1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
“বাঁশখালীতে ৪ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফের মাদক কারবারি আটক: ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ” হোমনায় মহান মে দিবস উপলক্ষে  বিএনপির বর্ণাঢ্য র‍্যালি  ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর শুভ আগমনে বোয়ালখালীবাসীর পক্ষ থেকে হাজী মোহাম্মদ আলম ববির শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা পুলিশ পরিচয়ে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের ৮ জনকে বেঁধে ছয়টি দোকান ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে মালামাল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা রোদেলা দুপুরে পারকি সৈকতের বালুকাবেলায় কলম যোদ্ধারা,স্মৃতিময় এক মে দিবস! ড. মোহাম্মদ ইউনূসের দক্ষিণ চট্টগ্রাম সফর সিএমপি কমিশনার ও পাঁচ ওসি পেলেন আইজিপি ব্যাজ সাহস, দক্ষতা ও মানবিক পুলিশিংয়ের স্বীকৃতি আইজি পি ব্যাজ পেলেন ওসি আফতাব উদ্দিন চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের সূচনালগ্নের সাহসী পুরুষ ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন! দৃষ্টি আকর্ষণ

শেখ হাসিনা ও মুহাম্মদ ইউনূসের মনোমালিন্যের অজানা অধ্যায়

মো. কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৫৪ বার পড়া হয়েছে

অজানা অধ্যায়ের ফিরে দেখতে গিয়ে শেখ হাসিনা ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস—মন থেকে মতবিরোধের গল্পটা পাঠকের খাতায় লিপিবদ্ধ করছি,মানুষের জীবনে কখনো কখনো এমন কিছু দ্বন্দ্বের জন্ম হয়, যা শুধুই মতের পার্থক্য থেকে শুরু হয়, কিন্তু ক্রমশ সেই মতভেদ গাঢ় হয়ে রূপ নেয় ব্যক্তিগত বিরোধে। আর তখন সেই দ্বন্দ্ব এক নতুন মাত্রা পায়, যখন ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা কেউ সেই বিরোধকে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিশোধের পথে পরিচালিত করে। যদিও এ ধরনের রাজনীতি কোনো দেশের জন্য কল্যাণকর নয়, তবু আমাদের বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরোধ ঠিক এমন এক রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুরুটা হয় মনোমালিন্য দিয়ে, যেখানে শেখ হাসিনা ও ড. ইউনূসের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের মিষ্টতা কখন যে তিক্ততায় পরিণত হলো, তা হয়তো কেউ সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি। মতবিরোধ থেকে ব্যক্তিগত বিরোধের আঘাত এতটাই গভীর হয়েছে যে, রাষ্ট্রের সকল শক্তিকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনা সেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এর ফলে যা হারিয়েছি, তা শুধু একজন ব্যক্তির মর্যাদাই নয়, বরং রাষ্ট্রের সম্মান ও স্থিতিশীলতাও।
আজ, সেই বিরোধের মাসুল হিসেবে শেখ হাসিনা নিজেকে যে অবস্থানে নিয়ে গেছেন—সেখানে তাকে ক্ষমতার মসনদ ছেড়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়েছে। ইতিহাসের পাতা আজ যে গল্প শোনাবে, তা শুধু রাজনীতির দুঃখগাথা নয়, বরং দুই মহান ব্যক্তির সম্পর্ক ভাঙনের করুণ সুর। আমার এই লেখাটি সেই অজানা অধ্যায়ের এক টুকরো ছোঁয়া, যেখানে শেখ হাসিনা ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরোধের সূচনা থেকে ধীরে ধীরে কীভাবে রাষ্ট্রের অন্তঃস্থলে সেই দ্বন্দ্বের ছায়া বিস্তার লাভ করেছিল, তা তুলে ধরতে চাই।
প্রতিবছর নরওয়ের নোবেল শান্তি কমিটি শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার প্রদান করে থাকে। পাঁচজন সদস্য নিয়ে গঠিত এই কমিটির কেউই বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি নন, বরং তারা সবাই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত। বর্তমানে এই কমিটির চেয়ারম্যান থরবোর্ন জ্যাগল্যান্ড, যিনি নরওয়ের লেবার পার্টির একজন সদস্য। ২০০৬ সালে কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য ওলে ড্যানবোল্ট, যিনি ড. ইউনূসকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেছিলেন। কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ক্যাসি কুলম্যান ফাইভ, যিনি একজন ব্যবসায়ী এবং কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য। এই চরম বিতর্কিত উগ্র মার্কিনপন্থী সদস্য ২০০৭ সালে সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর এবং ২০০৯ সালে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানের জন্য ভূমিকা রাখেন। সিসেল রনবেক হলেন কমিটির আরেক সদস্য, তিনি একজন রাজনীতিক এবং সাবেক মন্ত্রী। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন ইঙ্গার ম্যারি ইটারহর্ন এবং এগোট ভেইল, যারা নরওয়েজিয়ান প্রগ্রেস ও সোশ্যালিস্ট লেফট পার্টির সদস্য এবং পেশায় যথাক্রমে পার্লামেন্টের ডেপুটি প্রতিনিধি এবং ফিজিওথেরাপিস্ট। এদের পরিচিতি এবং পেশার বিবরণ দেখে স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, শান্তি পুরস্কার নির্ধারণের জন্য এমন সদস্যদেরকে কেন নির্বাচিত করা হলো, যারা হয়তো বিশ্বশান্তির গভীর বিষয়টি বুঝতে পারেন না। নরওয়ের বুদ্ধিজীবী সমাজের কাউকে কমিটিতে না রেখে শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের এই স্থানে রাখা, নোবেল শান্তি পুরস্কারকে হাস্যকর করে তোলেনি কি?
নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউট এই কমিটিকে নোবেলজয়ীদের নির্ধারণে সহায়তা করে। এই সংস্থার চেয়ারম্যান গ্যের লুন্ডস্ট্যাড একজন ঐতিহাসিক, যার গবেষণার বিষয় শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ওলাভ নোলস্ট্যাড, দ্যাগ কুল গোটোভ্যাক, সিগরিড ল্যাঞ্জব্রেক, অ্যানি সেসিল জেলিং, টোরিল জোহানসেন এবং বর্ণ হেলগে ভ্যাঞ্জেন। এদের কেউই বিশ্বজুড়ে পরিচিত নয়। উইকিপিডিয়া বা গুগল সার্চ করলেও এদের সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাওয়া যায়। এসব অখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কারা নোবেল পুরস্কার পাবেন তা নির্ধারণ করছেন, বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পাওয়ার কথা নয়। যদি নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেল জানতেন যে তার নামে আজ কিছু অখ্যাত রাজনীতিবিদরা যুদ্ধবাজ রাজনীতিবিদ এবং সুদখোর ব্যবসায়ীদের পুরস্কৃত করছেন, তবে তিনি লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কারের কিছু বিতর্কিত উদাহরণ এখানে দেওয়া যাক:
ক) ২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বিশ্বকূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় অসাধারণ অবদানের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু এটি এক প্রকার চাটুকারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়! ওবামা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যে তিনি এমন কী অবদান রাখলেন যে তাকে নোবেল পুরস্কার দিতে হবে? আজ ওবামা আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন, তেলের নিয়ন্ত্রণ না পাওয়ায় যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে নিয়ে লিবিয়ায় বোমাবর্ষণ করছেন। এই কি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা? হল না, অথচ মেঞ্চু মেক্সিকোতে পালিয়ে একটি ভুল তথ্য সংবলিত বই লিখেই নোবেল পুরস্কার পেয়ে গেলেন। নোবেল কমিটির বিচারের প্রশংসা করতে হয়! চ) ১৯৭৯ সালে মিশরের আনোয়ার সাদাত ও ইসরায়েলের মেনাহেম বেগিনকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়, শুধুমাত্র ইসরায়েল-মিশরের মধ্যে হওয়া শান্তিচুক্তির জন্য। তবে শোনা যায়, দুজনেই ব্রিটিশ আমলে সহিংস আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন।
ছ) ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনামের লি ডাক থোর সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয় কুখ্যাত কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জারকে। কিসিঞ্জার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিরোধিতা করেছিলেন এবং পাকিস্তান সরকারের পক্ষ নিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে “তলাবিহীন ঝুড়ি” বলে বিদ্রূপ করেছিলেন এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পেছনে ইন্ধন যুগিয়েছিলেন। কম্বোডিয়ায় বোমাবর্ষণ ও দক্ষিণ আমেরিকায় “অপারেশন কনডর” নামক সামরিক অভিযানে কিসিঞ্জারের কলকাঠি নাড়া ছিল। এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া আসলে শান্তির প্রতি চরম অবমাননা!এবার আসা যাক ড. ইউনূস প্রসঙ্গে। ২০০৬ সালে ড. ইউনূসকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সময় নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে ড. ইউনূস অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন। বিল ক্লিনটনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আরও বলা হয়েছিল যে, ইউনূসকে নোবেল পুরস্কার দিয়ে ইসলাম ও পশ্চিমের মধ্যে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া নারী ক্ষমতায়নের পথ সুগম করা এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সংগ্রামের অংশ হিসেবে ড. ইউনূসকে এই সম্মান দেওয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলোতে আমাদের দেশের মতো এমন নিদারুণ দারিদ্র্য নেই, সেখানে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ক্ষুদ্রঋণের প্রয়োজনও নেই। তবে যদি ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে মুনাফা অর্জনই মূল উদ্দেশ্য হয়, তাহলে হাজারো ক্ষুদ্রঋণদান প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব। ক্ষুদ্রঋণ এক প্রকার মহাজনি ব্যবসা, যেখানে সুদসহ আসল না পেলে মহাজন যেমন জমি ও বাড়িঘর ক্রোক করে নেয়, তেমনি গ্রামীণ ব্যাংকও গ্রাম্য ঋণের নামে আসলে কী হচ্ছে? ঠিক সময়ে সুদসহ আসল ফেরত না দিলে গ্রামীণ ব্যাংক কিংবা অন্য ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামীণ জনতার জমিজমা, বসতবাড়ি, টিনের চালা, হাঁসমুরগী, গরুবাছুর, হাঁড়িপাতিল, আসবাবপত্র, এমনকি তাদের অলংকারাদি পর্যন্ত জোরপূর্বক নিয়ে নেয়। এরকম নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন দোহার থানার হতভাগিনী রাবেয়া। দারিদ্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে মারা গেছেন সুফিয়া, এমন উদাহরণ ভুরিভুরি পাওয়া যায়। জাতীয় দৈনিকগুলোতে এ সম্পর্কিত বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ডেনমার্কের বিখ্যাত সাংবাদিক টম হেইনম্যান তার বহুল আলোচিত প্রামাণ্যচিত্র ‘Caught in Microdebt’-এ এমন অনেক ঘটনার দলিল তুলে ধরেছেন।
প্রকৃত অর্থে, যদি ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য সত্যিই বিমোচিত হতো, তাহলে আজকের গ্রামাঞ্চলের মানুষদের আর নোংরা, ছিন্ন পোশাক পরতে হতো না। ছেঁড়া গেঞ্জি-লুঙ্গি ছেড়ে তারা পরত প্যান্ট-শার্ট। তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুল ফাঁকি দিয়ে বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করতে হতো না। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশ অনেক আগেই শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দেশে পরিণত হতো।
ব্যক্তিগত শান্তি দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রিক বা আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় এর সরাসরি (direct) কোনো ভূমিকা নেই,বরং পরোক্ষ (indirect) ভূমিকা থাকতে পারে। দারিদ্র্য বিমোচন সত্ত্বেও জাতিগত বিভেদ কিংবা আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিরোধের কারণে শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, ভিয়েতনামের লি ডাক থো শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েও তা দৃঢ়চিত্তে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এই বলে:
“There is still no peace in Vietnam.” ড. ইউনূস যদি তার মতোই সৎ ও নিষ্ঠাবান একজন বড়মাপের মানুষ হতেন, তবে তিনিও নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে বলতে পারতেন, “দুঃখিত, বাংলাদেশে এখনো শান্তি আসেনি, আর দারিদ্র্যও বিমোচিত হয়নি।” কিন্তু ড. ইউনূস দেশ ও মানুষের কথা কখনোই ভাবেননি; ডিগ্রি, পুরস্কার, ও বিত্তবৈভব অর্জন করাই তার মূল লক্ষ্য ছিল। তাই তিনি খুশিতে আত্মহারা হয়ে নরওয়ে গিয়ে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন। ২০০৬ সালে পুরস্কার পাওয়ার পর, সমালোচনা এড়াতে লোক দেখানোর জন্য শহীদ মিনার এবং স্মৃতিসৌধে একবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছিলেন, কিন্তু এর পর আর কখনো যাননি দারিদ্র বিমোচনের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার দূরসম্পর্ক থাকতে পারে, তবে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটানোর সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পার্বত্য আদিবাসী ও অভিবাসী বাঙালিদের মধ্যে ১৯৭৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর, যখন শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান সন্তু লারমার সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিতে আদিবাসীদের স্বায়ত্তশাসন, স্বতন্ত্র জাতিসত্তার স্বীকৃতি, সেনাবাহিনী প্রত্যাহার, এবং জমিজমা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এর আগে বিভিন্ন সরকার যেখানে বাঙালি অভিবাসন, সেনাবাহিনী মোতায়েন, এবং আদিবাসীদের জমি দখলের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল, সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও আদিবাসীদের আলাদা জাতিসত্তার প্রশ্নে বিরোধী ছিলেন। অথচ তারই কন্যা শেখ হাসিনা সাহসিকতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পার্বত্য সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন। এই শান্তিচুক্তির ফলে প্রায় ৭০,০০০ সশস্ত্র আদিবাসী অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। যদিও সব জমিজমা ফেরত পায়নি, কিছু ফেরত পেয়েছে। সেনাবাহিনী ও বাঙালি অভিবাসীদের সঙ্গে আদিবাসীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। ১৯৭৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তথাকথিত দারিদ্র বিমোচনের অগ্রগতির তুলনায়, ১৯৯৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বাঙালি-আদিবাসীদের সংঘর্ষ অনেক কমেছে, বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়নি। অর্থাৎ শান্তিচুক্তি কিছুটা হলেও সফল হয়েছে।
ড. ইউনূস একজন মধ্যবিত্ত শিক্ষক থেকে সুদের মাধ্যমে বিপুল বিত্তবৈভব অর্জন করেছেন, কিন্তু এর মাধ্যমে গরিবদের অবস্থার প্রকৃত উন্নতি হয়নি। গ্রামের সহজ-সরল জনগোষ্ঠী সুদের ফাঁদে পড়ে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ঋণ শোধ করতে বাধ্য হয়েছে, অনেকে সর্বস্বান্তও হয়েছে। আর ড. ইউনূস তার দারিদ্র বিমোচনের প্রচার দিয়ে নিজেই বিত্তশালী হয়েছেন।
এর বিপরীতে, শেখ হাসিনা তার শান্তিচুক্তির মাধ্যমে নিজে কোনো ব্যক্তিগত লাভবান হননি। বরং তিনি অনেক বাঙালি অভিবাসীর বিরাগভাজন হয়েছেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে ভোট হারিয়েছেন। শেখ হাসিনার শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ড. ইউনূসের মতো কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল না। যদিও ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন-মিশরের শান্তিচুক্তি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, তবুও ইয়াসির আরাফাত, ইযহাক রাবিন, শিমন পেরেজ, মেনাহেম বেগিন ও আনোয়ার সাদাত নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি পুরোপুরি সফল না হলেও তা একেবারে ব্যর্থও হয়নি। তাহলে শেখ হাসিনা এবং সন্তু লারমা নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য নন কেন? দারিদ্র বিমোচন যদি শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি অংশ হয়, তবে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছরের ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসান ঘটেছিল ১৯৯৬ সালের ১২ই ডিসেম্বর, যখন শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গা পানিচুক্তি করেন এবং দেশের জন্য ন্যায্য হিস্যা আদায় করেন। ১৯৮২ সালের পর থেকে বাংলাদেশ তেমন কোনো পানি পাচ্ছিল না। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিরাজ করত চরম খরা। সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানি না পেয়ে বছরের অনেকটা সময় কৃষকদের বসে থাকতে হতো, আর পরিবারগুলোকে সামাল দিতে হতো চরম দারিদ্র্য। যদিও দারিদ্র্য পুরোপুরি নির্মূল হয়নি, কৃষকসমাজ আগের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। শেখ হাসিনা তাদের মুখে হাসি ফিরিয়েছেন। পর্যাপ্ত ফসল ফলিয়ে কৃষকরা নিজেদের চরম দারিদ্র্য থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেয়েছে। এই উন্নতির ফলশ্রুতিতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য শেখ হাসিনা ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সেরেস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। একটা কথা প্রায়ই বলা হয়, হাতের পাঁচটি আঙুল সমান নয়। ঠিক তেমনই,রাজনীতিতে ৭০-৮০% দুর্নীতিবাজ থাকলেও ২০-৩০% সৎ ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদও রয়েছেন। কিন্তু আমরা প্রায়শই তাদের কথা বলি না। বরং, চোখ বন্ধ করে গোটা রাজনীতিক শ্রেণিকেই খারাপ বলে গালি দিই। প্রশ্ন হলো, আমরা শিক্ষিত মানুষরা নিজেরা কতটুকু সৎ? আমরা কি একেবারেই দুর্নীতি করি না? বঙ্গবন্ধু একবার বলেছিলেন, “দুর্নীতি আমাদের দেশের গরিব কৃষক সমাজ করে না, দুর্নীতি করে আমাদের দেশের শিক্ষিত লোকজন।” কথাটি সত্য। আমরা সামান্য শিক্ষিত হয়েই নিজেদের বড়ো জ্ঞানী মনে করি। অথচ, স্বল্পজ্ঞান দিয়ে যুক্তির ধার না ধেরে আবেগের বশে পত্রপত্রিকায় কিংবা ব্লগে যা খুশি তাই লিখে নিজেদের স্বার্থপর চরিত্রটাই প্রকট করি। আমাদের দেশের চাকুরিজীবীরা ঘুষ নেন এবং দেন। ব্যবসায়ীরা ছলেবলে কৌশলে মানুষকে ঠকিয়ে বিরাট অঙ্কের টাকা লুটে নেন।
আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির অনেকেই ক্ষমতার পালাবদলে সুবিধাবাদী হয়ে ওঠেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তারা আওয়ামী লীগে, বিএনপি এলে তারা বিএনপিতে ঝুঁকে পড়েন। মন্ত্রীদের দুর্নীতি থাকে, কিন্তু মন্ত্রীরা তো হাতে গোণা কয়েকজন। অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণি কি সবসময় সৎ? তবুও আমরা একতরফা ভাবে রাজনৈতিক নেতাদেরই দোষারোপ করি, নিজেদের ভুল ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলি না। কৃষক সমাজ ঘুষ খায় না, কারণ তাদের পেশায় ঘুষের সুযোগই নেই। তারা লেখালেখি করে সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালায় না, ক্ষমতার বদলের সঙ্গে সঙ্গে সুবিধাবাদী চরিত্রটিও দেখায় না।রাজনীতিবিদদের যেমন দোষ আছে, আমাদেরও অনেক দোষ আছে। এবার আসা যাক একটি সাড়া জাগানো তথ্যে। ড. ইউনূসের নোবেল পুরস্কার অর্জনের পেছনে বিল ক্লিনটনের সমর্থন থাকলেও সবচেয়ে বড় অবদান ছিল আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর এবং গ্রামীণফোনের ব্যবসায়িক পার্টনার টেলিনরের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা স্টেইন টোনেসনের। তিনি ড. ইউনূসকে নোবেল বিজয়ী করতে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। উল্লেখ্য, টেলিনর নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রধান স্পনসর। এই টেলিনরের আমন্ত্রণেই ড. ইউনূস ঘনঘন নরওয়ে সফরে যেতেন। পরিশেষে আরেকটি উদাহরণের মাধ্যমে স্পষ্ট করে বলি, নোবেল শান্তি পুরস্কার কতটা ভিত্তিহীন হতে পারে। অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রবক্তা, যিনি মহাত্মা এবং বাপু নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিত, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, তিনি কখনোই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাননি। অথচ, তাঁর মতো নির্ভুল ও শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিত্বের তুলনায় অনেক অখ্যাত ও বিতর্কিত ব্যক্তি এই পুরস্কার পেয়েছেন। এতে স্পষ্ট যে নোবেল শান্তি পুরস্কার সবসময় যথার্থ মাপকাঠিতে প্রদান করা হয় না।
২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের সময়, যখন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত ছিল এবং দেশের ভেতরে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তখন শেখ হাসিনা সাহসিকতার সঙ্গে সামরিক বাহিনীকে সংযম ও ধৈর্য ধরতে বলেন। প্রতিশোধের খুন-খুনসুটি না করে, শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তাঁর এই অহিংস নীতি, যেটি মহাত্মা গান্ধীর অহিংস দর্শনের প্রতিফলন, বিডিআর বিদ্রোহের চরম বিপদজনক পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় মাইলফলক কি না, তা অবশ্যই বিবেচনার দাবি রাখে। অন্যদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পেছনে অনেক বড় আন্তর্জাতিক সমর্থন ছিল। তাঁর নোবেল প্রাপ্তির অন্যতম কারণ ছিল আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর এবং গ্রামীণফোনের ব্যবসায়িক পার্টনার টেলিনরের শীর্ষ কর্মকর্তা স্টেইন টোনেসন। তিনি ড. ইউনূসকে নোবেল বিজয়ী করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তদবির করেন। টেলিনর নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রধান স্পনসর হওয়ায়, তাদের আমন্ত্রণেই ড. ইউনূস ঘনঘন নরওয়ে সফর করতেন। তবে, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে বা চীন এবং ভারতে ড. ইউনূসের ব্যাপারে তেমন কোনো মাতামাতি নেই। এর অর্থ হচ্ছে, শুধু পুঁজিবাদী দেশগুলোর জন্যই ড. ইউনূস গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেক অংশ তাঁর নোবেল পুরস্কারকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় না।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুইবার জাতিসংঘের ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সেরেস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। এছাড়াও, তিনি ভারতের ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার, নোবেল বিজয়ী পার্ল এস বাক পুরস্কার, এবং মাদার তেরেসা পুরস্কার পেয়েছেন। তবে, মুহাম্মদ ইউনূসের মতো তিনি এসব পুরস্কার প্রচার করে বেড়াননি। শেখ হাসিনার পুরস্কারগুলো যদি লবিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া বলে মনে করা হয়, তবে মুহাম্মদ ইউনূসের লবিং ক্ষমতা নিঃসন্দেহে আরও বিস্তৃত, যেখানে তাঁর পেছনে বিল ক্লিনটন, হিলারি ক্লিনটন, বারাক ওবামা, জার্মান চ্যান্সেলর মারকেল, স্পেনের রানী সোফিয়া, জাপান ও ফ্রান্স সরকার, আইএমএফ, স্টেইন টোনেসন, টেলিনর, এবং নরওয়ে সরকারসহ অনেকেই ছিলেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কারের আড়ালে থাকা রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থগুলোও স্পষ্ট। নোবেল কমিটি প্রায় ৫০ বছরের জন্য পুরস্কার প্রদানের ফ্যাক্টস এবং ফাইলস গোপন রাখে, যাতে তাদের ভুল-ভ্রান্তি বা বিশেষ ব্যক্তির প্রতি পক্ষপাতের বিষয়ে কেউ সমালোচনা করতে না পারে। এটর্নি জেনারেল মাহবুব আলম দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শেখ হাসিনা এবং সন্তু লারমার নোবেল পুরস্কারের প্রাপ্যতার দাবি করেছিলেন, তবে উপরের যুক্তি ও প্রমাণের বিচারে শেখ হাসিনার নোবেল প্রাপ্তি কি মুহাম্মদ ইউনূসের চেয়ে বেশি যুক্তিযুক্ত নয়? যারা মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তিকে দেশের গৌরব ও সমৃদ্ধির প্রতীক মনে করেন, তারা কি শেখ হাসিনার জন্যও নোবেল পুরস্কারের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বারের মতো নোবেল বিজয়ী দেশের মর্যাদায় উন্নীত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবেন না?
উপরের আলোচনার ভিত্তিতে, এটি স্পষ্ট যে শেখ হাসিনা নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য একজন যোগ্য প্রার্থী।
শেখ হাসিনা কখনোই ব্যক্তিগতভাবে নোবেল পুরস্কার প্রত্যাশা করেননি এবং করবেনও না, কারণ তিনি মুহাম্মদ ইউনূস নন। তবুও, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ড. হুমায়ুন আজাদ এবং তসলিমা নাসরিনের পাশাপাশি, শেখ হাসিনাই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতম দাবিদার। শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদান এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রমাণ করে তিনি কতটা যোগ্য।
শেখ হাসিনা চারটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন, যা অনেক শান্তিকামী ব্যক্তি কখনোই পাননি। তাঁর অর্জনগুলো শুধু নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠার বাস্তব প্রেক্ষাপটের মধ্যেও প্রমাণিত: শেখ হাসিনার শান্তি পুরস্কারসমূহ: ১) জাতিসংঘের ২টি পুরস্কার (শান্তিতে ১টি) ২) ভারত সরকারের ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার ৩) মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার ৪) মাদার তেরেসা পুরস্কার ৫) নোবেল বিজয়ী পার্ল এস বাক পুরস্কার শুধু পুরস্কারের সংখ্যাতেই নয়, তাঁর কাজও প্রতিফলিত হয়েছে। যেমন: ৬) রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সম্পাদন ৭) পানিচুক্তির মাধ্যমে সীমিত হলেও কৃষকদের স্বস্তি নিশ্চিত করা ৮) ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা ৯) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করার প্রতিশ্রুতি পালন ১০) জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্ত দেশের পক্ষে জাতিসংঘের মঞ্চে আপোষহীন দাবি তোলা ১১) বিডিআর বিদ্রোহের সময় অহিংস পন্থায় রক্তপাতহীনভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ
শেখ হাসিনার নোবেল প্রাপ্তির সম্ভাবনা শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে এই ১১টি যুক্তিই নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য যথেষ্ট। যদিও তিনি কখনো পুরস্কারের জন্য উন্মুখ ছিলেন না বা তদবির করেননি। তাঁর পুরস্কার অর্জনগুলো সম্পূর্ণ নিজ যোগ্যতায়।
অন্যদিকে, মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কারের পেছনে বড় আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং বন্ধুবান্ধবের তদবির ছিল। কিন্তু ইউনূস শুধু নোবেল পুরস্কারই পেয়েছেন, অন্য কোনো শান্তি পুরস্কার নয়। এখানেই শেখ হাসিনা এবং ইউনূসের মধ্যে পার্থক্য—শেখ হাসিনা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন, যা তাঁর অহিংস নীতির প্রমাণ। তত্ত্বীয় এবং ফলিত বাস্তবতা
দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে শেখ হাসিনার নোবেল প্রাপ্তি বিবেচনা করা যেতে পারে:
১) তত্ত্বীয় বা যৌক্তিক বিচারে: শেখ হাসিনার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি কখনোই নোবেল প্রাপ্তির জন্য প্রচেষ্টা করেননি। তাঁর অর্জনগুলো লবিং বা তদবির ছাড়াই এসেছে।
২) বাস্তবতার নিরিখে: যেহেতু নোবেল শান্তি পুরস্কার বিতর্কিত অনেক ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে, ফলিত দিক থেকে শেখ হাসিনাও নোবেল প্রাপ্তির উপযুক্ত। তাঁর পক্ষে জাতিসংঘের স্বীকৃত দুটি পুরস্কার রয়েছে, যা তাঁর যোগ্যতার প্রমাণ। বর্তমান নোবেল কমিটির কর্মকাণ্ড এবং পদ্ধতি প্রহসনমূলক। নরওয়ে সরকার নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিতর্কের মূল কারণ। সুইডিশ কর্তৃপক্ষ এই দায়িত্ব নিজেরা গ্রহণ করলে, হয়তো শেখ হাসিনার মতো যোগ্য ব্যক্তিরা ন্যায়বিচার পেতে পারেন। তবে সত্যিকার অর্থে, শেখ হাসিনার জন্য নোবেল প্রাপ্তির প্রয়োজন নেই। তাঁর কাজ এবং অর্জনগুলোই তাঁর আসল পরিচয়, এবং গুণীদের যথার্থ কদর আমাদের করা উচিত, যেটা বিদেশি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান অনেক ভালোভাবেই করে থাকে।
লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপ ও বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান- দৈনিক ভোরের আওয়াজ, The Daily banner –

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট