পুলিশ কি জনতার নাকি ক্ষমতার?
এই প্রশ্ন আজ বাংলাদেশের মানুষের মনকে ঘিরে রেখেছে, বিশেষ করে এসআই মিনহাজদের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ সদস্যদের কর্মকাণ্ড দেখে। এসআই মিনহাজ, একজন ক্ষমতার দাপটে অন্ধ পুলিশ অফিসার, যিনি দীর্ঘদিন ধরে বোয়ালখালীতে নানা অনিয়মের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন রক্তচোষা পুলিশ, যার কাজ ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা। তার আচার-আচরণ ছিল এমন যে, নিজেকে তিনি সরকারদলীয় নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতেন এবং তার অপকর্মের জন্য কোনো জবাবদিহিতার সম্মুখীন হননি।
মিনহাজের সাথে সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত এবং কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গভীর সম্পর্ক ছিল। তিনি রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে বিরোধীদের গ্রেফতার করে, ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের ঘুষ আদায় করতেন। তার অত্যাচারের মাত্রা এতটাই ভয়ানক ছিল যে, এলাকার প্রবাসী পরিবার গুলো পর্যন্ত তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল।মিনহাজের মতো পুলিশ অফিসাররা শুধু তাদের ক্ষমতার অপব্যবহারই করেননি, বরং পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থাও ভেঙে দিয়েছেন। জনগণ, যারা পুলিশকে তাদের সুরক্ষার প্রতীক মনে করে, এখন পুলিশি রাজত্বের ভয়াবহতার মুখোমুখি হয়েছে। সাধারণ মানুষ আজ প্রশ্ন করছে, পুলিশের দায়িত্ব কি জনসেবায়, নাকি ক্ষমতার অপব্যবহারে?
আমি বহুবার এসআই মিনহাজের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছি, বিশেষ করে শেখ হাসিনার শাসনামলে চলা আন্দোলন চলাকালীন তার অপকর্মগুলো তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু, এখনো পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মিনহাজ এখনো বোয়ালখালীতে বহাল তবিয়তে থেকে তার পুলিশি রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে, যা জনগণের নিরাপত্তা ও পুলিশের গৌরবময় ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মিনহাজের বিরুদ্ধে জনগণের অভিযোগগুলো এতটাই জোরালো যে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উচিত, এসআই মিনহাজের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কারণ, এমন কর্মকাণ্ডের জন্য শুধুমাত্র মিনহাজ নয়, পুরো পুলিশ বিভাগকেই জনসম্মুখে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
পুলিশের কাজ হলো জনগণের সেবা করা, অথচ এসআই মিনহাজের মতো অফিসারদের কারণে আজ পুলিশই ক্ষমতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এসআই মিনহাজদের মতো কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া না হলে, পুলিশ বাহিনীর প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। বোয়ালখালী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মিনহাজের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে পুলিশি বাহিনীর ভেতরে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তিনি কুখ্যাত হয়ে উঠেছেন। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, তিনি বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তিনি বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঘুম হারাম করে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের ঘুষ আদায় করেছেন।
এসআই মিনহাজের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তার বিরুদ্ধে বহু ভুক্তভোগী সরাসরি থানায় অভিযোগ করেছেন, যা সংবাদমাধ্যমেও উঠে এসেছে। তার প্রধান অপকর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে নগদ টাকা ও নানা উপহার গ্রহণ করা। শুধু নগদ টাকাই নয়, মাছ, মাংস, সবজি—এমনকি ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীও ঘুষ হিসেবে আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। তার এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আগে থেকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও, তিনি এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।
বিশেষ করে, আন্দোলন চলাকালে এসআই মিনহাজ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের রাতের আঁধারে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসতেন এবং তাদেরকে মুক্তি দিতে মোটা অংকের ঘুষ আদায় করতেন। তার ভয়ে এলাকার মানুষজন সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকত। মসজিদের ইমাম সাহেবেরও রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেত, কারণ এসআই মিনহাজ মাঝরাতে ইমাম সাহেবকে গ্রেফতার করার হুমকি দিতেন।এলাকায় তার গ্রেফতার বাণিজ্য ছিল সর্বাধিক আলোচিত। বিভিন্ন সময় তিনি এলাকার প্রভাবশালী সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের সাথে মিলে সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন। এসআই মিনহাজের কর্মকাণ্ডের সাথে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চোর, ডাকাত, এমনকি মাদক ব্যবসায়ীরাও যুক্ত ছিল। তাদের সাথে মিলে তিনি জায়গা দখল থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি পর্যন্ত সব ধরনের অপকর্ম চালাতেন।একজন ভুক্তভোগী, শামসুল আলম, জানিয়েছেন যে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনকালে দিদার নামের এক যুবলীগ নেতা এসআই মিনহাজকে ব্যবহার করে তাকে গ্রেফতারের হুমকি দেন এবং তার বাড়িতে হামলা করানোর চেষ্টা করেন। শামসুল আলমকে তখন নগদ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয়, এমনকি মাছ-মাংস এবং সবজির মতো সামগ্রীও দিতে হয় এসআই মিনহাজকে। এ ঘটনা শামসুল আলমের জীবনকে চরম বিপদে ফেলে দেয় এবং তিনি শেষমেশ বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
এসআই মিনহাজের বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগের পরও তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ভুক্তভোগীদের মতে, তিনি কোনো অদৃশ্য ক্ষমতার বলে এখনো সেকেন্ড অফিসারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এলাকাবাসী তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “যেসব পুলিশ সদস্য সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছে এবং অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।”
এসআই মিনহাজের বিরুদ্ধে অভিযোগের মাত্রা এতই গুরুতর যে, তার কর্মকাণ্ড শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেনি, বরং পুলিশের গৌরবময় ইতিহাসকেও কলঙ্কিত করেছে। তার বিরুদ্ধে উঠা এসব অভিযোগ শুধু বোয়ালখালী থানা নয়, বরং পুরো অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। এলাকার মানুষের বিশ্বাস, যদি এসআই মিনহাজের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে পুলিশের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে পড়বে। তার মতো অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, নইলে এ ধরনের অপকর্ম থামানো যাবে না। এলাকার জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এসে পড়ে—এসআই মিনহাজের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে জনগণের মধ্যে যে অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে তা দূর করা। জনগণের দাবি, পুলিশ প্রশাসনের ভেতরে থেকে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশের গৌরবময় ঐতিহ্য রক্ষা করা উচিত।
…