আজকের দিনটি আমার জীবনের একটি স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকলো। ঢাকার ধানমন্ডিতে আজ ডা. মাজহারুল হকের সাথে দেখা হলো। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় একজন বিখ্যাত লিভার বিশেষজ্ঞ। তাঁর পরিচয় শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয় – তিনি বাংলাদেশের সন্তান, দেশের খ্যাতিমান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. ফজলুল হকের পুত্র। সারা বিশ্বের তিনজন লিভার বিশেষজ্ঞ বাঙালি চিকিৎসকের মধ্যে তিনি একজন। আজকের দেখা ও চিকিৎসা আমার জন্য বিশেষ কিছু। ডা. মাজহারুল হক সাধারণত বাংলাদেশে রোগী দেখেন না। কিন্তু তিনি কয়েক দিনের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে এসেছেন মা-বাবার সাথে সময় কাটাতে। বাবার অনুরোধে তিনি আমাকে এক ঘণ্টার বেশি সময় দিয়ে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে চিকিৎসা করেছেন। আমি তার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। একটি বছরের গল্প – বেঁচে থাকার লড়াই আজকের দিনটি শুধু ডাক্তার দেখানোর দিন নয়, এটি আমার দ্বিতীয় জীবনের বার্ষিকী। ঠিক এক বছর আগে, আজকের এই দিনে, আমার লিভার নিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল। চট্টগ্রামের বিভিন্ন লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া আমার বাঁচার কোনো উপায় নেই। চিকিৎসার দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
সেই সময় আশার আলো হয়ে সামনে এসেছিলেন অধ্যাপক ডা. ফজলুল হক। তিনি আমার অবস্থা দেখে বলেছিলেন, “আমি একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, কিন্তু আমার ছেলে লিভার নিয়ে কাজ করে। আমি তার সাথে কথা বলবো।” তারপর শুরু হলো এক অনন্য অধ্যায়। অস্ট্রেলিয়ায় থাকা ডা. মাজহারুল হক বাবার অনুরোধে দেশে ফিরে এলেন। আমার জন্য সময় বের করলেন, এবং তার চিকিৎসাতেই আজ আমি সুস্থ। কোনো ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়াই, আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে আছি। দেশের চিকিৎসকদের প্রতি একটি বার্তা ডা. মাজহারুল হকের সাথে এই অভিজ্ঞতা আমাকে ভাবিয়েছে। দেশের চিকিৎসকরা যদি একটু বেশি মানবিক হন, রোগীর প্রতি সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে আসেন, তাহলে কত প্রাণ বাঁচতে পারে!
বিদেশে গিয়ে একজন চিকিৎসক কীভাবে আরও মানবিক হয়ে ওঠেন, কীভাবে রোগীর প্রতি নিবেদিত থাকেন, তার উজ্জ্বল উদাহরণ হলেন ডা. মাজহারুল হক। বিদেশের অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও মানবিক করে তুলেছে – সেই মানবিকতার ছোঁয়া আমি নিজেই পেয়েছি।
একজন চিকিৎসকের প্রতি আজীবনের ঋণ
আমি জানি, ডা. মাজহারুল হকের মতো চিকিৎসক পাওয়া সহজ নয়। তিনি আমার জীবন রক্ষা করেছেন, এবং আমি তার প্রতি আজীবন ঋণী হয়ে থাকবো। হয়তো তিনি না থাকলে, আজকের এই দিনটি আমার মৃত্যু দিবস হিসেবে গণ্য হতো। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি সুস্থ আছি।
সব কিছুর মালিক মহান আল্লাহ। তাঁর ইচ্ছাতেই আমি এই চিকিৎসকের সন্ধান পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। আমিন।