নামসর্বস্ব স্বঘোষিত সাংবাদিক এবং বোয়ালখালী প্রেসক্লাবের বিতর্কিত একাংশের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম একজন বিশাল সাংবাদিক!এই সাংবাদিক পরিচয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান, লেখা-পড়া ও জ্ঞানের মান যাচ্ছেতাই, গ্রামিন জনপদে তার বিচরণ ঠিক “ যে বনে বাঘ নাই, সেখানে শেয়ালই রাজা”র মত করে।
তিনি এবার জ্ঞান বিলাতে আমার মতো একজন সাধারণ সাংবাদিকের সমালোচনা করে যে পোস্ট দিয়েছে – তা-পড়ে লজ্জিত ও বিস্মৃত হলাম! নামসর্বস্ব সাংবাদিক সিরাজের দেওয়া লেখাটি বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, এটি একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিকের উপযোগী লেখা নয়, এর অর্থ লেখা পড়া না জানলে যা হওয়ার তাই। এতে তথ্যগত অসঙ্গতি, ভাষাগত সমস্যা, গঠনগত ত্রুটি এবং সাংবাদিকতার নৈতিকতা লঙ্ঘনের অনেক দিক রয়েছে। নিচে বিস্তারিতভাবে সমালোচনা তুলে ধরা হলো:
১. ভাষাগত ও গঠনগত ত্রুটি:
ক. অশালীন শব্দের ব্যবহার:
* “স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা”, “নিষিদ্ধ দল” — এগুলো কোনোভাবেই সাংবাদিকতার ভাষা হতে পারে কি? সাংবাদিকতা তথ্যনির্ভর, নিরপেক্ষ ও শালীন ভাষায় হতে হয়। ব্যক্তি আক্রমণমূলক, বিদ্বেষমূলক শব্দ ব্যবহার করলে তা উসকানিমূলক হয়ে পড়ে এবং সাংবাদিকতার বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
খ. প্রচলিত ভাষা, বানান ও বাক্যগঠনে সমস্যা:
* “বলসেন” — কথ্যভাষা, শুদ্ধ রূপ হবে “বলেছেন”/ “উনারা নাকচ করে দিয়েছেন” — ‘উনারা’ এর পরিবর্তে ‘তাঁরা’ ব্যবহার করাই শুদ্ধ, এবং প্রমিত বাংলা অনুসরণ করা উচিত/ “কল দিয়ে দিয়ে সবাইকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন” — বাক্যটি দুর্বল ও অগঠিত। একজন সাংবাদিককে বলিষ্ঠ, সংযত ও পরিস্কার বাক্য গঠন করতে হয়।
গ. তথ্য উপস্থাপনায় অস্পষ্টতা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: “কবরস্থান দখল করে রেখেছিলো” — এটি একটি গুরুতর অভিযোগ, কিন্তু কোনো প্রমাণ বা নিরপেক্ষ উৎসের উল্লেখ নেই/ “ভুয়া কথিত সাংবাদিক” — একজন সাংবাদিকের পক্ষে এভাবে অন্যকে ‘ভুয়া’ বলা অনুচিত যদি না তার প্রমাণ সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়।
২. সাংবাদিকতার নীতিমালার লঙ্ঘন:
ক. একপাক্ষিকতা: লেখাটি পুরোপুরি একপাক্ষিকভাবে লেখা হয়েছে। এতে অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য নেই, কোনো স্বাধীন সূত্র বা প্রমাণ নেই। সাংবাদিকতা মানে হচ্ছে সকল পক্ষের বক্তব্য নিয়ে নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করা।
খ. উসকানি এবং প্রচারমূলক ভাষা: “আওয়ামীলীগের সকল কার্যক্রম রুখে দিন”— এটা একজন সংবাদকর্মীর লেখা নয়, বরং আন্দোলনকারীর ভাষা। সাংবাদিকতা কখনো ‘প্রচার’ বা ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আহ্বান’ হতে পারে না।
৩. তথ্যগত অসঙ্গতি:
ক. প্রমাণহীন তথ্য উপস্থাপন: * কার কাছে অভিযোগ উঠেছে, কী প্রক্রিয়ায় এসিল্যান্ড তালা ভেঙেছে, সেটির কোনো তথ্য নেই।/* ফোন নম্বর প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন; এটি গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে যদি অনুমতি না থাকে।
খ. উল্লেখযোগ্য তথ্যের অভাব: * প্রোগ্রামের কোনো ব্যানার নেই — একথা দাবি করা হলেও প্রমাণ বা ব্যাখ্যা নেই কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
৪. সংশোধন ও উন্নতির পরামর্শ: * শালীন, নিরপেক্ষ ও তথ্যভিত্তিক ভাষা ব্যবহার করুন।/* সব পক্ষের বক্তব্য উপস্থাপন করুন।/* কথ্য বাংলা পরিহার করে প্রমিত বাংলায় লিখুন।/* অভিযোগ থাকলে প্রমাণসহ তুলে ধরুন।/* অশালীন শব্দ, রাজনৈতিক বিদ্বেষ এবং উসকানিমূলক ভাষা বর্জন করুন।
এই লেখাটিতে প্রায় ১৫টির বেশি ভাষাগত ও নীতিগত ত্রুটি আছে। এটি একজন সাংবাদিকের লেখা হিসেবে বিবেচিত নয়। সাংবাদিকতা মানে হলো দায়িত্ব, শালীনতা, তথ্যনিষ্ঠতা ও ন্যায়ের ভারসাম্য। সাংবাদিকের কলম যদি বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, তবে তার প্রভাব সমাজে নেতিবাচক হয় এবং সাংবাদিক সমাজের অপুরনিয় ক্ষতি হয়।
শিক্ষা যখন পিয়নের কাছ থেকেও পাওয়া যায়: সিরাজুল ইসলামের উদ্দেশ্যে কিছু কথা-আমি সাধারণত কারও ব্যক্তিগত বক্তব্য বা আক্রমণের জবাবে কিছু লিখি না। কারণ, আমি বিশ্বাস করি লেখকের কলমের সম্মান বজায় রাখা দায়িত্বের বিষয়। তবে বোয়ালখালীর এক সাংবাদিকের বক্তব্য পড়ে সত্যিই দুঃখ পেয়েছি। বিশেষ করে যিনি নিজেকে প্রেসক্লাবের সভাপতি বলে পরিচয় দেন এবং অন্যকে “ভুয়া সাংবাদিক” আখ্যা দেন, তার থেকে অন্ততপক্ষে ন্যূনতম শিষ্টতা ও পঠন-পাঠনের পরিচয় আশা করা যায়।
আমি তাকে একটাই অনুরোধ: সাংবাদিকদের নিয়ে আমার লেখা বই ‘সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কথা’ একবার সময় নিয়ে পড়ুন। বইটি তার কাছে সম্ভবত আছে-যদি তার কাছে না থাকে চাইলেই আমি এক কপি পাঠিয়ে দিতে পারি। তাতে কিছু শিখতে পারলে, আমাদের সাংবাদিকতার পরিবেশের জন্যই তা মঙ্গলজনক হবে।
আমার অফিসে কিছু চা সরবরাহকারী পিয়ন আছেন—সত্যিকার অর্থে তারা অনেক সংবেদনশীলতা ও বোধ নিয়ে পত্রিকা পড়ে, খবর বিশ্লেষণ করে এবং ভালো লিখতে জানে-আমি নিশ্চিত, সময় পেলে তারাও সিরাজ সাহেবকে কিছু সাংবাদিকতা ও সংবাদপাঠ, সংবাদ বিশ্লেষণ ও নৈতিকতা শেখাতে পারবেন।
আমি নিজেকে আজও শিখতে থাকা এক কর্মী হিসেবে দেখি। সিরাজ সাহেবের মতো বড় মাপের সাংবাদিক আমি কখনোই হতে পারিনি। তবে শিখতে চাই। তবে শর্ত একটাই—শিক্ষাটি যেন হয় সত্য, ন্যায়ের পথ ধরে।
আমি যখন দক্ষিণ জেলার সভাপতি এমপি মোসলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে লেখা লিখেছি তখন সিরাজরা মোসলেম উদ্দিনের তোষামোদিতে ব্যস্ত- আজকে তারা রাতারাতি ফ্যাসিবাদ বিরোধী রুপধারণ করেছে-আজকে আমি বেশি কিছু লিখছি না। সময় হলে বিস্তারিত লিখব—ইনশাআল্লাহ।