স্বাগত ডাক্তার শাহাদাত হোসেন! চট্টগ্রামের নতুন মেয়র হিসেবে আপনার প্রতি নগরবাসীর অনেক প্রত্যাশা। আপনার সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক ও সুসংগঠিত নগরীতে রূপান্তরিত করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। নগরবাসীর দুর্ভোগ, যানজট, জলাবদ্ধতা ও অন্যান্য সমস্যার সমাধানে আপনার দক্ষ নেতৃত্ব এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার আলোকবর্তিকা আমাদের আশাকে জাগিয়ে তুলেছে। আপনি এই নগরের মানুষের স্বপ্ন পূরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা হয়ে কাজ করবেন—এটাই আমাদের আশা নিয়ে এই লেখাটি লিখলাম –
শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিলে, তিনি চট্টগ্রামকে উন্নয়নের এক নতুন ধাপে নিয়ে যেতে পারেন। চট্টগ্রাম, দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আজ নানা সমস্যার জালে আটকে আছে—যার মূলে রয়েছে দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি, এবং অদক্ষ প্রশাসন। রেজাউল করিমের মতো ব্যক্তি, যিনি সিটি কর্পোরেশনের শীর্ষ পর্যায়ে থেকে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগের জন্ম দিয়েছেন, তার নেতৃত্বে শহরের উন্নয়ন কার্যক্রম স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। এই চক্র ভাঙতে ডা. শাহাদাত হোসেনের মতো সৎ ও দক্ষ নেতৃত্বের প্রয়োজন। রেজাউল করিমের দুনীতি ও বালু ব্যবসা কেলেঙ্কারি রেজাউল করিম, যিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব পালনকালে শহরের উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তার বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই অভিযোগ জমা হচ্ছিল। বিশেষ করে বালুর ব্যবসা নিয়ে তার সম্পৃক্ততা এবং সেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট চট্টগ্রামবাসীর জন্য একটি বড় ধাক্কা। বালু চক্রের মাধ্যমে কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়ে নামমাত্র কাজ করার পরও তারা সিটি কর্পোরেশন থেকে কয়েকগুণ বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। জনগণের করের টাকায় এই দুর্নীতির খেলায় শহরের মূল অবকাঠামোগত উন্নয়ন থমকে দাঁড়িয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে ডা. শাহাদাতের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ হবে চট্টগ্রামের জন্য এক নতুন সূচনা। তার প্রধান লক্ষ্য হতে পারে সিটি কর্পোরেশনকে রেজাউল করিমের মতো দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে মুক্ত করা। এই দুর্নীতির মূলে কেবল আর্থিক লুটপাট নয়, চট্টগ্রামের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। রেজাউল করিমের সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যা সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে। উন্নয়নের সম্ভাবনা এবং চট্টগ্রামের ভবিষ্যৎ ডা. শাহাদাত হোসেনের অধীনে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শহরের মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে। তিনি একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে, সঠিক এবং সৎ উপায়ে উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা করতে পারেন। তার লক্ষ্য হতে পারে চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং শহরের বিভিন্ন অংশে ব্যাঘ্রবিহীন সেবা নিশ্চিত করা। সিটি কর্পোরেশনের জন্য তার উন্নয়নের রূপরেখা হতে পারে: স্বচ্ছ টেন্ডার প্রক্রিয়া: চট্টগ্রামে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে যেসব টেন্ডার দেওয়া হয়েছে, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রেজাউল করিমের মতো দুর্নীতিবাজদের হাত ধরে হয়েছে। ডা. শাহাদাত এই প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করে তুলতে পারেন। যেখানে প্রকৃত কাজ হবে, এবং প্রকল্পের অর্থ জনগণের উন্নয়নে ব্যয় হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশ: রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে থাকা যাবতীয় দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে, সেই অভিযোগের প্রমাণ সহ জনগণের সামনে তুলে ধরা দরকার। এভাবে দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে কলঙ্ক মুক্ত করা সম্ভব হবে অপরিকল্পিত নগরায়ণ বন্ধ করা: রেজাউল করিমের অধীনে অপরিকল্পিত নগরায়ণ চট্টগ্রামের পরিবেশ ও সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করেছে। ডা. শাহাদাত সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন, যেখানে শহরের সার্বিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। সেবা খাতের পুনর্গঠন: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে শহরের সাধারণ নাগরিকরা যে সেবা প্রত্যাশা করে, তা প্রায় অনুপস্থিত। শহরের সড়ক, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক চাহিদাগুলোতে সিটি কর্পোরেশনের সুষ্ঠু ভূমিকা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।
চট্টগ্রামের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ
ডা. শাহাদাত হোসেনের সামনে চট্টগ্রামকে নেতৃত্ব দেওয়ার অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও, তার প্রজ্ঞা এবং সততার সঙ্গে তিনি এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারেন। তার দায়িত্ব কেবল সিটি কর্পোরেশনের গঠনমূলক কাজের উন্নয়ন নয়, বরং ভেতরকার দুর্নীতিবাজদের শেকড় উপড়ে ফেলা এবং শহরকে একটি পরিকল্পিত নগরে রূপান্তর করা। তিনি যদি সফল হন, তবে চট্টগ্রামের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে এবং শহরটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা হলো, ডা. শাহাদাত সিটি কর্পোরেশনের নেতৃত্বে থেকে শুধুমাত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সঠিক পথে নিয়ে আসবেন না, বরং চট্টগ্রামের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থারও সার্বিক উন্নয়ন ঘটাবেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন: সোনালী দিনের প্রত্যাবর্তন করবে-চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে এমন সময় এসেছে, যখন নেতৃত্বের জন্য নগরবাসী এক অন্য রকম আশা করেছিলেন। এ নগরীর প্রথম মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী থেকে শুরু করে মীর মুহাম্মদ নাছির উদ্দীন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, মনজুরুল আলম এবং আ জ ম নাছির উদ্দীন—এদের প্রত্যেকের নেতৃত্বের সময়েই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন উন্নতির শীর্ষে পৌঁছেছিল। তাদের হাতে নগরবাসী পেয়েছিল সেবা, উন্নয়ন ও পরিকল্পনার এক নতুন দিগন্ত। কিন্তু সেই সোনালী সময় যেন থমকে গেল যখন শেখ হাসিনা সরকার নাটকীয়ভাবে রেজাউল করিমকে মেয়র নির্বাচিত করল। রেজাউল করিমের মেয়াদে চট্টগ্রাম নগরী যেন এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে গেল। তার অযোগ্য নেতৃত্বে নগর উন্নয়ন থমকে গিয়েছিল, আর তার কর্মকাণ্ডের জন্য নগরবাসীর আস্থা একেবারে নিম্নমুখী হয়। ১০ শতাংশ কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ তার ওপর এতই ভারী হয়ে উঠেছিল যে, চট্টগ্রামের জনগণ তাকে সবচেয়ে খারাপ মেয়র হিসেবে অভিহিত করতে দ্বিধাবোধ করেনি। তার শাসনকাল ছিল এক অন্ধকার সময়, যেখানে নাগরিক সেবা এবং উন্নয়ন কাজ প্রায় থমকে ছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে ছাত্র ও জনতার আন্দোলনে অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে, আর চট্টগ্রামের মানুষ মুক্তি পায় রেজাউল করিমের মতো অযোগ্য মেয়রের হাত থেকে। এই আন্দোলন শুধু সরকারের পরিবর্তনই আনেনি, এটি নগরবাসীকে আশার এক নতুন আলো দেখিয়েছে। তারা এখন চায় এমন একজন মেয়র, যিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে আবারও তার সোনালী দিনে ফিরিয়ে নিতে পারবেন।নগরবাসীর সেই আশার প্রতীক হিসেবে উঠে এসেছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। তার হাতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আবার সঠিক নেতৃত্বের দিক নির্দেশনা পেতে চলেছে। ডা. শাহাদাতের সততা, নিষ্ঠা এবং দক্ষতা তাকে শুধু একজন রাজনীতিক হিসেবে নয়, বরং একজন মানবদরদী হিসেবে পরিচিত করেছে। তার অভিজ্ঞতা এবং জনসেবার মানসিকতা তাকে সেই যোগ্য প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছে, যিনি চট্টগ্রাম নগরবাসীর আশা পূরণ করতে সক্ষম। ডা. শাহাদাতের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম আবারও উন্নতির পথে হাঁটবে। নগরবাসী স্বপ্ন দেখে সেই সোনালী দিনের, যখন সিটি করপোরেশন হবে এক আধুনিক, উন্নত ও নাগরিক বান্ধব প্রতিষ্ঠান। তার পরিকল্পনায় চট্টগ্রামের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য নাগরিক সেবাগুলোতে আসবে যুগান্তকারী পরিবর্তন। নগরবাসীর আস্থা এবং ভালোবাসা নিয়ে তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে আবারও সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন। চট্টগ্রামের এই সোনালী দিনের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে নগরবাসী। তাদের বিশ্বাস, ডা. শাহাদাত হোসেনের হাতে চট্টগ্রাম আবারও ফিরে পাবে তার হারানো গৌরব।
লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক ও মহাসচিব-চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।