চট্টগ্রামের গরু চোর সিন্ডিকেটের মাফিয়া ডন ওয়াসীম: ঈদের আগে গ্রেফতার না হলে ঝরে যাবে গরীবের ঈদ”
চট্টগ্রামের রাউজান থানার চত্বরে আটক একটি চোরাই গরুর ট্রাক, তার সামনে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে কয়েকটি গরু। প্রথম দৃষ্টিতে দৃশ্যটি সাধারণ মনে হলেও, এর পেছনে লুকিয়ে আছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের একটি ভয়াবহ গরু চোর সিন্ডিকেটের ভয়াল ছায়া— যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কুখ্যাত গরু চোর ওয়াসীম।
বোয়ালখালীর চরনদ্বীপের বিতর্কিত মোনাফ চেয়ারম্যানের ভাই আব্দু চোবানের ছেলে ওয়াসীম কোনো সাধারণ অপরাধী নয়। গোটা দক্ষিণ চট্টগ্রামে গরু চুরির যত সিন্ডিকেট রয়েছে, তার নেপথ্যে ওয়াসীমের ছায়া অনিবার্য। দীর্ঘদিন ধরে রাউজানের পাঁচখাইনের কুখ্যাত গরু চোর খালেক মেম্বারের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে সে গড়ে তুলেছে এক শক্তিশালী অপরাধ জগত।
রাঙুনিয়া থেকে চোলাই মদ পরিবহনের সময় সুযোগ বুঝে সরফভাটা পাহাড়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কৃষকের গরু ছিনিয়ে নেওয়া ছিল তার পরিচিত কৌশল। শুধু তাই নয়, ভুক্তভোগীরা জানান, ঈদ এলে এই চক্র আরও হিংস্র হয়ে ওঠে। রাতের আঁধারে গ্রামের খামারে হানা দিয়ে তুলে নেয় প্রস্তুতকৃত কোরবানির গরু। এ যেন ঈদের আগেই গরীবের ঘরে শোকের মাতম।
দৈনিক ভোরের আওয়াজ-এ প্রকাশিত রিপোর্টে ভুক্তভোগীরা কাঁদতে কাঁদতে জানান, সদ্য আটক চোরাই চালানের সাথে ওয়াসীমের সরাসরি জড়িত থাকার অজস্র প্রমাণ রয়েছে। খালেক মেম্বার কয়েক মাস বিদেশে আত্মগোপন করলেও, এখন দেশে ফিরে আবারও ওয়াসীমকে সামনে রেখে গরু চুরির ধারা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনার সরকার পতনের সময় চট্টগ্রাম অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগ নিয়ে এই চক্র শত শত গরু লুটে নেয়।
বিশ্বস্ত সূত্র মতে, ওই সময় খালেক মেম্বারের কাছে যে বিশাল গরুর মজুদ ছিল, তার অধিকাংশ জোগানদাতা ছিল ওয়াসীম। কিন্তু রাজনৈতিক উত্তাল পরিস্থিতিতে সেইসব গরু ছিনতাই হলে চক্রটি বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। আর এখন সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ওয়াসীমকে দিয়ে আবারও গরু চুরি শুরু করেছে খালেক মেম্বার।
ওয়াসীমের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগের শেষ নেই। একাধিকবার গ্রেফতার হলেও রহস্যজনকভাবে ছাড়া পেয়েছে। প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় বারবার আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে গিয়ে সে এখনো চোরাই বাজারের নিয়ন্ত্রক। রাউজান থেকে রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী থেকে সাতকানিয়া— প্রতিটি অঞ্চলে তার অনুগত একাধিক দল সক্রিয়। অস্ত্র, মাদক এবং গরু চুরি— তিনটিই তার অপরাধজগতের স্তম্ভ।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ওয়াসীমের নেতৃত্বে গরু চোর সিন্ডিকেট নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যদি অবিলম্বে এই চক্রকে আইনের আওতায় না আনা হয়, তাহলে অসংখ্য কৃষক, দিনমজুর, এবং নিম্ন আয়ের পরিবার তাদের কোরবানির গরু হারিয়ে পথে বসবে।
প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি— অবিলম্বে ওয়াসীম ও তার পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেফতার করে এই ভয়ংকর সিন্ডিকেট ভেঙে দিন। ঈদের আগে চট্টগ্রামবাসীর ঘুম হারাম হয়ে যাক— তা কখনোই কাম্য নয়।