1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
“বাঁশখালীতে ৪ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফের মাদক কারবারি আটক: ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ” হোমনায় মহান মে দিবস উপলক্ষে  বিএনপির বর্ণাঢ্য র‍্যালি  ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর শুভ আগমনে বোয়ালখালীবাসীর পক্ষ থেকে হাজী মোহাম্মদ আলম ববির শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা পুলিশ পরিচয়ে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের ৮ জনকে বেঁধে ছয়টি দোকান ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে মালামাল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা রোদেলা দুপুরে পারকি সৈকতের বালুকাবেলায় কলম যোদ্ধারা,স্মৃতিময় এক মে দিবস! ড. মোহাম্মদ ইউনূসের দক্ষিণ চট্টগ্রাম সফর সিএমপি কমিশনার ও পাঁচ ওসি পেলেন আইজিপি ব্যাজ সাহস, দক্ষতা ও মানবিক পুলিশিংয়ের স্বীকৃতি আইজি পি ব্যাজ পেলেন ওসি আফতাব উদ্দিন চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের সূচনালগ্নের সাহসী পুরুষ ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন! দৃষ্টি আকর্ষণ

নজরুল সংগীত ও লুনার মুগ্ধতা: এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৫৩ বার পড়া হয়েছে

“আমি গাই, আমি গান গাই, আমি গানেরই গান গাই। আমি গান শোনায়, আমি কাঁদি, আমি হেসে কুটি কুটি হই; আমি যাহা অনুভব করি, তাই গানে গানে বলি।”
— কাজী নজরুল ইসলাম

সকালের স্নিগ্ধ আলোয় ঘেরা আমার প্রিয় বাসা। দেয়ালের গা ঘেঁষে সাজানো বইয়ের তাক, পাশে রাখা পুরনো হারমোনিয়াম, আর লাল-সাদা কারুকার্যময় সোফা যেন এক উষ্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আমি বসে আছি প্রিয় সংগীতজ্ঞ ফরিদা আপার পাশে, যিনি নজরুল সংগীতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আজকের দিনটি বিশেষ, কারণ ফরিদা আপা এসেছেন আমাকে গান শেখাতে, নজরুলের কালজয়ী সুরের জগতে প্রবেশ করানোর জন্য।
এমন মুহূর্তে, আমার প্রিয় সঙ্গী লুনা—আমার ঘরের স্নেহের বেড়ালটি—তার তুলতুলে সাদা লোম আর গভীর দৃষ্টি নিয়ে পাশে এসে দাঁড়ালো। সে শুধু আমার পোষা প্রাণী নয়, পরিবারেরই এক সদস্য। আমার দুই মেয়ে তাকে যেন তাদের সন্তান হিসেবেই দেখে। লুনার প্রতিটি আচরণে এক অভূতপূর্ব ভদ্রতা ও কৌতূহল প্রকাশ পায়। প্রতিদিন সকালে যখন আমি হাঁটতে বের হই, সে আমার সাথে সাথে দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়, যতক্ষণ না আমি ফিরে আসি, সে অপেক্ষায় থাকে। এক অদ্ভুত নিবেদন তার চরিত্রে, যেন সে সত্যিই আমাদের পরিবারের এক ভালোবাসার বন্ধন।
আজকের সকালটি কিন্তু ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফরিদা আপা তার হারমোনিয়াম খুললেন, তারপর যখন তিনি নজরুলের গান গাইতে শুরু করলেন, আমি তো মুগ্ধ হয়েই গেলাম, কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো—আমার স্নেহের লুনাও যেন সংগীতের মোহে হারিয়ে গেল! তার চোখজোড়া বিস্ময়ে চকচক করছিল, সে যেন প্রতিটি সুর হৃদয় দিয়ে অনুভব করছিল। প্রথমে টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে, তারপর একসময় সে নরম সোফায় এসে বসলো, যেন গান শুনতে তার মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। ফরিদা আপাও এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ। তিনি গান গাইতে গাইতে আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলেন—”দেখুন, আপনার বেড়ালটি নজরুল সংগীতের প্রতি কী গভীর আসক্তি দেখাচ্ছে!” আমি নিজেও বিস্ময়ে হতবাক, সত্যিই কি লুনা গান বুঝতে পারছে? ফরিদা আপা হাসতে হাসতে বললেন, “আমরা অনেকেই হয়তো নজরুলের গান ঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারছি না, কিন্তু এই অবুঝ প্রাণীটি সংগীতের সৌন্দর্য অনুভব করতে পারছে।”
নজরুল সংগীতের শক্তি ও প্রভাব– জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংগীত শুধু সুরের বাহন নয়, এটি একধরনের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। নজরুলের গান মুক্তির গান, বিদ্রোহের গান, প্রেমের গান এবং সর্বোপরি এক আত্মার আহ্বান। তার প্রতিটি গানে এক শক্তিশালী আবেগ লুকিয়ে আছে, যা শুনলেই হৃদয় আন্দোলিত হয়। নজরুল সংগীতের এই শক্তির উৎস কী? তিনি তার গানে যে শব্দ চয়ন করেছেন, তাতে রয়েছে গভীর সাহিত্যিক মূল্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ দার্শনিক ভাবনা। “কারার ঐ লৌহ কপাট” থেকে শুরু করে “আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন” পর্যন্ত প্রতিটি গানে তিনি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন। তাই হয়তো লুনার মতো অবোধ প্রাণীও সংগীতের সেই গভীরতার প্রতি আকৃষ্ট হয়।
ফরিদা করিম: নজরুল সংগীতের এক অনন্য সাধক–আমাদের প্রিয় ফরিদা আপা শুধু একজন সংগীতশিল্পী নন, তিনি নজরুল সংগীত গবেষণায়ও এক অনন্য প্রতিভা। তার পরিবার নজরুল চর্চার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার বাবা ছিলেন কাজী নজরুল ইসলামের এক ঘনিষ্ঠজন। এই সংযোগের কারণেই ফরিদা করিম ১৯৭২ সালে ধানমন্ডির নজরুল ভবনে, স্বয়ং কবির সামনে বসে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কবি তখন মানসিকভাবে অসুস্থ থাকলেও তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়েছিল অশ্রু। এতে প্রমাণ হয়, নজরুল সংগীতের শক্তি কতটা প্রবল যে, এমনকি বাকরুদ্ধ কবির মনেও তা গভীরভাবে সাড়া ফেলেছিল।
ফরিদা আপা আমাকে বলছিলেন, “নজরুল সংগীত শুধুমাত্র গান নয়, এটি একধরনের এবাদত, একধরনের আত্মশুদ্ধির মাধ্যম। এর প্রতিটি সুরে, প্রতিটি কথায় এক অদ্ভুত শক্তি রয়েছে, যা মানুষের আত্মাকে ছুঁয়ে যায়।” নজরুল সংগীতের প্রভাব: মানুষের বাইরেও? সাধারণত আমরা মনে করি সংগীত শুধু মানুষের জন্য। কিন্তু আজকের অভিজ্ঞতা আমাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করলো—নজরুলের গান কি প্রাণীদের মনেও প্রভাব ফেলে? লুনার প্রতিক্রিয়া দেখে আমার মনে হলো, হয়তো সংগীতের প্রতি ভালোবাসা শুধুমাত্র মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি এক সার্বজনীন অনুভূতি।বিজ্ঞানীদের মতে, পশুদেরও একটি নির্দিষ্ট ধরনের সংগীতবোধ রয়েছে। অনেকে বলেন, পশুরা উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির শব্দের প্রতি সংবেদনশীল, আবার অনেকে বলেন, কিছু কিছু পশু মানবিক আবেগ বুঝতে সক্ষম হয়। যদি তাই হয়, তবে নজরুলের গান, যা মানুষের আবেগকে এত গভীরভাবে নাড়া দেয়, তা কেন লুনার মতো প্রাণীর হৃদয় ছুঁয়ে যাবে না? সংগীত ও আধ্যাত্মিকতা-নজরুলের গান শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয়, এটি আত্মার উন্নতির এক সেতুবন্ধন। ইসলামী গান হোক, শ্যামাসংগীত হোক, কিংবা দেশাত্মবোধক গান—প্রতিটি গানে এক আধ্যাত্মিক আবেদন রয়েছে। ফরিদা আপা যখন কালজয়ী গান-গাইলেন, তখন আমার চোখ বন্ধ হয়ে গেলো, যেন এক নতুন জগতে প্রবেশ করলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে লুনা আমার কোলে এসে শুয়ে পড়লো, যেন সেও সেই আধ্যাত্মিক অনুভূতিতে অংশগ্রহণ করছে।
এই অভিজ্ঞতা আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শেখালো—সংগীত কি শুধুই শোনার বিষয়, নাকি এটি হৃদয়ে অনুভব করারও কিছু? নজরুল সংগীত কি শুধুমাত্র বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাখ্যার মাধ্যমে বোঝার বিষয়, নাকি এটি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়? যদি একটি অবোধ প্রাণী লুনা সংগীতের সৌন্দর্য বুঝতে পারে, তবে আমরা কেন পারবো না? উপসংহার: নজরুল সংগীতের চিরকালীন আবেদন–আমার আজকের অভিজ্ঞতা আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে—নজরুল সংগীত শুধু মানুষের নয়, এটি প্রকৃতিরও। এটি প্রাণের গান, এটি আত্মার গান, এটি এক চিরন্তন শক্তির প্রতীক। ফরিদা করিমের মতো সংগীতজ্ঞরা যখন নজরুলের সুর ছড়িয়ে দেন, তখন শুধু মানুষ নয়, প্রকৃতিও যেন মুগ্ধ হয়ে শোনে। আমার প্রিয় বেড়াল লুনা আজ আমাকে নতুন এক উপলব্ধির দিকে ঠেলে দিলো—সংগীতের শক্তি সর্বজনীন, এটি ভাষার সীমানা ছাড়িয়ে যায়, এটি মানুষের গণ্ডি ভেঙে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়। নজরুলের গান তাই চিরন্তন, তার আবেদন কখনো কমবে না। আজ আমি যেমন মুগ্ধ হয়েছি, তেমনি আমার স্নেহের লুনাও।
এই ভাবনাগুলো নিয়ে আমি বসে থাকলাম, ফরিদা আপার সুর এখনো আমার কানে বাজছে, আর লুনা আমার পাশে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছে। হয়তো স্বপ্নেও সে নজরুলের সুরের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে…লেখা শেষ করছি- নজরুলের শেষ গানের কথা দিয়ে- নজরুলের জীবদ্দশায় রচিত শেষ গানটি ছিল “এসো হে শান্তি, এসো হে প্রিয়”। এই গানটি ১৯৪২ সালে তিনি অসুস্থ হওয়ার আগে রচনা করেন। এরপর বাকশক্তি হারিয়ে ফেলার কারণে তিনি আর কোনো গান লিখতে পারেননি। এটি মূলত এক আকুতি, এক শান্তির আহ্বান, যা তার সৃজনশীল জীবনের অন্তিম সুর হয়ে আছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট