একসময় গাঁজা সেবন ও বিক্রি এবং হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের নাম ব্যবহার করে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকা চিহ্নিত সন্ত্রাসী কপিল, এখন আলোচনায় এসেছে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ছাত্র জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে অস্ত্র হাতে সক্রিয় থাকা এই ব্যক্তি হঠাৎ নাটকীয়ভাবে নিজেকে বিএনপি সমর্থক সাজিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আদালতে একটি কাল্পনিক হামলার মামলা করে পুরো শহর এবং প্রশাসনিক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
মামলার পেছনের ঘটনা
কপিল দাবি করেছেন, গত ৪ আগস্ট চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় তার ওপর হামলা হয়েছে। অথচ, সেদিন তাকে ছাত্র জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে কাজী দেউরী, ওয়াসা, এবং বহদ্দারহাটের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র হাতে দেখা গেছে। এসব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, আদালতে মিথ্যা অভিযোগ এনে তিনি মামলাটি সামনে আনেন। তবে আদালত মামলাটি সরাসরি আমলে না নিয়ে পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
কপিলের অপরাধজীবন
কপিলের নামে মাদক, চাঁদাবাজি, এবং ছিনতাইসহ বহু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। রিয়াজ উদ্দিন বাজার ও আশপাশের এলাকায় তার অপরাধের রাজত্ব গড়ে উঠেছিল। নিয়মিত ইয়াবা ও গাঁজা সেবন এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর কারণে কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ওসি জাহিদুল কবির, এসআই মুমিন এবং এসআই মৃণাল তাকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই তিনি এই মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।
ছাত্র জনতার আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র? যে আন্দোলন শেখ হাসিনা সরকারের সময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল, সেই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি গোষ্ঠী মিথ্যা মামলার মাধ্যমে অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কপিলের মামলাটি এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, যিনি একসময় কপিলের গুরু হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিও তার এই আচরণে হতবাক। সামাজিক মাধ্যমে বাবর লিখেছেন, “কপিলের এই নাটকীয় পরিবর্তন এবং মিথ্যা মামলার পদক্ষেপ তার পুরোনো চরিত্রের চেয়েও বেশি বিভ্রান্তিকর।” মামলার পর প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া কপিলের দায়ের করা মামলাটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন এবং প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র জনতার আন্দোলনে ব্যবহার করা অস্ত্র উদ্ধার এবং এই মিথ্যা মামলার পেছনের প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবি উঠেছে। কী হতে পারে পরবর্তী পদক্ষেপ?
প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, কপিলের বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জমে থাকা পুরোনো মামলাগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, তার সঙ্গে জড়িত অন্য অপরাধীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় কপিলের নাটকীয় পরিবর্তন এবং ছাত্র জনতার আন্দোলনকে লক্ষ্য করে মিথ্যা মামলা দায়ের করার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সাধারণ মানুষও কপিলের বিচার দাবি করছে। দৈনিক ভোরের আওয়াজ, সকালের সময় এবং The Daily Banner-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। তবে- কপিলের মামলা এবং তার পেছনের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে– মোঃ আফছার কফিল: অপরাধমূলক কার্যকলাপ ও গ্রেফতারের বিশদ বিবরণ ব্যক্তিগত তথ্য নাম: মোঃ আফছার কফিল পিতার নাম: জেবল হোসেন মাতার নাম: শাহাজান বেগম, সেই অবিবাহিত সমূহ: ১. বর্তমান ঠিকানা: ইউনাইটেড বোডিং, নন্দন কানন (২নং গলি), কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম।
৩. পুলিশকে প্রদত্ত ঠিকানা: নজুমিয়া লেইন, ৪নং গলি, পাথরঘাটা, কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম।
৪. স্থায়ী ঠিকানা: গফ্ফার চেয়ারম্যানের বাড়ি, মধ্যম বারখাইন, ওয়ার্ড নং-০৬, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।
অপরাধমূলক কার্যকলাপ
মোঃ আফছার কফিলের বিরুদ্ধে অবৈধ মাদক ব্যবসা এবং অস্ত্র ব্যবহারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাকে এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধী চক্রের সক্রিয় সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রেফতার ও মামলার বিবরণ ১. গ্রেফতারের তারিখ,
১৪ আগস্ট ২০২৩: আনোয়ারা থানার জিডি নং-৬১৫ এর ভিত্তিতে বারখাইন থেকে গ্রেফতার। সময়: সকাল ৬:১৫
ধারা: চলমান অপরাধ তদন্ত।
১৫ নভেম্বর ২০১৭: কোতোয়ালী থানার এফআইআর নং-৪৩/৮৯১ এর ভিত্তিতে গ্রেফতার।
সময়: সকাল ৯:৩০
ধারা: ৩৯৯/৪০২ পেনাল কোড, ১৮৬০। মামলার বিবরণ ১. এফআইআর নং-৪৩/৮৯১ (কোতোয়ালী থানা):
তারিখ: ১৫ নভেম্বর, ২০১৭
ধারা: ৩৯৯/৪০২ পেনাল কোড, ১৮৬০। অভিযোগ: চুরি এবং অপরাধ সংঘটনের প্রস্তুতি।
২. এফআইআর নং-৪৪/৮৯২ (কোতোয়ালী থানা):
তারিখ: ১৫ নভেম্বর, ২০১৭
ধারা: ১৯(১) অস্ত্র আইন, ১৮৭৮।
অভিযোগ: অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার।
৩. এফআইআর নং-৬২ (কোতোয়ালী থানা):
তারিখ: ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬
ধারা: ৭(ক)/১৯(১)। অভিযোগ: অস্ত্র রাখার অপরাধ। ৪. জিডি নং-৬১৫ (আনোয়ারা থানা): তারিখ: ১৪ আগস্ট, ২০২৩
ধারা: মাদক এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রম।
তদন্ত ও আদালতের কার্যক্রম
১. পুলিশি তদন্ত:
২০১৬ এবং ২০১৭ সালের মামলায় অভিযুক্ত নিয়মিত তদন্তাধীন ছিলেন।
মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
২০২৩ সালের গ্রেফতারের সময় বারখাইন এলাকায় তার অবৈধ কার্যকলাপের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়। ২. আদালতে উপস্থাপিত তথ্য: অভিযুক্তের বিভিন্ন ঠিকানায় অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। মামলার এজাহারে সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং নথি সংযুক্ত রয়েছে। অপরাধমূলক কার্যকলাপের প্রভাব আফছার কফিলের মাদক ব্যবসা এবং অস্ত্র চোরাচালানের মাধ্যমে স্থানীয় শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করেছে। তার কার্যকলাপ স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করেছে। মো. আফছার কফিল একজন পরিচিত মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। সেই অন্যজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ মূলত নিজের অপরাধ আড়াল করার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে এবং প্রকৃত অপরাধীদের সুরক্ষা দেয়। তদন্ত সঠিকভাবে পরিচালনা করে মিথ্যা মামলার আসল উদ্দেশ্য উদঘাটন করা প্রয়োজন।