
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট, বিপুল অর্থ আত্মসাৎ এবং ভর্তি-বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে তিনি সরকারি অর্থে নির্মিত আধুনিক একতলা ভবনের আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক ফিটিংস,দরজা, জানালা, ফ্যান, ফায়ার ইকুইপমেন্ট সহ নানা সরঞ্জাম চুরি বা অপসারণে জড়িত। যা ভবনের ব্যবহার শুরু হওয়ার আগেই ভবনটি কার্যত ব্যবহারের অনুপযোগী করে তুলেছে। একই ভবনের প্রাচীর নির্মাণের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে এই টাকা পুরোটাই আত্মসাৎ করেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্কুলের ক্লার্ক মোরশেদুল হক লিওন অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে টোকেন বা চিরকুটের মাধ্যমে কোন প্রকার ভাউচার ছাড়াই ক্যাশ থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছেন। এর আগেও তিনি একবার বরখাস্ত হয়ে পাঁচ বছর ছিলেন। বরখাস্ত কালীন সময়ের পাঁচ বছরের টাকা হিসেবে তিনি স্কুলের ফান্ড একাউন্ট থেকে ৭০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছে বলে দাবি তার। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তানদের ভর্তি এবং অতিরিক্ত শিফটে ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি বাবদ প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদের নিয়োগও নিয়ম নীতির পরিপন্থী ছিল। বোর্ডের অনুমোদন কিংবা সরকারি প্রতিনিধিদের উপস্থিতি ছাড়াই স্থানীয় স্কুল কমিটির মাধ্যমে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও সম্পূর্ণ ভুয়া। ঐদিন উল্লেখিত পত্রিকায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগের কোন বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়নি। এমনকি ভাইবা বোর্ডে কর্তৃপক্ষের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল না। পরিষ্কার করে বলা যায়, তার নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ। এই মর্মে মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক তাকে অবৈধ ঘোষণা করে চিঠি পাঠানো হয়। এমনকি ডিজি অফিস থেকেও তাকে অপসারণের জন্য প্রশাসন ও সভাপতি কর্তৃক চিঠি ইস্যু করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে সভাপতি উল্লাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনাব আতাউর রহমান ও উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব আবু সালেহ মোহম্মদ হাসনাত এর বৈঠকে রেজুলেশন করে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদকে অপসারণ করা হয় এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে জনাব জাহাঙ্গীর আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত তিনদিন আগে সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ জোরপূর্বক প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে এসে বসেন এবং তিনি বলেন হাইকোর্ট তার ক্ষেত্রে স্টেই অর্ডার দিয়েছে। উল্লাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জনাব আব্দুল কাদের সাহেব জানান হাইকোর্টের এমন নির্দেশনায় প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসার আইনগত কোন ভিত্তি নেই আব্দুল মজিদের। রাজশাহী মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক জনাব শামীম হাসান জানান এভাবে জোরপূর্বক একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে বসে যাওয়া মানবতা গর্হিত কাজ। সাবেক সভাপতি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনাব আতাউর রহমান ও বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বিষয়টিকে ন্যায়-নীতির পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন এবং কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের আগ পর্যন্ত কিংবা হাইকোর্টের নির্দেশনার পেপারটা সঠিক কিনা যাচাই-বাছাইয়ের আগ পর্যন্ত আব্দুল মজিদকে স্কুলে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। বাস্তবতা হলো হাইকোর্টের অর্ডার থাকলেও ডিজি অফিস থেকে এবং মাউশি থেকে অনুমোদন বহির্ভূত প্রধান শিক্ষক পদে আব্দুল মজিদ বসতে পারেন না। একটি রাজনৈতিক দলের একাংশের ছত্র ছায়ায় তিনি এমন গর্হিত কাজ করার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন। সবার কাছেই নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অপরাধে চরিত্রহীন এই প্রধান শিক্ষকের অপসারণ প্রাণের দাবি। ডিজি মহোদয় সহ প্রশাসনের এবং শিক্ষা বোর্ডের ঊর্ধ্বতম কর্মকর্তাদের কাছে উল্লাপাড়া বাসির একান্ত দাবি, চরিত্রহীন ও দুর্নীতিবাজ প্রমাণিত অপরাধী আব্দুল মজিদকে দ্রুত অপসারণ করে উল্লাপাড়া মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলকে বাঁচাতে হবে।