1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৪৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
গাইবান্ধায় দুলাভাইকে হত্যার হুমকি শ্যালক ও শশুর শাশুড়ির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ ‎পুলিশের প্রতিবেদনে উঠে এলো রংপুরের হিন্দু পাড়ার হামলার ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শ্রীমঙ্গল থেকে ভুলে পঞ্চগড়ে, পরিবারকে ফিরে পেতে চায় ছোট্ট রিয়াদ নবীনগর পৌর শাখার ৫, ৬, ৭,নং ওয়ার্ডের কৃষক দলের উদ্যোগে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত খুলনায়  অবৈধ পলিথিন বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জুলাই যোদ্ধাদের সংবর্ধনা ভোটকেন্দ্রভিত্তিক সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসে জামায়াতের কৌশলী সম্মেলন: গলাচিপার উলানিয়ায় নেতাদের দৃঢ় অবস্থান টানা চতুর্থবারের মতো শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক ইনস্পেক্টর নির্বাচিত হলেন লোহাগাড়ার গর্ব মোঃ হাসানুজ্জামান হায়দার পঞ্চগড়ে জুলাই হত্যার বিচার ও জুলাই সনদ ঘোষণার দাবিতে শিবিরের জুলাই দ্রোহ  হাটহাজারীতে ‘জাগৃতি’র উদ্যোগে ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প,শাহ আনোয়ার (রহঃ) ফাউন্ডেশন

ড. মুহাম্মদ ইউনুস: মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এক আন্তর্জাতিক কণ্ঠস্বর

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল শুধু একটি ভূখণ্ডের স্বাধীনতার জন্য লড়াই নয়; এটি ছিল নিপীড়িত জাতির আত্মপরিচয়ের সংগ্রাম। এই সংগ্রামের অগ্রভাগে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার নেতৃত্বে বাঙালিরা এক কঠিন পথ পাড়ি দেয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকেই প্রত্যক্ষভাবে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, আবার কেউ কেউ বিশ্বের দরবারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনুস ছিলেন এমনই একজন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
শিক্ষক, গবেষক ও অর্থনীতিবিদ পরিচয়ের বাইরেও ড. ইউনুস মুক্তিযুদ্ধের একজন নীরব সংগঠক ছিলেন। পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন, অর্থনৈতিক সহায়তা সংগ্রহ, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণা চালানো—এসব ক্ষেত্রে তার অবদান অসামান্য।
শুরুটা কোথা থেকে?
১৯৭১ সালে, যখন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে, তখন ড. মুহাম্মদ ইউনুস যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় এবং তারপর পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহা—এসবই তাকে গভীরভাবে আলোড়িত করেছিল। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন ঢাকায় গণহত্যা শুরু করে, তখন বিশ্ববাসী এ বিষয়ে তেমন কিছু জানত না। কিন্তু প্রবাসী বাঙালিরা, বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ সমাজ, বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নানাভাবে সক্রিয় হন। ড. ইউনুসও তাদেরই একজন ছিলেন, যিনি তার বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি ও আন্তর্জাতিক সংযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য জনমত গঠনে উদ্যোগী হন।
পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রচারণা-
ড. ইউনুস উপলব্ধি করেছিলেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম চাবিকাঠি ছিল বৈশ্বিক সমর্থন অর্জন করা। তাই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ শুরু করেন।
তিনি বিভিন্ন মার্কিন গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লেখালেখি শুরু করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, টাইম ম্যাগাজিন-এর মতো শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার খবর তুলে ধরতে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন।
মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছে পাকিস্তানি নিপীড়নের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেন।
জাতিসংঘ, হোয়াইট হাউস ও অন্যান্য কূটনৈতিক মহলে বাংলাদেশের স্বাধিকার ও মুক্তিযুদ্ধের নৈতিক বৈধতা প্রতিষ্ঠার জন্য চিঠিপত্র পাঠান এবং সাক্ষাৎকার দেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার-এর কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ ও মানবিক সহায়তা সংগ্রহ-
মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু জনমত গঠনে থেমে থাকেননি ড. ইউনুস, বরং সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ ও মানবিক সহায়তা সংগ্রহেও যুক্ত হন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নেন। সেই অর্থ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের কর্মকাণ্ডে সহায়তা করা হয়।
যুদ্ধকালে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও লজিস্টিক সাপোর্ট পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা- ড. ইউনুসের আরেকটি বড় ভূমিকা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও বঙ্গবন্ধু তখনো পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন।
ড. ইউনুস তখন যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলে প্রচারণা চালিয়ে শেখ মুজিবের মুক্তির পক্ষে জনমত তৈরি করেন।
তিনি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে প্রচারণা চালান যাতে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
স্বাধীনতা পরবর্তী পুনর্গঠন ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে অবদান- স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গঠনের কাজ শুরু হয়। সেই সময় অর্থনীতির পুনর্গঠন ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। ড. ইউনুস তখন দেশে ফিরে আসেন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে তার গবেষণা কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেন।
ক্ষুদ্রঋণ ধারণার সূচনা করেন, যা পরবর্তীতে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্নেরই একটি অর্থনৈতিক মডেল।
যুদ্ধবিধ্বস্ত জনগণের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য কাজ করেন এবং তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য মাইক্রোক্রেডিট প্রোগ্রাম চালু করেন।
বঙ্গবন্ধুর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দারিদ্র্য দূরীকরণে নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে তার অটল বিশ্বাস-
ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের মধ্যে এক গভীর মিল ছিল। দুজনেই বিশ্বাস করতেন বাঙালির আত্মনির্ভরতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির ওপরই প্রকৃত স্বাধীনতা নির্ভর করে। বঙ্গবন্ধু যেমন রাজনৈতিক মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন, ড. ইউনুস তেমনি অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে গেছেন।
তিনি সবসময় বাঙালির স্বাধিকার, দারিদ্র্যমুক্ত অর্থনীতি এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা এবং পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে তার অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা কেবল তার ব্যক্তিগত আদর্শের বহিঃপ্রকাশ নয়, এটি ছিল তার জাতির প্রতি এক অসামান্য দায়িত্ববোধের প্রতিফলন। তিনি কেবল অর্থনীতির গবেষক ছিলেন না; তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার এক আন্তর্জাতিক কণ্ঠস্বর, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের এক নীরব সহযোদ্ধা। তার নিরলস প্রচেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তার অবিচল আনুগত্য, এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী পুনর্গঠনে তার অবদান ইতিহাসের পাতায় চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট