
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মিরপুরে অবস্থিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। সকাল থেকেই স্মৃতিস্তম্ভ এলাকায় দলীয় ব্যানার, স্লোগান ও নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে একটি ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়। একদিনের জন্য হলেও ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক শক্তিগুলো একই স্থানে একত্র হওয়াকে অনেকেই দেখছেন প্রতীকী ঐক্যের বার্তা হিসেবে।
শ্রদ্ধা নিবেদন: আনুষ্ঠানিকতা না অঙ্গীকার
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার। তবে বাস্তব রাজনীতিতে সেই অঙ্গীকার কতটা কার্যকর—তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। অতীতের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করা হলেও বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নির্বাচনী বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব লক্ষ্য করা গেছে।
রাজনীতির ভাষা ও বাস্তবতার ফারাক
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দলের নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরলেও অধিকাংশ বক্তব্যেই ছিল পরিচিত রাজনৈতিক ভাষা। বিশ্লেষকদের মতে, শহীদদের আদর্শ বাস্তবায়নে প্রয়োজন দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় ঐকমত্য গঠন। কিন্তু মাঠের রাজনীতিতে সেই ঐকমত্যের বাস্তব প্রতিফলন এখনো দৃশ্যমান নয়।
জনগণের চোখে শহীদ দিবস
স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাধারণ মানুষ ও তরুণদের অনেকে মনে করেন, শহীদ দিবস রাজনৈতিক বক্তব্যের চেয়ে আত্মসমালোচনার দিন হওয়া উচিত। তাদের ভাষায়, শহীদদের রক্তের মূল্য তখনই পরিশোধ হবে, যখন দেশে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে।
প্রতীকী ঐক্যের সীমাবদ্ধতা
একই মঞ্চে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি ইতিবাচক বার্তা দিলেও, রাজনৈতিক বিভাজনের বাস্তবতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহীদ দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন যদি শুধুই আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা প্রজন্মের কাছে শহীদদের আদর্শকে দুর্বল করে তুলবে।
মিরপুরের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়—এই দেশ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে। কিন্তু সেই আত্মত্যাগের মর্যাদা রক্ষার দায় শুধু স্মরণে নয়, কর্মে। রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—শহীদদের আদর্শকে বক্তব্যে নয়, বাস্তব রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিফলিত করা।