1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
“বাঁশখালীতে ৪ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফের মাদক কারবারি আটক: ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ” হোমনায় মহান মে দিবস উপলক্ষে  বিএনপির বর্ণাঢ্য র‍্যালি  ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর শুভ আগমনে বোয়ালখালীবাসীর পক্ষ থেকে হাজী মোহাম্মদ আলম ববির শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা পুলিশ পরিচয়ে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের ৮ জনকে বেঁধে ছয়টি দোকান ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে মালামাল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা রোদেলা দুপুরে পারকি সৈকতের বালুকাবেলায় কলম যোদ্ধারা,স্মৃতিময় এক মে দিবস! ড. মোহাম্মদ ইউনূসের দক্ষিণ চট্টগ্রাম সফর সিএমপি কমিশনার ও পাঁচ ওসি পেলেন আইজিপি ব্যাজ সাহস, দক্ষতা ও মানবিক পুলিশিংয়ের স্বীকৃতি আইজি পি ব্যাজ পেলেন ওসি আফতাব উদ্দিন চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের সূচনালগ্নের সাহসী পুরুষ ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন! দৃষ্টি আকর্ষণ

মুজিবনগর সরকার: স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা-লিপি

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৩৪ বার পড়া হয়েছে

১৭ এপ্রিল ১৯৭১: বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে জন্ম নেয় যে সরকার, তা এক পরাধীন জাতির মুক্তির ঘোষণাপত্র
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৭ এপ্রিল একটি চিরস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে মেহেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার, যা বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশের অস্তিত্ব, নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক কাঠামোকে দৃশ্যমান করে তোলে। দিনটি ইতিহাসে খচিত হয় “মুজিবনগর দিবস” নামে, এবং বৈদ্যনাথতলা হয়ে ওঠে ‘মুজিবনগর’। এটি কেবল একটি সরকারের গঠনের দিন নয়; এটি ছিল একটি জাতির আত্মপরিচয় ও স্বাধীনতার স্বীকৃতি আদায়ের প্রথম সাংবিধানিক পদক্ষেপ।
পটভূমি: অগ্নিঝরা মার্চ-১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বলে ওঠেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুরো দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে অসহযোগ আন্দোলন। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না পেরে ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালিয়ে শুরু করে নির্মম গণহত্যা। ঢাকাসহ সারা দেশে ঘটে নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি জ্বালানো ও বাঙালিদের নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে সাধারণ মানুষ, ছাত্র, শ্রমিক, পুলিশ, ইপিআর—সবার সম্মিলিত চেষ্টায় শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। এমন এক ভয়াবহ প্রেক্ষাপটে স্বাধীন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রয়োজন হয় একটি সংগঠিত ও স্বীকৃত সরকার গঠনের। সেই প্রয়োজন পূরণেই ১৭ এপ্রিল গঠিত হয় অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার—মুজিবনগর সরকার। মুজিবনগর সরকারের গঠন: স্বাধীনতার কাঠামো নির্মাণ-
ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে যে শপথ অনুষ্ঠান হয়, তাতে ঘোষিত হয়—শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। যেহেতু বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি, তাই তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী (Acting President) হিসেবে শপথ নেন। তাজউদ্দীন আহমদ হন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে। এছাড়াও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন— খন্দকার মোশতাক আহমদ (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী (অর্থমন্ত্রী) এ এইচ এম কামরুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী) কর্নেল এম এ জি ওসমানী (সেনাপ্রধান) কর্নেল আব্দুর রব (চিফ অব স্টাফ) অধ্যাপক ইউসুফ আলী স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং এই শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই বৈদ্যনাথতলা নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মুজিবনগর’—জাতির পিতার নামে। আয়োজন: গোপন প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা- তাজউদ্দীন আহমদ ও তাঁর সহযোদ্ধারা ৩০ মার্চ চুয়াডাঙ্গা হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং কলকাতায় গিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে মুজিবনগর সরকার গঠনের পরিকল্পনা করেন। প্রথমে চুয়াডাঙ্গা শহরে শপথ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থাকলেও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে শেষ মুহূর্তে স্থান পরিবর্তন করে বৈদ্যনাথতলার নির্জন আমবাগানকে বেছে নেওয়া হয়।
ভারতের বিএসএফ শিবির এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তায় নির্মিত হয় অস্থায়ী মঞ্চ, তৈরি করা হয় সামরিক নিরাপত্তা, স্থাপন করা হয় অস্থায়ী মিডিয়া কেন্দ্র। ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তত্ত্বাবধানে এই আয়োজন সম্পন্ন হয়। বিশ্ব মিডিয়ার অন্তত ৬০ জন সাংবাদিক এই অনুষ্ঠান কাভার করতে উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্ক টালি অন্যতম। বহু ছবি, প্রতিবেদন ও ফিল্ম এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরে। এই শপথ অনুষ্ঠান ছিল বিশ্বকে জানান দেওয়া যে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং তার রয়েছে বৈধ নেতৃত্ব ও কাঠামো।
ঘোষণা ও বার্তা: স্বাধীনতার সংবিধানিক ভিত্তি- শপথ অনুষ্ঠানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন—
“আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য যুদ্ধ করছি। পাকিস্তানি হানাদারদের এক ইঞ্চি মাটিও আমরা তাদের জন্য ছেড়ে দেব না। আমাদের রাষ্ট্রপতি আজ পাকিস্তানে বন্দি, কিন্তু তাঁর আদর্শ আমাদের মাঝে জাগ্রত।”
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন—
“আজ বৈদ্যনাথতলা স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী। আজ থেকে এই স্থান হবে ‘মুজিবনগর’। আমরা বাংলাদেশের জনগণের সরকার হিসেবে কাজ করব। জাতিসংঘ ও বিশ্ববাসীর কাছে আমরা স্বীকৃতি দাবি করছি।” তিনি আরও বলেন, “এই সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করবে, বিশ্বকে বোঝাবে যে আমরা কেবল সশস্ত্র নয়, রাজনৈতিকভাবেও স্বাধীন রাষ্ট্র।” তাৎপর্য: একটি জাতির আত্মপ্রকাশ-
মুজিবনগর সরকারের ঘোষণা একটি স্বাধীন জাতির কাঠামোগত আত্মপ্রকাশ। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ কেবল একটি প্রতিরোধ-আন্দোলন হিসেবে নয়, বরং একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পরিচালিত যুদ্ধ হিসেবে বিশ্ব দরবারে স্থান করে নেয়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠিত রূপ, রাজনৈতিক পরিচয়, সামরিক পরিকল্পনা—সবকিছুই এই সরকারের মাধ্যমে স্পষ্ট ও কার্যকর হয়। এটি একদিকে ছিল প্রতিরোধের রূপায়ণ, অন্যদিকে ছিল গণতন্ত্র ও নেতৃত্বের সংহতি। এতে বোঝা যায়—বঙ্গবন্ধু কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি একটি জাতির প্রতীক। তাঁর অনুপস্থিতিতেও তাঁর নামে সরকার গঠন, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত গড়ে তোলা—এই সবই প্রমাণ করে বাঙালির সংগ্রাম ছিল আদর্শনির্ভর ও গণভিত্তিক।
উপসংহার: স্মরণ ও শিক্ষা- আজও ১৭ এপ্রিল আমাদের শিক্ষা দেয়, কীভাবে সুনির্বাচিত নেতৃত্ব, ঐক্য, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও কৌশলের মাধ্যমে একটি জাতি জন্ম নিতে পারে। মুজিবনগর সরকার ছিল সেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, যার হাত ধরেই নয় মাস পর ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করে। মুজিবনগর দিবস কেবল অতীতের গৌরবগাথা নয়—এটি ভবিষ্যতের পথনির্দেশনা। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা কেবল অর্জনের নয়, তা রক্ষা ও সুরক্ষার সংগ্রামও।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট