চাঞ্চল্যকর আমেরিকা প্রবাসী জীবন হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ওই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।সোমবার(১এপ্রিল) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেসব্রিফিং এ কথা জানানো হয়।
এসময় পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম পিপিএম সেবা সাংবাদিকদের বলেন, গত ৩০মার্চ শেরপুর সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদীর বালুর চরে মৃত আব্দুল হালিম জীবন (৪৮) নামে আমেরিকা প্রবাসীর লাশ পাওয়া যায়। মৃতের শরীরে বিভিন্ন স্থানে ও পায়ে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন দেখা যায় ।
শেরপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, (অর্থ ও প্রশাসন) খোরশেদ আলম, এর নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা শাখা, শেরপুর এর অফিসার ও ফোর্সদের সহায়তায় চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যা কান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত মোট ০৬ (ছয়) জন আটক করে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন,শেরপুর সদর উপজেলার চরজঙ্গলদী এলাকার মো: ইলিয়াছ উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রউফ (৪৫), ডাকপাড়া গ্রামের মো: আবেদ আলীর ছেলে মোবারক হোসেন মোস্তাক (৩২) পূর্বশেরী মহল্লার ফারুক আহাম্মদ এর স্ত্রী রুপা বেগম(২৮),কান্দাশেরীচর এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম(৪০) , এছাড়াও ডাকপাড়া গ্রামের আফিল উদ্দিনের ছেলে রাকিব হোসেন , একই গ্রামের হযরত আলীর ছেলে মো: কালু মিয়া দুজনেই ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রেসব্রিফিং এ পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, আব্দুল হালিম জীবন (৪৮) বাংলাদেশ বংশদ্ভূত আমেরিকার পাসপোর্টধারী দ্বৈত নাগরিক।
তিনি দীর্ঘ ২৫ (পঁচিশ) বছর আমেরিকায় বসবাস করে দুই বছর পূর্বে বাংলাদেশে এসে নিঃসন্তান হওয়ায় দুই বছর পূর্বে ২য় বিয়ে করে। তার ২য় বিয়ে এবং পারিবারিক বিষয় নিয়ে পিতামাতার সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধের জের হিসেবে জীবন এর পিতা জীবনের এর বিরুদ্ধে ০৪ টি মামলা করে এবং জীবন ও তার স্ত্রী তার পিতার বিরুদ্ধে ০২ টি মামলা করে। একটি মামলায় তার পিতা দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস কারাভোগ করে এক সপ্তাহ পূর্বে জামিনে আসে। এই কারণে পরিবারের লোকজন আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে তার আমেরিকান প্রবাসী আর এক ভাই এর বন্ধু শাহিনকে দিয়ে জীবনকে শায়েস্তা করতে বললে শাহিন তার ব্যবসায়িক পার্টনার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফকে দিয়ে জীবনকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে।
এর প্রেক্ষিতে আব্দুর রউফ তার সাঙ্গপাঙ্গ কালু, ময়নাল, জিহাদ, মোবারকদের জীবনকে শায়েস্তা করার জন্য নির্দেশ দিলে কালু তার ০২ জন পূর্ব পরিচিত মহিলা মনোয়ারা বেগম ও রুপা বেগমকে বিষয়টি জানায়। এর সূত্র ধরে রুপা বেগম জীবন এর সাথে প্রেমের অভিনয় করে গত ইং ৩০ মার্চ অনুমানিক সাড়ে তিনটার সময় জীবনকে ডেকে এনে কৌশলে আসামীদের নিকট তুলে দেয়। আসামী আব্দুর রউফ, কালু, ময়নাল, জিহাদ, মোবারকগন জীবনকে একটি ঘরে আটক করে রাত আনুমানিক ৯ ঘটিকার সময় জীবন এর মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রীর নিকট ৯৩,০০০/- টাকা মুক্তিপন দাবী করে অপহরণের নাটক সাজানোর চেষ্টা করে।
পরবর্তীতে আসামীগন আব্দুল হালিম জীবনকে শেরপুর সদর থানাধীন চুনিয়াার চর গিয়াস উদ্দিন এর বাড়ির দক্ষিন-পশ্চিম দিকে ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে ফাকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে মারপিট ও ছুরিকাঘাত করে নৃশংস ভাবে হত্যা নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ধস্তাধস্তিতে আসামী কালু ও জিহাদ আহত হয়।পরে তারা নিরাপদ চিকিৎসার জন্য প্রথমে জামালপুর পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন । হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি চাকু উদ্ধার করেছে পুলিশ ।
ব্রিফ্রিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সপার (প্রশাসন ও অর্থ) খোরশেদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল ) মো: সাইদুর রহমান সহ শেরপুরে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন ।