1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০১:০৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
“বাঁশখালীতে ৪ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফের মাদক কারবারি আটক: ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ” হোমনায় মহান মে দিবস উপলক্ষে  বিএনপির বর্ণাঢ্য র‍্যালি  ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর শুভ আগমনে বোয়ালখালীবাসীর পক্ষ থেকে হাজী মোহাম্মদ আলম ববির শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা পুলিশ পরিচয়ে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের ৮ জনকে বেঁধে ছয়টি দোকান ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে মালামাল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা রোদেলা দুপুরে পারকি সৈকতের বালুকাবেলায় কলম যোদ্ধারা,স্মৃতিময় এক মে দিবস! ড. মোহাম্মদ ইউনূসের দক্ষিণ চট্টগ্রাম সফর সিএমপি কমিশনার ও পাঁচ ওসি পেলেন আইজিপি ব্যাজ সাহস, দক্ষতা ও মানবিক পুলিশিংয়ের স্বীকৃতি আইজি পি ব্যাজ পেলেন ওসি আফতাব উদ্দিন চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের সূচনালগ্নের সাহসী পুরুষ ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন! দৃষ্টি আকর্ষণ

“১০ মাঘ-সুফিবাদের প্রাণপুরুষের প্রধান দিবস: মাইজভান্ডার দরবারে এক মহিমান্বিত আয়োজন

মো. কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৬৪ বার পড়া হয়েছে

১০ মাঘ, ২৪ জানুয়ারি, মাইজভান্ডার দরবারে এক পবিত্র দিন হিসেবে উদযাপিত হবে। এই দিনটি শুধুমাত্র একটি তারিখ নয়, এটি অলি কুলের শিরোমণি, উপমহাদেশের মাইজভান্ডারি তরিকার প্রবক্তা এবং মহাসাধক হজরত গাউসুল আজম আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারির স্মৃতিকে ধারণ করার এক ঐতিহাসিক দিন। তার পবিত্র জীবন, আধ্যাত্মিক দীক্ষা এবং মানবকল্যাণে নিবেদিত অবদান অনুপ্রেরণার এক চিরন্তন উৎস। প্রতি বছর এই দিনটি মাইজভান্ডারি তরিকার অনুসারীদের জন্য এক মহিমান্বিত উৎসবে রূপ নেয়। পৃথিবীর নানাপ্রান্ত থেকে অসংখ্য ভক্ত, অনুসারী, এবং আধ্যাত্মিক সাধনার পথপ্রেমীরা সমবেত হন মাইজভান্ডার দরবারে। দরবারের পরিবেশ পূর্ণ হয় এক অপার্থিব আধ্যাত্মিক অনুভূতিতে, যেখানে একসাথে উচ্চারিত হয় জিকির, দোয়া এবং কৃতজ্ঞতার সুর।
এই দিনটি শুধু মাইজভান্ডার দরবারের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এটি বিশ্বাস, ভালোবাসা এবং আত্মিক উন্নয়নের মাধ্যমে মানবতার কল্যাণে কাজ করার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে। মাইজভান্ডারি তরিকার আদর্শ এবং শিক্ষা আজও মানুষের হৃদয়ে জ্বলন্ত এক আলোকবর্তিকা হয়ে রয়েছে।
এই প্রধান দিবসে, হজরত গাউসুল আজম আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারির জীবন ও কর্মকে স্মরণ করে দোয়া, মিলাদ, ওয়াজ মাহফিল এবং আধ্যাত্মিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। দরবারে আসা প্রতিটি ভক্ত তার আধ্যাত্মিক শক্তি, দীক্ষা, এবং শিক্ষার ছোঁয়া পেতে সমবেত হবেন। এই দিনটি সকলের জন্য আধ্যাত্মিক শুদ্ধতার এবং নতুনভাবে নিজেকে গড়ার এক অপূর্ব সুযোগ হিসেবে চিহ্নিত। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই পবিত্র দিনে মাইজভান্ডারের প্রাঙ্গণে সমবেত হই এবং মহান এই অলির জীবন ও আদর্শের আলোকে নিজেদের জীবন আলোকিত করি। এই দিন হোক আমাদের জন্য আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং মানবতার পথে এক নবজাগরণের সূচনা-
ইতিহাস সমৃদ্ধ জনপদ চট্টগ্রাম। যুগে যুগে অসংখ্য সুফী সাধক পদার্পন করেছেন, জন্মগ্রহণ করেছেন চট্টগ্রামের মাটিতে। তাঁদের পবিত্র পদ স্পর্শে চট্টগ্রামের শ্যামল উর্বর মাটি হয়েছে ধন্য। সুফীদের কারণে চট্টগ্রামের বিশেষ কিছু অঞ্চল সারা বিশ্বের কাছে পরিচিতি পেয়েছে, সম্মানিত হয়েছে। মাইজভান্ডার শরীফ তেমনি এক পবিত্র স্থান। অসংখ্য সুফী সাধকের পূণ্যভূমি এই মাইজভান্ডার গ্রামে ১২৪৪ হিজরী মোতাবেক ১৮২৬ খ্রীষ্টাব্দ, বাংলা ১২৩৩ এবং ১১৮৮ মাঘ সনের ১ মাঘ রোজ বুধবার বেলা দ্বিপ্রহরে জন্মগ্রহণ করেন হযরত শাহ সুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (রং)। তার পিতা হযরত সৈয়দ মতিউল্লাহ ও মাতা সৈয়দা খায়েরুন্নেছা বিবি।
জন্মের সপ্তম দিবসে নবজাতকের নাম রাখার জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং ছুন্নতী প্রথায় তার আকিকা করা হয়। সকলের উপস্থিতিতে পিতা সৈয়দ মতিউল্লাহ বললেন, তার ছেলের নাম আহমদ উল্লাহ রাখার জন্য তিনি স্বপ্নে হযরত নবী করিম (সঃ) কর্তৃক আদীষ্ট হয়েছেন। উপস্থিত সকলে খুশী মনে এই নাম কবুল করেন।
বংশ পরিচয়ঃবিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ)-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হামান (রাঃ) ও ইমাম হোসেন (রাঃ) এর পরবর্তী বংশধরগণ কালক্রমে আরব দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সুদূর রাগদাদ ও পরবর্তীকালে ভারত ইপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সৈয়দ বংশোদ্ভূত এই সকল পূণ্যবান ব্যক্তিত্ব দিল্লী সাম্রাজ্য অধীন বিভিন্ন শাহী মসজিদের ইমাম, জনগণের হেদায়ত কাজ সম্পাদন ও কাজী পদে নিযুক্ত থাকেন। এই ধারার একজন সৈয়দ হামিদ উদ্দিন বাংলার তৎকালীন রাজধানী গৌড় নগরীতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। মোগল-পাঠানের লড়াইয়ে গৌড় নগরী কার্যৎ জনশূণ্য হয়ে পড়ে। নগরীর সম্ভ্রন্তÍ ব্যক্তিগণ ভাগ্যান্বেষণে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে। সৈয়দগ হামিদ উদ্দিন গৌড়ী ১৫৭৫ খ্রীস্টাব্দে গৌড় ত্যাগ করে চট্টগ্রামে চলে আসেন এবং পটিয়া উপজেলার অন্তর্গত কাঞ্চন নগরে বসতি স্থাপন করেন। তার নামানুসারে হামিদ গাঁও নামে একটি গ্রাম আছে কাঞ্চন নগরে। সৈয়দ হামিদ উদ্দিন এখানে মসজিদে ইমামতি উপলক্ষে এসে সেখানে বসতি স্থাপন করেন। তাঁর পুত্র ছৈয়দ আতাউল্লাহ এবং তৎপুত্র সৈয়দ তৈয়ব উল্লাহ উক্ত আজিম নগরের মসজিদে ইমামতি করেন। সৈয়দ তৈয়ব উল্লাহ’র তিন পুত্র সন্তানের অন্যতম সৈয়দ মতিউল্লাহ মাইভান্ডার গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তিনি ছিলেন একজন উঁচুদরের আলেম। তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সৈয়দা খায়রুন্নেছা বিবির সাথে। তাদেরই ঔরসজাত সন্তান হযরত শাহ সুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ। যিনি বিশ্বঅলি গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী নামে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। মাইজভান্ডরী তরীকার তিনিই প্রবর্তক।
শিক্ষা: হযরত শাহ সুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (রঃ) এর বয়স চার বছর চার মাস পূর্ণ হলে পিতা-মাতা তাকে গ্রামের মন্তবে ভর্তি করে দেন। তিনি বাল্যকাল থেকে চালচলন, কথা বার্তায় গ্রামের অন্য ছেলেদের চাইতে ব্যতিক্রর্মী ছিলেন। সাতবছর বয়সে তিনি নামাজ শিক্ষা করেন এওবং বালক বয়সেই নিয়মিত জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করতেন। মার্জিত ব্যবহার ও ধর্মানুরাগের কারণে অল্প বয়সেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তীতে ফটিকছড়ির আজিমপুর গ্রামের মাওলানা মোহাম্মদ শফি সাহেবের নিকট তার আরবী শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (রঃ) উচ্চ শিক্ষার্থে কলকাতা গমন করেন। ১২৬০ হিজরী সনে তিনি ভারতবর্ষের বিঃখ্যাত দীনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং আট বছর এই মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহণ করেন। মাদ্রাসা আলিয়ায় অধ্যয়নকালে সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (রঃ) সেখানকার অলি-বুজুর্গদের মাজার জেয়ারত করতেন ও অনেক রাত সেখানে ইবাদতে কাটান। কলকাতা মাদ্রাসা আলিয়ায় প্রতিটি ক্লাশের পরিক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং মাসিক বৃত্তি, পুরস্কার ও সম্মান অর্জন করেন। ১২৬৮ হিজরী সনে তিনি শিক্ষা সমাপ্ত করেন। কোরআন-হাদীস, তফসীর- ফেকাহ প্রভৃতি শাস্ত্রে জ্ঞান অর্জন করেন এবং আরবী, ফার্সী, উর্দু ও মাতৃভাষা বাংলায় তিনি বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করেন। কর্মজীবনঃ কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ রশিক্ষা সমাপ্তির পরের বছর অর্থাৎ ১২৬৯ হিজরী সনে সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (রঃ)যশোর জেলায় বিচার বিভাগে কাজী পদে যোগদান করেন। সেখানে এক বছর বিশেষ দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। বিচার ব্যবস্থায় অনেক সময় কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হতো। মানুষকে শাস্তি প্রদানের পর তার মন নরম হয়ে যেতো। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন এই চাকরি আর করবেননা। অবশেষে ১২৭০ হিজরীতে কাজীর চাকরি পরিত্যাগ করে কলকাতা চলে যান এবং মেটিয়াবুরুজে মুনশী বু আলী (রঃ) এর মাদ্রাসায় মোদারেছের পদে যোগদান করেন। এখানে তিনি কোরআন- হাদিস শিক্ষা দিতেন এবং ইবাদত ও কঠোর সাধনায় দিন অতিবাহিত করতেন মেটিয়াবুরুজে শিক্ষকতায় এক বছরকাল অতিবাহিত করেন। এখানে থাকা কালে তিনি বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা করতেন, কিছু দিনের মধ্যে সমগ্র কলকাতা শহর ও আশপাশে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। পাল্কিযোগে তাঁকে বিভিন্ন মাহফিলে নিয়ে যাওয়া হতো।
বেলায়েত অর্জন ঃ কলকাতা মেটিয়াবুরুজে মুনশীবু আলী সাহেবের মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার সময় একদিন পাল্কিযোগে শাহ সুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (রঃ) কোথাও ওয়াজ মাহফিলে যাচ্ছিলেন। কাছাকাছি স্থানে হযরত বড় পীর সাহেব মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ)- এর বংশধর ও কাদেরীয়া তরীকার খেলাফত প্রাপ্ত অলি হযরত শেখ সৈয়দ আবু শাহমা মোহাম্মদ ছালেহ কাদেরী লাহোরী (রঃ) এর খানকাহ্ শরীফ অবস্থিত ছিলো। জোহরের নামাজ আদয় শেষে হযরত আবু শাহমা তার ভক্তমন্ডলীকে নিয়ে ধর্মালোচনায় ব্যস্ত ছিলেন, এ সময় হযরত শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (রঃ) পাল্কি যোগে খানকাহ্ সংলগ্ন স্থান অতিক্রম করছিলেন। তৎক্ষনাতদ হযরত আবু শাহমা (রঃ) তার শিষ্য শাহ এনায়েত উল্লাহকে নির্দেশ করেন হ[যরত সুফী আহমদ উল্লাহ (রঃ) কে নিয়ে আসতে। খবর পেয়ে হযরত আহমদ উল্লাহ (রঃ) হযরত আবু শাহমা ছালেহ লাহোরী (রঃ) এর সাথে সাক্ষাতের জন্য আসেন। উভয়ে ছুন্নতি কায়দায় করমর্দন ও কোলাকুলি করেন। বিশিষ্ট সুফী হযরত আবু শাহমা ছালেহ লাহোরী (রঃ) তার অর্জিত লাল (উত্তরাধিকার ) অর্পণ করার জন্য উপযুক্ত শিষ্যের সন্ধানে ছিলেন, অবশেষে শিষ্য মিলে গেলো। তিনি হযরত শাহ সুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (রঃ) কে খেলাফত প্রদান করলেন। তিনি শিষ্যকে বাবুর্চিখানার যাবতীয় খাবার এনে খাওয়ালেন। নিজের সারা জীবনের অর্জিত খোদায়ী নেয়ামত সমস্ত দান করলেন প্রথম সাক্ষাতেই শিষ্য তার পীরের যাবতীয় নেয়ামত ও খোদা- দাদ শক্তি লুটে নিয়ে বিদায় নেন। পরিতৃপ্ত হযরত আবু শাহমা ছালেহ লাহোরী (রঃ) শিষ্যগণকে বলেন- এইবার খোদা আমার মনোবাঞ্চা পূর্ণ করলেন। যার প্রতীক্ষায় ছিলাম, তাকেই আল্লাহতায়ালা এখানে পৌছালেন। সারা জীবনে এই একটি মাত্র লোকের সাথে হাত মিলালাম।
এরপর পীর শিষ্যের নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হতে লাগলো। হযরত ছালেহ লাহোরী (রঃ) এর বড় ভাই হযরত শাহ সুফী সৈয়দ দেলোয়ার আলী পাকবাজ (রঃ) ছিলেন কুতুকে জামান। তিনি সর্বদা খোদাপ্রেমে মত্ত থাকতেন। হযরত ছালেহ লাহোরী (রঃ) কর্তৃক আদ্দীষ্ট হয়ে হযরত সুফী উল্লাহ (রঃ) তার সাথে সাক্ষাত করেন এবং প্রথম সাক্ষাতে পীর সাহেবের অর্জিত খোদাদাদ শক্তি ও বাতেনী নেয়ামতসমূহ হাসিল করেন। পীরের পরিপূর্ণ অনুগ্রহ ও জাহেরী-বাতেনী শক্তি অর্জন করেন। এরপর আরো খোদায়ী নেয়ামতের আশায় হযরত সুফী আহমদ উল্লাহ (রঃ) দিনের অধিকাংশ সময় নফল ইবাদত, জিকির, মোরাকাবা ও মোশাহেদায় নিমগ্ন হয়ে পড়েন। ক্রমে তিনি পানাহার পর্যন্ত ছেড়ে দিতে লাগলেন। তার স্বাস্থ্য ভেংগে পড়ে। ১২৭৩ হিজরী সনে তার শারিরীক অবস্থার আরো অবচনতি হয়। এসময় দুজন বন্ধু কলকাতায় তার সেবা যত্ন করেছিলেন। বন্ধুদ্বয় হলেন মৌলভী জান আলী সুলতানপুরী অন্যজন মৌলভী আবদুল বদি আসকরাবাদী। তারা তাকে বাড়ি পাঠানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে পিতা মৌলভী সৈয়দ মতিউল্লাহ সাহেব ১২৭৫ হিজরী সনের ২৯ আষাঢ় রোজ সোমবার ইন্তেকাল করেন। হযরত পীর সাহেব কেবলার নির্দেশক্রমে এবং দেশের বাড়ি থেকে আগত ভ্রাতা সৈয়দ আবদুল হামিদের সাথে তিনি ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার গ্রামে গিয়ে পৌছেন।
বিবাহ ও পারিবারিক জীবনঃ অল্পদিনের মধ্যে হযরত শাহ সুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (রঃ) সুস্থবোধ করতে লাগলেন। কিন্তু সংসারের প্রতি কোন আকর্ষণবোধ করলেন না। এখানেও তিনি ইবাদত বন্দেগী, মোরাকাবা ও মোশাহেদায় ব্যস্ত থাকলেন। মা সৈয়দা খায়রুন্নেছা বিবি জ্যেষ্ঠ ছেলের সংসারের প্রতি উদাসীনতা দেখে উদ্বিগ্ন হলেন। ভাবলেন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারলে পুত্র সংসারের প্রতি মনোযোগ দেবেন। অবশেষে ১২৭৬ হিজরী সনের বৈশাখ মাসে ৩২ বছর বয়সে আজিমনগর নিবাসী মুন্সী সৈয়দ আফাজ উদ্দিন আহমদের কন্যা সৈয়দা আলফুন্নেছা বিবির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু বিবাহের ছয় মাসের মধ্যে এই বিবি ইন্তেকাল করেন। অতঃপর মায়ের ইচ্ছায় একই গ্রামে সৈয়দা লুৎফন্নেছা বিবির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। মায়ের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে ও হযরত শাহ সুফি সৈয়দ আহম্দ উল্লাহ (রঃ) সংসারে মনোযোগী হতে পারলেন না। বিবাহের দুই বছর পর ১২৭৮ হিজরীতে সৈয়দা বদিউন্নেছা বিবি নামে এক কন্যা সন্তান জন্মে। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সে তিনি মারা যান। এরপর একটি পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করে কিন্তু এটি ও ইহোলোক ত্যাগ করে। ১২৮২ হিজরী সনে (১৮৬৫ খ্রীঃ) সৈয়দ ফয়েজুল হক নামে এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। ১২৮৯ হিজরীতে এক কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করেন নাম রাখা হয় সৈয়দা আনোয়ারান্নেছা। হযরত শাহ সুফী আহমদ উল্লাহ (রঃ) এর একমাত্র পুত্র মৌলভী সৈয়দ ফয়জুল হক সাহেব দুইজন পুত্র সন্তান রেখে ৩৭ বছর বয়সে ১৯০২ সালে পিতার পূর্বেই জান্নাতবাসী হন।
বরাবরের মতো সংসারের প্রতি মনযোগ দিতে মা ও স্ত্রীর সকল চেষ্টা ব্যর্থ হলো কলকাতা থেকে আসার পর প্রথমদিকে দু’বছর বিভিন্ন স্থানে দাওয়াত পেলে ওয়াজ নছিয়ত করতে যেতেন। কিন্তু পরবর্তীতে দাও ছেড়ে দেন। একটানা নয় বছর আল্লাহর প্রেমে এতটা নিমগ্ন হয়ে পড়েন যে সংসারের সাথে তার কোন সম্পর্কই ছিলনা। সংসারের প্রতি ক্রমাগত উদাসীনতা দেখে ভাইগণ হযরতের উপর বিরক্ত হয়ে তাকে পৃথক করে দেন। হযরতের অভাব বাড়াতে থাকে। তিনি ও আল্লাহর উপর ভরসা করে থাকতে লাগলেন। মা ও স্ত্রী এবং পুত্র কন্যা তার সংসারে। কিন্তু আল্লাহ’র কুদরত ও কেরামতি ধারণা করা ও বান্দার সাধ্যের অতীত। ভাইয়েরা যতই তাকে বঞ্চিত করতে লাগলেন, ততই তার সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হতে লাগলো। দূরদূরান্ত থেতে লোকজন যাওয়া আসা করতে লাগলো তার নিকট। দৈনিক আহার্য সামগ্রী ও অর্থ আসতে লাগলো আর হযরত আহমদ উল্লাহ (রঃ) যৎসামান্য নিজের জন্য রেখে বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশিদের মধ্যে বিলি করে দিতে লাগলেন। এসময় হযরত শাহ সুফী আহমদ উল্লাহ (রঃ) এর গর্ভধারিনী মা সৈয়দ খায়রুন্নেছা বিবি ইন্তেকাল করেন। পরবর্তীতে তিনি খোদার প্রতি আরো অনুরক্ত হন।

লেখক: যুগ্ম সম্পাদক- চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান, দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও The Daily banner এবং
টেলিভিশন উপস্থাপক,

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট