খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার যোগিপোল ইউনিয়ন পরিষদের কারচুপির ভোটে চেয়ারম্যান মোঃ সাজ্জাদুর রহমান লিংকন ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর, খান জাহান আলি থানা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং খুলনা মহানগর যুবলীগের প্রভাবশালী সদস্য হওয়ায় বিগত সরকারের সময়ে নানা অনিয়মে জড়িত ছিল। ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি সকল বরাদ্দ নিজ ইচ্ছামতো ভাগ বাটোয়ারা ও লুটপাট করত। আরও অভিযোগ রয়েছে জুলাই আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের সরাসরি সে বিরোধিতা করেছিল এবং আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর বিভিন্ন রকম নির্যাতন করেছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি সদস্য জানান, বিগত সরকারের বিশেষ মহলে তার সখ্যতা থাকায় বিশেষ বরাদ্দের নামে প্রকল্প এনে নামমাত্র কাজ করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ছাত্র জনতার ভয়ে নিজ এলাকা থেকে পলায়ন করে। পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ রেখে দূর থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কাগজপত্র আদান প্রদান করে চালাতেন ইউনিয়ন পরিষদ। তখন ইউনিয়ন পরিষদের সেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়ে ।১ বছেরেরও বেশি সময় ধরে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থিত না থেকে স্বপদে বহাল রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান লিংকন এ বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে বলেও বেশ কিছু ইউপি সদস্য জানান।এমতবস্থায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগিপোল ইউনিয়ন পরিষদটিতে ২২/০১/২০২৫ তারিখ থেকে প্রশাসক নিয়োগ দেয় জেলা প্রশাসক। এরপর মোঃ সাজ্জাদুর রহমান লিংকন উচ্চ আদালতের মাধ্যমে রিট করে। রিট পিটিশনের আদেশ মোতাবেক জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ১৩ই এপ্রিল ২০২৫ আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সহ স্ব পদে পুনর্বহাল করে লিংকনকে। কিন্তু তিনি ইউনিয়ন পরিষদের অনুপস্থিত থেকে একইভাবে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কাগজপত্র সই স্বাক্ষর আদান-প্রদান করে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করছেন। সরেজমিনে ইউনিয়ন পরিষদটিতে গিয়ে দেখা যায় সেবা গ্রহীতাদের দীর্ঘ লাইন, তারা জানান চেয়ারম্যান পরিষদে উপস্থিত না থাকায় আমরা সময় মত আমাদের জন্ম নিবন্ধন মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারেশকায়েম সনদসহ সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা পাচ্ছি না। ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালত কার্যক্রম চেয়ারম্যান না থাকায় এক বছরেরও বেশি সময় বন্ধ রয়েছে। ফলে স্থানীয় বিবাদ ও সমস্যা সমাধানে আদালতের সরণাপন্ন হতে হচ্ছে। এতে জনসাধারণের অর্থ খরচ সহ ভোগান্তি বাড়ছে। চেয়ারম্যানের বেশ কিছু প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, ভেঙে পড়েছে গাইডওয়াল ড্রেনের গাঁথুনি সহ একাধিক প্রকল্পের কাজ। সার্বিক বিষয়ে চেয়ারম্যান মোঃ সাজ্জাদুর রহমান লিংকন এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, যোগিপোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সাজ্জাদুর রহমান লিংকন দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা প্রশাসক নিয়োগ করেছিলাম কিন্তু মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক তিনি ৪ মাস পূর্বে আবারো স্ব -পদে বহাল রয়েছেন। বর্তমানে তার অনুপস্থিতির কারণে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই ।যেহেতু আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। আমি তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি যাতে তিনি উপস্থিত থেকে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অন্যথায় হাইকোর্টের নির্দেশনার মেয়াদ শেষ হলে আবারও যোগিপোল ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে।
যোগিপোল ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসমা বেগম বলেন, চেয়ারম্যান পরিষদে আসে না তার উপস্থিতির স্বাক্ষর সহ সকল রেজুলেশন ও কাগজপত্র কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে স্বাক্ষর করে পাঠান। গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন যেহেতু চেয়ারম্যান উপস্থিত নাই সেহেতু গ্রাম আদালতের কার্যক্রম ১ বছর যাবৎ স্থগিত রয়েছে।