জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করায় আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে জাতীয় কবি নজরুল মঞ্চ, চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে অভিনন্দনলিপি প্রদান করা হয়েছে। আজ ৩০ জানুয়ারি সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের মাধ্যমে এই অভিনন্দনলিপি অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে প্রেরণ করা হয়।
অভিনন্দনলিপি গ্রহণকালে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, “জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতির আত্মার প্রতিচ্ছবি। তাঁর সাহিত্য, গান, এবং সংগ্রামী চেতনা বাঙালি জাতির জন্য এক অমূল্য সম্পদ। তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে জাতি তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাল। এটি আমাদের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায়। এই উদ্যোগ শুধু নজরুল প্রেমীদের নয়, সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য গৌরবের।” তিনি আরো বলেন, “কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রেম, সাম্যবাদ এবং মানবতার যে সুর বেজেছে, তা অনন্তকাল বাঙালি জাতিকে পথ দেখাবে। এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নজরুলের চেতনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।” জাতীয় কবি নজরুল মঞ্চের সভাপতি ফরিদা করিম এবং সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে এ অভিনন্দনলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা একে এম ওসমান গনি, নুরুল জামাল, কাজী জাহাঙ্গীর আলম, বিজয় বিপ্লব,
মোহাম্মদ ইব্রাহিমসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। সভাপতি ফরিদা করিম বলেন, “জাতীয় কবি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বাঙালি জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। তাঁর সৃজনশীলতা, সংগ্রামী জীবন, এবং সাহিত্যিক অবদান অনন্তকাল ধরে জাতিকে অনুপ্রেরণা দেবে। আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের প্রতি কৃতজ্ঞ, যাঁরা এই স্বীকৃতির মাধ্যমে নজরুলের অবদানকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিয়েছেন।”
সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “বাঙালির আত্মার প্রতিচ্ছবি নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনে সবসময় প্রাসঙ্গিক। তাঁর প্রতি জাতির এই সম্মান জানানো সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি শুধু কবিকে নয়, আমাদের সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের গৌরবময় ইতিহাসকেও রাষ্ট্রীয়ভাবে সমৃদ্ধ করেছে। এই স্বীকৃতি নজরুলপ্রেমীদের পাশাপাশি পুরো জাতির জন্য গৌরবের।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, “জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কেবল বিদ্রোহী কবি নন, তিনি সাম্যবাদ, মানবতা, এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক অনন্য প্রতীক। তাঁর রচনাগুলো আমাদের জীবনে সাম্য, প্রেম, ও বিদ্রোহের যে শিক্ষা দেয়, তা আমাদের পথচলায় অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর মতোই নজরুল এই জাতির চেতনার অঙ্গ। আজকের এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তাঁকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার এক অনন্য উদাহরণ। অভিনন্দনলিপি প্রদানের সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কবি নজরুল মঞ্চের উপদেষ্টা একে এম ওসমান গনি, নুরুল জামাল, কাজী জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ ইব্রাহিমসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁরা সবাই নজরুলের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, “এই স্বীকৃতি বাঙালি জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। জাতীয় কবির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে বাঙালি জাতির সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি এই রাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।”
এই অভিনন্দনলিপি প্রেরণের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে সংগঠনটির অঙ্গীকার এবং তাঁর প্রতি জাতির শ্রদ্ধার গভীরতাই প্রকাশ পেল। অনুষ্ঠান শেষে জাতীয় কবি নজরুল মঞ্চ, চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে জাতির উদ্দেশ্যে নজরুলের চেতনাকে আরও বিস্তৃতভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়।