাদেশে আসবে। হয়তো সেটা ছিল মৃদু হাসির ছলে বলা কথা, অথবা হয়তো তোমার হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা এক অনুচ্চারিত স্বপ্ন। আমি জানি না। আজ এত বছর পর, যখন আমি কোরিয়ার আকাশের নিচে তোমার ছায়া খুঁজি না, তখনও হৃদয়ের গহীনে তোমার নাম একধরনের মিষ্টি ব্যথার মতো থেকে যায়। হয়তো তুমি এখনো লেখো, হয়তো তোমার কলম থেকে একদিন বেরিয়ে আসবে এমন কোনো গল্প, যেখানে আমার প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যাবে।
আমি চাই, তুমি তোমার স্বপ্নগুলো পূরণ করো, তুমি তোমার কল্পনার জগতে নতুন নতুন গল্প আঁকো। হয়তো আমরা কখনো আর দেখা করবো না, কিন্তু জানবে, আমার লেখার প্রতিটি শব্দে তুমি এক অনন্ত ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকবে।
হা-রিন, যেখানে থাকো, ভালো থেকো।
আমাদের জীবনে কিছু কিছু মানুষ আসে, যারা হয়তো চিরকাল আমাদের পাশে থাকে না, কিন্তু হৃদয়ের এক কোণে স্থায়ী হয়ে যায়। সময়ের পরিক্রমায় জীবন অনেক কিছু বদলে দেয়, কিন্তু কিছু স্মৃতি কখনো পুরনো হয় না। এই গল্পটা আমার জীবনের এক অসমাপ্ত অধ্যায়ের, এক হা-রিন (하린) নামের মেয়ের, যার হাসিতে ছিল সূর্যের আলো, যার কথায় ছিল কবিতার সুর, যার চোখে ছিল এক গভীর মায়া। প্রথম দেখা—এক অজানা আকর্ষণ আমি তখন কোরিয়ার গোয়াংজু বিশ্ববিদ্যালয় (Gwangju University) -এ আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলনের অনুষ্ঠানের অংশবিশেষ একটি
একটি সেমিনারে
অংশ নিতে
গিয়েছিলাম। লেখালেখির সুবাদে পৃথিবীর অনেক দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে, কিন্তু কোরিয়ার এই সম্মেলনটি ছিল বিশেষ। কারণ এখানেই আমি পরিচিত হয়েছিলাম হা-রিন নামের সেই অনন্য সুন্দরীর সাথে। সে ছিল ইংরেজি সাহিত্যের এমএ ফাইনালের ছাত্রী, একজন প্রতিভাবান লেখিকা। কেবল কোরিয়ায় নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও তার লেখা আলোচিত হয়েছিল। সে ছিল স্বপ্নবাজ, সাহসী, স্বাধীনচেতা।
প্রথম পরিচয়ের দিন থেকেই তার মধ্যে একটা অদ্ভুত আকর্ষণ খুঁজে পেয়েছিলাম। তার কথা বলার ভঙ্গি, তার মিষ্টি হাসি, তার কৌতূহলী দৃষ্টি—সবকিছুই ছিল মনে রাখার মতো।
কথা বলার একপর্যায়ে সে জানতে চাইল—
“বাংলাদেশ কেমন?”
আমি তাকে নদী, পাহাড়, সাগরের গল্প বললাম। কক্সবাজারের নির্জন সমুদ্রসৈকতের কথা বললাম, সুন্দরবনের কথা বললাম। সে মুগ্ধ হয়ে শুনছিল, তার চোখে ছিল বিস্ময়।
সে বলল, “আমি তোমার দেশ দেখতে চাই!” আমি হেসে বললাম, “তাহলে চলো একদিন!” তখনো বুঝিনি, সে কথার মধ্যে ছিল এক নিখাদ সত্যের ইঙ্গিত।
ভাষার খেলায় ভালোবাসা
হা-রিন খুব আগ্রহী হয়ে বাংলা শিখতে শুরু করল।
একদিন আমি তাকে বললাম—
“বাংলায় বলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি!”
সে কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে ধীরে ধীরে উচ্চারণ করল—
“আমি… তোমাকে…
ভালোবাসি!”
তারপর লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল, তারপর বলল—
“আমি তোমার সাথে বাংলাদেশ যাবো!”
আমি তখনো ভেবেছিলাম, সে হয়তো মজা করছে। কিন্তু তার চোখের গভীরতা বলছিল, সে যা বলছে, সেটা একেবারে হৃদয়ের গভীর থেকে আসা সত্য। সে আমাকে কোরিয়ান ভাষায় শিখিয়ে দিল—
“사랑(Saranghae)” যার অর্থ, “আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
আমি একদিন বললাম
“হা-রিন, তুমি অসাধরণ সুন্দরী!” সে হাসল, বলল—
“তুমি শুধু আমার রূপ দেখে মনে রাখবে?”
আমি বললাম—
“না, আমি তোমাকে মনে রাখব তোমার প্রতিটি শব্দের জন্য, তোমার মায়াবী চাহনির জন্য, তোমার হৃদয়ের উষ্ণতার জন্য।” সে চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। বিশেষ সন্ধ্যা—হাতের স্পর্শ
একদিন সন্ধ্যায় আমরা ক্যাম্পাসের পার্কে বসে ছিলাম। চারপাশে হালকা ঠান্ডা বাতাস, গাছের পাতায় শীতল স্পর্শ, আলো-আঁধারের খেলা।
হঠাৎ সে আমার হাত ধরে ফেলল। আমি বিস্মিত হয়ে তার দিকে তাকালাম।
সে বলল—
“তুমি কি কখনো বাংলাদেশে আমাকে হাত ধরে হাঁটতে দেবে?” আমি অবাক হয়ে বললাম—”তুমি কি সত্যি আসতে চাও?” সে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল—
“আমি যদি আসি, তুমি কি আমাকে স্বাগত জানাবে?”
আমি কিছু বলিনি, শুধু তার হাতটা একটু শক্ত করে ধরলাম।
ভালোবাসার স্বীকারোক্তি
সম্মেলনের শেষ দিন, বিদায়ের আগে সে আমাকে বলল—
“তোমার তো ভিসা তিন মাসের, তুমি কিছুদিন থেকে যাও! আমি তোমার সাথে বাংলাদেশ যাবো!”
আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম, বললাম—
“আমি আবার কোরিয়ায় আসব, কথা দিচ্ছি!”সে বিশ্বাস করল। তার চোখে ছিল এক গভীর প্রত্যাশা। কিন্তু আমি প্রতিশ্রুতি রাখতে পারিনি।
আজ ১৩ বছর পর, সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে।
আমি জানি না, হা-রিন এখন কেমন আছে, কোথায় আছে।
সে কি এখনো লেখে? তার স্বপ্ন কি পূরণ হয়েছে? সে কি এখনো মনে রেখেছে সেই বাংলা শব্দগুলো, যেগুলো আমি তাকে শিখিয়েছিলাম?
আমি চাই, সে একদিন নোবেল পুরস্কার জিতুক, সে বিশ্বের দরবারে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখুক।
হা-রিন, তুমি যদি কোথাও থেকে এই লেখা পড়ো, জেনো—
আমি তোমাকে ভুলে যাইনি।তুমি যেখানে আছো, ভালো থেকো।
তোমার সেই হাসিটা ধরে রেখো, ঠিক যেভাবে আমি তোমার মুখে দেখেছিলাম।
তোমার জন্য আমার মনের এক কোণে আজও একটা জায়গা রয়ে গেছে…
사랑해, 하린! (ভালোবাসি, হা-রিন!)
লেখকঃ সদস্য পেন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে সেন্টার,
যুগ্ম সম্পাদক-দৈনিক ভোরের আওয়াজ ওThe Daily banner,
এবং টেলিভিশন উপস্থাপক।