ঢাকার জিয়াউর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের ড. মুহাম্মদ ইউনুস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর:
প্রথমেই আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এই সংকটময় মুহূর্তে, আমি একটি কঠিন সত্য লিখতে বসেছি। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের নাম রাজনৈতিক কারণে পরিবর্তন করে জাতির মধ্যে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে, যা হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। এখন সময় এসেছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে পূর্বে তার নাম ছিল—জিয়াউর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করা। জিয়াউর রহমানের বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে; তিনি ১৯৮০ সালে এই বিমানবন্দর উদ্বোধন করেন এবং ১৯৮২ সালে বিচারপতি ছাত্তার সাহেব রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন এই বিমানবন্দরের নাম তার নামে রাখা হয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় জর্জরিত হয়ে জিয়াউর রহমানের নাম বাদ দিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করে, যা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠায় ড. মুহাম্মদ ইউনুসেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি ১৯৯৬ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা থাকাকালীন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে আধুনিকীকরণের জন্য জাপানের সাথে চুক্তি করেছিলেন। তাঁর এই অবদানের কারণে আজ আমরা চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পেয়েছি। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৮ সালে এম এ হান্নানের নামে বিমানবন্দরটির নামকরণ করে, পরে রাজনৈতিক কারণে ২০০১ সালে বিএনপি আবার ক্ষমতায় এসে হান্নানের নাম বাদ দিয়ে হজরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করে। এ সিদ্ধান্তও সঠিক ছিল না। আজকের প্রস্তাব হলো, প্রতিষ্ঠার সাথে যেহেতু ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ভূমিকা রয়েছে, তাই তার নামে এই বিমানবন্দরের নামকরণ করা উচিত। মুহাম্মদ ইউনুস বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নয়, বরং তাঁর অবদান এবং তিনি একজন নোবেলজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে। আসুন, এই বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনায় নিই। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের আকাশপথ যোগাযোগের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিমানবন্দরটির আদি ইতিহাস এবং আধুনিকায়নের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে এটি শুধু একটি পরিবহন কেন্দ্র নয়, বরং চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। ১৯৪০-এর দশকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিমানবন্দরটির প্রথম ভিত্তি স্থাপিত হয়। সামরিক প্রয়োজনে নির্মিত হলেও স্বাধীনতার পর এটি বেসামরিক ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৮০-এর দশকে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক ঘোষণা করা হয়, যা এর উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। এরপর, ১৯৯০-এর দশকে বিমানবন্দরটির আধুনিকীকরণে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা থাকাকালে ড. ইউনুস জাপানের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেন, যার মাধ্যমে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) প্রায় ৫১.৫৭ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করে। এর ফলে, বিমানবন্দরটির রানওয়ে, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল এবং টার্মিনালের উন্নয়ন সম্ভব হয়।এই উন্নয়নের মাধ্যমে বিমানবন্দরটি চট্টগ্রামের এবং দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাণিজ্য ও পর্যটনের প্রসারে সহায়তা করে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখন শুধু দেশের নয়, আন্তর্জাতিক মানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, বিমানবন্দরের বর্তমান নাম ‘শাহ আমানত’ চট্টগ্রামের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। শাহ আমানত ছিলেন একজন বিখ্যাত সুফি সাধক, যিনি চট্টগ্রামের সমাজ ও ধর্মীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছেন। তার নামে বিমানবন্দরের নামকরণ চট্টগ্রামের স্থানীয় ইতিহাস এবং সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। তবে, বিমানবন্দরটির আধুনিকীকরণে ড. ইউনুসের অবদানও অনস্বীকার্য। তার প্রচেষ্টার ফলেই বিমানবন্দরটি আজকের আধুনিক অবকাঠামো এবং সুবিধাসম্পন্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। ড. ইউনুসের প্রচেষ্টা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার অন্যান্য অবদানের মতোই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তবে, তার অবদানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার আরও বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যা চট্টগ্রাম এবং পুরো বাংলাদেশের উন্নয়ন ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করবে। সর্বশেষে, শাহ আমানত বিমানবন্দর চট্টগ্রামের গর্ব এবং আধুনিকায়নের এক অনন্য নিদর্শন হয়ে থাকবে, যা একদিকে ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে এবং অন্যদিকে ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ খুলে দিয়েছে, বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি শুধু একজন ব্যক্তির অবদানের স্বীকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এটি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং জনগণের অনুভূতির সাথেও গভীরভাবে জড়িত। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতো একজন নোবেল বিজয়ীর নামে নামকরণ করা হলে এটি চট্টগ্রামের ইতিহাসে আরেকটি মাইলফলক হতে পারে। তবে, এর পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের মতামত এবং ঐতিহ্যের গুরুত্ব বিবেচনায় রাখা আবশ্যক। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের ইতিহাস রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রভাবের সঙ্গে যুক্ত। বিমানবন্দরটি প্রথমে ১৯৯৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা এম এ হান্নানের নামে রাখা হয়, যিনি স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণাকারী নেতাদের একজন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে বিএনপি সরকার বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে “শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর” করে, যা স্থানীয় জনগণের আবেগ ও ধর্মীয় গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। শাহ আমানত ছিলেন সতেরো শতকের একজন সম্মানিত সুফি সাধক, যিনি চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ব্রিটিশ শাসনামলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরটি সামরিক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পরে, এটি বেসামরিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত হয় এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য উন্নীত হয়, যা দেশের দক্ষিণাঞ্চল তথা চট্টগ্রামের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি পায়। বর্তমানে, বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নামে প্রস্তাব উঠতে পারে, যা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারে। ড. ইউনুস ক্ষুদ্রঋণ মডেলের জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর এই অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিমানবন্দরের নামকরণ করলে তা এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, এটি করার আগে স্থানীয় জনগণের মতামত, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা এবং ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুত্বপূ্র্ণ। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর মূলত একটি আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে ওঠে। ১৯৯০-এর দশকে এটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭৬ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হান্নানের নামে বিমানবন্দরের নামকরণ করা হয়, যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতৃত্ব প্রদানকারী ছিলেন। তবে, ২০০৫ সালে বিএনপি সরকারের আমলে বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে ইসলামী চিন্তাবিদ শাহ আমানতের নামে নামকরণ করা হয়।
ড. ইউনুসের অবদান:
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ভূমিকা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও অবকাঠামোগত প্রকল্পের সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। বিশেষত, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা থাকার সময় তিনি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার প্রচেষ্টার ফলেই জাপানের সাথে একাধিক চুক্তি হয়েছিল, যা বিমানবন্দরটির আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সহায়তা করে। তার এই অবদান চট্টগ্রামের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত, যা তাকে এই অঞ্চলের একটি সম্মানীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।
প্রস্তাবিত নাম পরিবর্তনের পেছনে যুক্তি:
১. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:
ড. ইউনুসের নামে বিমানবন্দর হলে তা শুধু চট্টগ্রামের উন্নয়নকেই নয়, বরং বাংলাদেশের বৈশ্বিক মর্যাদাকেও বৃদ্ধি করবে। এর মাধ্যমে ড. ইউনুসের ক্ষুদ্রঋণ মডেল ও সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে তার অবদানকেআন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরা সম্ভব হবে।
২. বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ:
ড. ইউনুসের মতো একজন বিশ্বমানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বের নামে বিমানবন্দর হলে বিদেশি বিনিয়োগ ও পর্যটনের ক্ষেত্রেও তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তার নামকরণ চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের বৈশ্বিক সংযোগ বৃদ্ধি করবে এবং আন্তর্জাতিক মানচিত্রে বিমানবন্দরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাব হিসেবে উপস্থাপন করবে।
৩. চট্টগ্রামের সন্তান:
ড. ইউনুসের সাথে চট্টগ্রামের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন এবং এখানেই তার ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের শুরু। এই সম্পর্ক বিবেচনায় এনে বিমানবন্দরটি তার নামে নামকরণ হলে তা চট্টগ্রামের মানুষের জন্য এক গর্বের বিষয় হতে পারে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব:
ড. ইউনুসের ক্ষুদ্রঋণ মডেল দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তার নামে বিমানবন্দর হলে তা শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নকেই নয়, বরং সামগ্রিকভাবে সামাজিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচন প্রচেষ্টার প্রতীক হতে পারে।
আন্তর্জাতিক উদাহরণ:
অন্যান্য দেশে অনেক বিমানবন্দর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে নামকরণ করা হয়েছে, যেমন জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (যুক্তরাষ্ট্র), ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ভারত)। ড. ইউনুসের মতো একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের নামে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের নামকরণ করলে তা বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবে এবং তাকে যথাযথভাবে সম্মানিত করবে। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের এই অবদান এবং প্রভাব বিবেচনা করে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে তার নামে নামকরণ করার প্রস্তাব অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও যৌক্তিক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের নামে বিমানবন্দর:বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিমানবন্দরগুলো ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বদের নামে রাখা হয়েছে।
নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দেওয়া হলো:
১. জাইনুদ্দিন আবদুল মাজিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইন্দোনেশিয়া: এটি মাতারাম শহরে অবস্থিত এবং নামকরণ করা হয়েছে বিশিষ্ট সুফি সাধক জাইনুদ্দিন আবদুল মাজিদের নামে। তিনি ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম প্রচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বদের নামে বিমানবন্দরের নামকরণ
১. মালিক ইব্রাহিম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, উজবেকিস্তান তাসকন্দে অবস্থিত এই বিমানবন্দরটি বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও সুফি সাধক মালিক ইব্রাহিমের নামে নামকরণ করা হয়েছে। তিনি ইসলামের প্রচার ও শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন।
২. তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইরান ইসলামী বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেনির নামে এই বিমানবন্দরটি নামকরণ করা হয়েছে। যদিও তিনি সুফি সাধক ছিলেন না, তাঁর ধর্মীয় আদর্শ ও ভাবধারা সুফিবাদের সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্যপূর্ণ। ৩. শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বাংলাদেশ চট্টগ্রামে অবস্থিত এই বিমানবন্দরটি সুফি সাধক শাহ আমানতের নামে নামকরণ করা হয়েছে। তিনি এই অঞ্চলের আধ্যাত্মিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
৪. আখতার হুসাইন বিমানবন্দর, পাকিস্তান পাকিস্তানে এই বিমানবন্দরটি বিখ্যাত সুফি সাধক আখতার হুসাইনের নামে নামকরণ করা হয়েছে। সমাজসেবা এবং আধ্যাত্মিকতার জন্য তিনি প্রশংসিত। নামকরণের উদ্দেশ্য বিমানবন্দরের নামকরণে আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বদের সম্মানিত করা একটি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রয়াস। এ ধরনের নামকরণ ঐ ব্যক্তিদের অবদানকে স্মরণ করার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সংযোগ তৈরিতে সহায়তা করে। বাংলাদেশে বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ব্রিটিশ সরকার তেজগাঁও থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে কুর্মিটোলায় একটি রানওয়ে নির্মাণ করে। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে এবং রানওয়ে ও টার্মিনাল নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিমানবন্দরটি অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় ছিল এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার পরিত্যক্ত প্রকল্পটি পুনরায় চালু করে এবং ১৯৮০ সালে এটিকে দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে উদ্বোধন করা হয়।
২০১০ সালে ক্ষমতাসীন সরকার বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নামে নামকরণ করে। সুফি দরবেশ হযরত শাহজালালের নামে ঢাকার বিমানবন্দরের নামকরণ করা হয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ১৯৪৪ সালে চট্টগ্রামের এয়ারফিল্ডটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে নির্মিত হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি চট্টগ্রাম এয়ারফিল্ড নামে পরিচিত ছিল। তখন এটি যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি এয়ার ফোর্সের ৪র্থ কমব্যাট কার্গো গ্রুপ দ্বারা সরবরাহ পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বার্মা অভিযানের সময় ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিমানবন্দরটি সি-৪৬ কমান্ডো বিমানের মাধ্যমে পুরুষ ও সরঞ্জাম পরিবহন করত। যুদ্ধ শেষে বিমানবন্দরটি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হয়।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, ১৯৭২ সালে বিমানবন্দরটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশী বিমানবন্দরে রূপান্তরিত হয়। প্রথমে এটি প্রধানত ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য ব্যবহৃত হত। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি বিমান আন্তর্জাতিক রুট যেমন ব্যাংকক, দুবাই এবং অন্যান্য উপসাগরীয় শহরে ফ্লাইট চালু করে। এরপর বিমানবন্দরটি একটি আন্তর্জাতিক স্থাপনায় পরিণত হয়। ১৯৯৮ সালের মার্চে বিমানবন্দরের একটি বড় সংস্কার ও সম্প্রসারণ প্রকল্প শুরু হয়, যা ২০০০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। এই আপগ্রেডের জন্য সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (ক্যাব) জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (JICA) থেকে ৫১.৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক সহায়তা পায়। জাপানি প্রতিষ্ঠান শিমিজু এবং মারুবেনি এই প্রকল্পটি পরিচালনা করে।
এই লেখার মাধ্যমে সরকারের কাছে আমার প্রস্তাব, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পূর্বের নাম জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হোক। পাশাপাশি সিলেটের শাহজালাল বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে ড. মুহাম্মদ ইউনুস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা হোক।
লেখক: সাংবাদিক, গবেষক ও টেলিভিশন উপস্থাপক