সময়টা ২০১২ সালের বসন্ত। কোরিয়ার আকাশ জুড়ে তখন চেরিফুলের রাজত্ব। বাতাসে ঘুরে বেড়ায় নরম পাপড়িরা, আর সেই পাপড়ির মতোই একদিন আমার জীবনে উড়ে এলেন মিরি ইউ। বিশ্ব লেখক সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়ে গিয়েছিলাম দক্ষিণ কোরিয়ার পর্যটনগোয়ান্জু
শহরে। নানা দেশ থেকে লেখকরা এসেছেন, সাহিত্য নিয়ে কথা বলবেন, নতুন ভাবনার আদান-প্রদান হবে। আমি সেদিন ভীষণ সাধারণ পোশাকে গিয়েছিলাম। আমার হাতে পুরোনো নোটবুক, যেখানে নিজের লেখা কবিতা আর টুকরো গল্পের খসড়া জমা হয়েছিল। কিন্তু কারও দিকে তেমন তাকাইনি, কারণ সাহিত্যকর্মীদের মধ্যে সবার চোখে স্বপ্নের ঝিলিক থাকে, সেটা খুব ভালো করেই জানতাম। কিন্তু মিরি ইউ ছিলেন আলাদা। তার চোখের ভেতর একধরনের গভীরতা, যেন অজস্র গল্প লুকিয়ে আছে। তিনি কেমন করে যেন আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। তার চুলগুলো ছোট করে ছাঁটা, হালকা নীল রঙের স্কার্ফে তার মুখের ভেতর একধরনের প্রশান্তি খেলা করছিল। তখনো জানতাম না, এই নারী আমার জীবনে এমনভাবে এসে পড়বেন, যেন সাহিত্যের পাতার কোনো চরিত্র হঠাৎ সত্যি হয়ে ধরা দিল। মসম্মেলনে মিরির বক্তৃতা শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। তিনি জাপানের গল্প বললেন – যুদ্ধোত্তর এক নারীর জীবন, যে প্রেমে পড়েছিল এমন একজনের, যে কখনোই ফিরে আসেনি। তার প্রতিটি বাক্য যেন হৃদয়ের এক নিখুঁত রেখাচিত্র। ভাষার প্রতিটি শব্দে তার মন ছুঁয়ে থাকে, তা আমি খুব স্পষ্ট অনুভব করলাম।
সন্ধ্যাবেলায় আমি এগিয়ে গিয়ে পরিচিত হলাম। মিরি ইউ খুব বিনীত হাসলেন, বললেন, “তুমি কি লেখক?” আমি মাথা নেড়ে বললাম, “একজন লেখার মানুষ। লেখক হওয়া এখনো হয়ে ওঠেনি।” তিনি হেসে বললেন, “সব লেখক একদিন এমনই শুরু করেন। লেখার প্রতি ভালোবাসাই তো আসল পরিচয়।” এরপর থেকেই আমাদের গল্প শুরু। প্রতিদিনের নানা আলোচনায়, সাহিত্যকথায় আমরা ধীরে ধীরে একে অপরের কাছে এলাম। আমি দেখলাম, মিরি ইউ শুধুই একজন লেখিকা নন, তিনি প্রেমিকাও বটে – প্রেমে পড়েন শব্দের, ভাষার আর মানবতার। একদিন কোরিয়ার পাহাড়ি পথে হাঁটছিলাম দুজনে। বাতাসে চেরিফুল উড়ে উড়ে পড়ছিল আমাদের মাথার ওপর। হঠাৎ মিরি আমার দিকে ফিরে বললেন, “তুমি বাংলা ভাষায় কবিতা লেখো? আমাকে শুনাবে?”
আমি চমকে গেলাম। বললাম, “বাংলা তুমি বুঝবে কী করে?” মিরি হাসলেন। “ভাষা না বুঝলেও, অনুভূতি বোঝা যায়। হৃদয়ের কথা তো ভাষার বাধা মানে না।” আমি একটি কবিতা পড়ে শোনালাম। সে মুহূর্তে মিরির চোখে জল টলমল করছিল। “তোমার ভাষা যেন গান,” বললেন তিনি। “এই ভাষায় প্রেম করলে কেমন হয়?” আমি বুঝলাম না, মিরি কি মজা করছেন নাকি সত্যিই প্রশ্নটা করছেন। “বাংলায় প্রেম খুব সহজ,” আমি বললাম। “এখানে প্রেম মানে প্রতিদিন ভালোবাসা লেখা আর একজনের নাম বারবার মনে পড়া।” মিরি ইউ হাসলেন। তার হাতটা ছুঁয়ে বললেন, “তাহলে তুমি লিখে আমাকে প্রেম নিবেদন করতে পারো?” এ যেন কোনো উপন্যাসের মতো ঘটনা। পরদিন আমি তাকে বাংলা ভাষায় একটি প্রেমপত্র লিখলাম। যদিও জানতাম, তিনি পড়তে পারবেন না। চিঠির নিচে ইংরেজিতে অর্থ লিখে দিলাম। সেই চিঠিতে আমি লিখেছিলাম – “তোমার চোখের ভেতর যে গল্প, আমি তার মধ্যে হারিয়ে যেতে চাই। তোমার প্রতিটি লেখায় আমি নিজেকে খুঁজে পাই। আমি তোমার প্রেমে পড়েছি, মিরি।” মিরি চিঠি পড়ার পর আমার দিকে চেয়ে রইলেন। তারপর বললেন, “তাহলে তো এখন আমাকে চেরিফুলের মতো অপেক্ষা করতে হবে। কখন ঝরে যাবে, আর কখন নতুন ফুল ফুটবে।” এরপর আমরা প্রতিদিন একে অপরকে চিঠি লিখতাম। আমার চিঠি বাংলায়, তার চিঠি জাপানিজে। মাঝে মাঝে ভাষা বুঝতাম না, কিন্তু হৃদয়ের ভাষা পড়তে কোনো অসুবিধা হতো না। সম্মেলনের শেষদিনে মিরি আমাকে বললেন, “তুমি জাপানে এসো, আমি তোমাকে আমার শহর দেখাব। আমাদের আকাশের নিচে বসে একসঙ্গে গল্প লিখব।” আমি যেতে পারিনি। কাজের ব্যস্ততা, জীবনের জটিলতা আমাকে আটকে রেখেছিল। কিন্তু মিরির চিঠিগুলো নিয়মিত আসত। তার প্রতিটি চিঠিতে ছিল একধরনের অপেক্ষা।
নমাঝে মাঝে ভাবি, সেই বসন্ত কি কেবল কোরিয়ার পাহাড়েই রয়ে গেছে? নাকি আমাদের দুজনের হৃদয়ে আজও সেই চেরিফুলেরা ফুটে আছে? আজও যখন মিরি ইউ-এর লেখা পড়ি, মনে হয় – আমরা দুজন যেন কোনো এক রূপকথার চরিত্র। হয়তো আমরা ভিন্ন দেশে বাস করি, কিন্তু আমাদের ভালোবাসা, ভাষার বাঁধনে এখনো গভীর। এ গল্পের কোনো শেষ নেই। যেমন বসন্তের ফুল ঝরে যায়, কিন্তু আবার ফিরে আসে। তেমনি আমাদের প্রেমও কখনোই ফুরিয়ে যায় না। একমাত্র চিঠি – মিরি ইউ’র সঙ্গে এক অম্লান সম্পর্কের গল্প, কোরিয়ার সেই স্বপ্নময় দিনগুলো আজও আমার মনে উজ্জ্বল হয়ে আছে। গিয়েছিলাম আমি, এক সাধারণ লেখক, দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়ান্জুর সাত তারকা হুন্দায় হোটেলে সেই লেখক সম্মেলনে, যেখানে সেদিন প্রথম মিরি ইউ’র সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সেই স্মৃতি আমার কাছে যেন অমলিন ছবি, একটা অমূল্য মুহূর্তের মতো সজীব। কিন্তু কোরিয়া থেকে ফিরে আসার পর, মিরির সঙ্গে আমার সম্পর্কের পরবর্তী অধ্যায় শুরু হয় অন্য এক মাধুর্যে। যোগাযোগগুলো ছিল নিয়মিত, একদিকে আমার বাংলা ভাষার প্রেমময় শব্দ এবং অপরদিকে মিরির নরম, অনুভূতিপূর্ণ জাপানি লেখনী। আমরা লেখার মাধ্যমে একে অপরকে জানতাম, অনুভব করতাম, আর প্রতিটি চিঠি যেনো আমাদের মনের গহীনে এক নতুন দিক উন্মোচন করছিল।
মিরি আমাকে প্রায় সময় বাংলা ভাষায় প্রেমপত্র লিখতে অনুরোধ করতো। তার কাছে বাংলার শব্দগুলো ছিল এক অদ্ভুত মধুর। বলতো, “বাংলা ভাষার প্রতিটি শব্দ যেনো এক একটি গীত হয়ে ভেসে আসে আমার মনে।” তার এই কথা শুনে আমি কখনোই দ্বিধা করিনি। প্রতিটি চিঠির মধ্যে, প্রতিটি শব্দে, আমি তাকে আমার অনুভূতি প্রকাশ করতাম। কখনো কখনো সে আমাকে তার নিজের লেখা পাঠাতো, যা কখনো একটি সুন্দর কবিতা, কখনো একটি ছোট গল্পের মতো লাগতো। তার লেখার মধ্যে প্রেম ছিল, কিন্তু প্রেমের পাশাপাশি গভীর দুঃখও ছিল। একবার সে আমাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল, যার প্রতিটি শব্দে ছিল এক ধরনের লুকানো অনুভূতি, এক আড়ালে রাখা ভালোবাসা। তার লেখাটি আমাকে বিমূঢ় করেছিল, আমি বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে এমন এক প্রেমের রূপ প্রকাশ করতে পারে তার মতো এক দার্শনিক। সে চিঠিটি ছিল দীর্ঘ, গভীর এবং তার অনুভূতির প্রতি এক অদম্য বিশ্বাসের অভিব্যক্তি। সে বলেছিল, “যতবার তোমার চিঠি পাই, আমি নিজেকে অন্য এক পৃথিবীতে দেখতে পাই, যেখানে সব কিছু রঙিন এবং স্বচ্ছ। তোমার ভাষা আমার জন্য এক নতুন দুনিয়ার দরজা খুলে দেয়।” আমি তার সেই চিঠির প্রতিউত্তর লিখে পাঠালাম। তবে তার চিঠির উত্তর দেওয়া সহজ ছিল না। সেই চিঠি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী উত্তর। আমি লিখেছিলাম, “বাংলা ভাষায় যা কিছু বলা যায়, তা আমাদের হৃদয় থেকে আসে। এই ভাষা আমার জীবনের অংশ, এটি আমার সুখ, আমার দুঃখ, আমার ভালোবাসা সব কিছু। যখন তুমি বাংলা ভাষায় প্রেমের কথা বলো, তখন মনে হয় যেন আমিও তোমার হৃদয়ের গভীরে প্রবাহিত হচ্ছি।” আমাদের যোগাযোগের মধ্যে প্রেম ছিল, তবে তার চেয়েও বেশি ছিল এক অদ্ভুত বন্ধন। এক ধরনের কল্পনাতীত অভ্যস্ততা, যেখানে একে অপরের শব্দের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া ছিল আমাদের একান্ত পরিচিতি।
তবে এখন অনেক দিন যাবত আর যোগাযোগ নেই। হয়তো ব্যস্ততার মাঝে আমাদের দুটি পৃথিবী আলাদা হয়ে গেছে। কিন্তু মিরি ইউ – এই এক বিশ্বমানের লেখিকা, যে একদিন নোবেল পুরস্কার পেতে পারে, তার স্মৃতি এখনো আমার হৃদয়ে অম্লান। তার শব্দগুলো, তার অনুভূতিগুলো, সব যেনো মিশে গেছে আমার জীবনের গভীরে। আমি জানি, একদিন হয়তো তার লেখা পৃথিবীজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করবে, আর আমি সেই লেখার এক নিঃশব্দ পাঠক হয়ে রইবো। তবে এখনো, মাঝে মাঝে তার একটি চিঠি আমার মনে পড়ে। সেই চিঠি, যে চিঠিতে সে বলেছিল, “ভালোবাসা কখনো হারায় না, সে শুধু নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করে।”
মিরি ইউ – তুমি হয়তো আর কখনো আমার জীবনে ফিরে আসবে না, কিন্তু তোমার প্রেমের শব্দগুলো, তোমার লেখার অনুভূতি, সব কিছু আমি হৃদয়ে ধারণ করে রেখেছি। তোমার কাছ থেকে শেখা ভালোবাসা, অদৃশ্য এক সেতু হিসেবে আজও আমাকে পথ দেখাচ্ছে। মিরি ইউ (জন্ম ২২ জুন, ১৯৬৮) একজন জাপানি ভাষায় লেখালেখি করা দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক এবং জাইনি তিনি ১৯৬৮ সালে জাপানের ইবারাকি প্রিফেকচারের তসুচিউরায় জন্মগ্রহণ করেন এবং কানাগাওয়া প্রিফেকচারের ইয়োকোহামায় বেড়ে ওঠেন। তার পিতা ছিলেন কোরিয়ান অভিবাসীদের সন্তান এবং মাতার জন্ম দক্ষিণ কোরিয়ায়, যিনি কোরিয়ান যুদ্ধের সময় জাপানে পালিয়ে আসেন। শৈশবে পারিবারিক সহিংসতা এবং স্কুলে বুলিংয়ের শিকার হওয়ার পর, তিনি সাহিত্যে আশ্রয় খুঁজে পান। মিরি ইউ তার কর্মজীবন শুরু করেন থিয়েটারের মাধ্যমে। তিনি টোকিও কিড ব্রাদার্স থিয়েটার ট্রুপে অভিনেত্রী এবং সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন এবং ১৯৮৬ সালে নিজস্ব থিয়েটার গ্রুপ “সেইশুন গোগেতসুতো” প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তিনি উপন্যাস এবং প্রবন্ধ লেখায় মনোনিবেশ করেন। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে “ইশি নি ওয়োগু সাকানা” (১৯৯৪), “কাজোকু শিনেমা” (১৯৯৭), “গোল্ড রাশ” (১৯৯৮), “ইনোচি” (২০০০) এবং “টোকিও উয়েনো স্টেশন” (২০১৪)। তিনি ১৯৯৭ সালে “কাজোকু শিনেমা” উপন্যাসের জন্য আকুতাগাওয়া পুরস্কার লাভ করেন। তার রচনাগুলো প্রায়শই জটিল পারিবারিক সম্পর্ক এবং সমাজের প্রান্তিক মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে।ন২০১১ সালের ভূমিকম্প এবং সুনামির পর, মিরি ইউ ফুকুশিমা অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন এবং সেখানকার বাসিন্দাদের গল্প সংগ্রহ ও প্রচারের জন্য একটি রেডিও শো পরিচালনা করেন। তিনি ওদাকা জেলায় “ফুল হাউস” নামে একটি বইয়ের দোকান এবং “লা মামা ওদাকা” নামে একটি থিয়েটার স্পেস প্রতিষ্ঠা করেছেন।
মিরি ইউ একজন একক মা এবং তার এক পুত্রসন্তান রয়েছে। ২০২০ সালে, তিনি মিনামিসোমার হারামাচি ক্যাথলিক চার্চে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেন এবং “তেরেসা বেনেডিক্টা” নাম গ্রহণ করেন। তার রচনাগুলো বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যার মধ্যে “গোল্ড রাশ” এবং “টোকিও উয়েনো স্টেশন” ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছে। “টোকিও উয়েনো স্টেশন” উপন্যাসটি ২০২০ সালে ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড ফর ট্রান্সলেটেড লিটারেচার লাভ করে। মিরি ইউ তার সাহসী এবং গভীর লেখনীর মাধ্যমে জাপানি সাহিত্য জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছেন, যেখানে তিনি প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরেন এবং সমাজের গভীর সমস্যাগুলো আলোকপাত করেন। মিরি ইউ: প্রান্তিক জীবনের সুরকার জাপানি সাহিত্যজগতে মিরি ইউ (Yu Miri) এমন এক নাম, যার লেখনী সাহসী, হৃদয়গ্রাহী এবং গভীর সামাজিক তাৎপর্যে ভাস্বর। তার কলম থেকে উঠে আসে প্রান্তিক মানুষের বেদনার গাথা, সমাজের অবহেলিত বাস্তবতার চিত্র। মিরি ইউ, শব্দের আঙিনায় এক প্রতিবাদী শিল্পী, যিনি সমাজের নিম্নবর্গের কণ্ঠস্বর হয়ে দাঁড়ান। মিরি ইউ-এর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম ১. Tokyo Ueno Station প্রকাশকাল: ২০১৪ পুরস্কার: ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড ফর ট্রান্সলেটেড লিটারেচার (২০২০) ইংরেজি অনুবাদ: ২০১৯ (অনুবাদ: মরগান জাইলস) বিষয়বস্তু: এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কাতসু তারো, এক গৃহহীন শ্রমিক, যিনি টোকিওর উয়েনো পার্কে বাস করেন। জীবনসংগ্রামে পরাজিত এই মানুষটির কাহিনি মিরি ইউ এমন সূক্ষ্মতার সঙ্গে তুলে ধরেন যে পাঠক শহরের জৌলুসের আড়ালে লুকিয়ে থাকা নিঃসঙ্গতা ও নিঃস্বতার শব্দ শুনতে পান। বইটি সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের বেদনা এবং নগরজীবনের নিষ্ঠুর রূঢ়তা ফুটিয়ে তোলে। ২. Kazoku Cinema প্রকাশকাল: ১৯৯৭ পুরস্কার: আকুতাগাওয়া পুরস্কার (Akutagawa Prize) – ১৯৯৭ বিষয়বস্তু: পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এই উপন্যাসের মূল প্রেক্ষাপট। গল্পটি এক পারিবারিক পুনর্মিলনের ভেতর দিয়ে অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং বোঝাপড়ার চিত্র তুলে ধরে। মিরি ইউ-এর সাহিত্যজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এই রচনা। আকুতাগাওয়া পুরস্কার জয় তার সাহিত্যকর্মকে এনে দেয় দেশব্যাপী স্বীকৃতি। ৩. Gold Rush প্রকাশকাল: ১৯৯৮ বিষয়বস্তু: এটি এক কিশোর ছেলের গল্প, যার বাবা মারা যাওয়ার পর জীবনের পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়। বাবার অনুপস্থিতি কিশোরটির জীবনে যে শূন্যতা সৃষ্টি করে, তা গল্পের প্রতিটি পরতে পরতে অনুরণিত হয়। মিরি ইউ অন্ধকার আর অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে জাপানের তরুণ সমাজের অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং মানসিক বিপর্যয়ের সূক্ষ্ম চিত্র এঁকেছেন। ৪. Inochi (いのち, “Life”) প্রকাশকাল: ২০০০
বিষয়বস্তু: “Inochi” মিরি ইউ-এর আত্মজীবনীমূলক রচনা। এখানে মাতৃত্ব, প্রেম এবং পারিবারিক বন্ধনের মধুরতা ও তিক্ততা আত্মোপলব্ধির সঙ্গে মিশে গেছে। এই বইটি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নিয়েছে, যা পাঠককে জীবনের গভীরতম অনুভূতির কাছে নিয়ে যায়। এটি শুধু আত্মজীবনী নয়, বরং এক জীবনের প্রতিচ্ছবি। ৫. The End of August প্রকাশকাল: ২০০৪
বিষয়বস্তু: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানে কোরিয়ান অভিবাসীদের জীবনসংগ্রাম এবং সামাজিক বৈষম্য এই উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু। যুদ্ধপরবর্তী সমাজ বাস্তবতার ভেতর দিয়ে অভিবাসীদের লড়াই ও অস্তিত্বের সংকট মিরি ইউ অসাধারণ দক্ষতায় তুলে ধরেছেন। মিরি ইউ-এর সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য প্রান্তিক মানুষের গল্প: মিরি ইউ-এর সাহিত্যের কেন্দ্রে থাকেন সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী – গৃহহীন, অভিবাসী, শ্রমিক ও নিম্নবিত্ত মানুষ। তার কলমে তারা পান মানবিক কণ্ঠস্বর, যা সমাজের অবহেলা ও অবিচারের বিরুদ্ধে উচ্চকিত হয়ে ওঠে। সাহসী ভাষা: তার রচনায় সমাজের অসঙ্গতি ও অন্ধকার দিক স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। তিনি সাহিত্যের প্রচলিত সীমানা ভেঙে এমন সব চরিত্রকে সামনে আনেন, যাদের ব্যথা সমাজ কখনো দেখেও দেখে না।
পারিবারিক জটিলতা: পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন, ভাঙন এবং মানসিক দ্বন্দ্ব তার সাহিত্যের একটি অপরিহার্য দিক। তিনি পরিবার নামক কাঠামোর ভেতরে জমে থাকা সংকটের খোঁজ করেন, যা পাঠককে আত্মপর্যালোচনার দিকে নিয়ে যায়। পুরস্কার এবং স্বীকৃতি আকুতাগাওয়া পুরস্কার (Akutagawa Prize) ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড (National Book Award) ইয়োমিউরি লিটারারি পুরস্কার (Yomiuri Literary Prize) মিরি ইউ কেবল একজন লেখক নন, তিনি এক সামাজিক দার্শনিক, যিনি শব্দের মাধ্যমে সমাজের প্রান্তিক মানুষের জীবনের অনুচ্চারিত কাহিনি বলেন। তার সাহিত্য পাঠককে সহমর্মী করে তোলে, সমাজের পটভূমিতে উঁকি দিতে শেখায়। তিনি প্রমাণ করেন, সাহিত্য শুধু কল্পনার জগতে বিচরণ নয়, বরং তা সমাজের আয়না।
চলবে—