ফরিদা হোসেন: সাহিত্যের এক দীপ্ত জ্যোতি
তুমি বাংলার সাহিত্যের নক্ষত্র, তোমার কলমে জাগে বাঙালির মন্ত্র।
কথার জালে বুনেছ তুমি,
জীবনের রূপ, সমাজের ভুমি। তুমি সুরের স্রষ্টা, গানের কারিগর,
তোমার গল্পে মিশে কালের দর্পণ। “রূপকথার দেশ”-এর মায়াবি পথে,
শিশুরা খুঁজেছে স্বপ্নের তটে।
তোমার সৃষ্টির ছোঁয়ায় জাগে আলো, নাট্যমঞ্চে ওঠে চেতনার পালো।
আবৃত্তির সুরে তুমি প্রথমা নারী, কবিতার বুকে এঁকেছো স্বর্গের ছবি।
তোমার কর্মে জাগে নন্দিত স্বপ্ন, তুমি পেনের সভায় উচ্চ মর্যাদার পূর্ণ।
তোমার মতো স্রষ্টা বহন করে শক্তি, বাংলার হৃদয়ে তুমি এক চিরন্তন ভক্তি।
আজ তোমার জন্মদিন, শুভক্ষণ জানাই,
তোমার সৃষ্টিতে জ্বলে আমাদের প্রভাতের তাজাই।
তুমি থাকবে চিরকাল, কালের গহ্বরে, তোমার দীপ্তি ভাসবে চেতনাপ্রবাহে!
আজ একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, নির্মাতা ও সংস্কৃতি জগতের কিংবদন্তি ফরিদা হোসেনের জন্মদিন। ১৯৪৫ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতার মাটিতে জন্ম নেওয়া এই বিরল প্রতিভা শুধু সাহিত্য নয়, শিল্প, সংস্কৃতি, নাট্যকলা এবং শিশুদের জন্য সৃষ্টিশীল কাজে নিজেকে তুলে ধরেছেন অমরত্বের শিখরে।
ফরিদা হোসেনের সাহিত্যকর্ম বহুমাত্রিক। তিনি একাধারে গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, গীতিকার, সুরকার, আবৃত্তিকার এবং সম্পাদক। তার সৃষ্টির মাধুর্য বাংলা সাহিত্যের পটে এক অনন্য রঙ যোগ করেছে। বিটিভিতে তার রচনা ও পরিচালনায় প্রচারিত শিশুদের সিরিজ নাটক “রূপকথার দেশ” তাকে এনে দেয় “রূপকথার যাদুকর” খেতাব। এই নাটক শুধু শিশুদের আনন্দই দেয়নি, তাদের কল্পনাশক্তি ও নৈতিক শিক্ষার বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তার লেখনী শক্তি এবং আবৃত্তি-কৌশল ছিল অসাধারণ। জাতীয় যাদুঘরে তার একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান তাকে দেশের প্রথম মহিলা আবৃত্তিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ এক নতুন ইতিহাস, যা বাংলা সাহিত্যের মুকুটে এক অনন্য রত্ন হয়ে জ্বলজ্বল করে। পেন বাংলাদেশ সংগঠনে তার দীর্ঘ ১৩ বছরের নেতৃত্ব স্মরণীয়। তার তত্ত্বাবধানে পেন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদাপূর্ণ এক সংগঠনে পরিণত হয়। ২০১২ সালে কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব লেখক সম্মেলনে তার সঙ্গে কাটানো সময় আমার জন্য আজও এক অনন্য স্মৃতি। তার উদার মনের আলো সেই সম্মেলনে অন্যদের যেমন অনুপ্রাণিত করেছিল, তেমনি আমাকেও এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছিল।
তিনি শুধু একজন লেখক নন, একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তার শিশুতোষ শর্টফিল্ম “ফ্রেন্ডশিপ”, যা মেক্সিকোতে পেন সম্মেলনে প্রদর্শিত হয়েছিল, শিশুদের জন্য বিশ্বমানের কাজের উদাহরণ। এই শর্টফিল্ম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে গৌরবমণ্ডিত করেছে। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত মাসিক সাহিত্য পত্রিকা “অবিনশ্বর” বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের এক অমূল্য প্ল্যাটফর্ম। আমি নিজেও এই পত্রিকার একজন নিয়মিত লেখক হিসেবে তার স্নেহধন্য হয়েছি। তার অনুপ্রেরণা এবং সুপরামর্শ আজও আমার লেখালেখির পথপ্রদর্শক। ফরিদা হোসেন কেবল লেখক বা নির্মাতা নন, তিনি একজন চিরন্তন শিক্ষক। তার প্রতিটি কাজ, প্রতিটি লেখা পাঠকদের নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। তার লেখায় পাওয়া যায় জীবনের গভীরতা, মানুষের অন্তর্গত সৌন্দর্য আর সমাজের সত্যিকার চিত্র। আজ তার জন্মদিনে, আমি তাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। তার সৃজনশীলতা এবং কর্মপ্রেরণা আমাদের জাতির জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি যেন আরও বহু বছর আমাদের মাঝে থাকেন এবং তার সৃষ্টি আমাদের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকে।
“আপনার সৃষ্টি, আপনার অবদান আমাদের প্রেরণার উৎস। বাংলা সাহিত্য আপনাকে আজীবন স্মরণ করবে।”
শুভ জন্মদিন, ফরিদা হোসেন! আপনার জন্য রইল অজস্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর প্রার্থনা