1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
জয়পুরহাটে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত সারে ৫ ঘণ্টা পর চলাচল স্বাভাবিক কালাইয়ে “সবুজে সাজাই বাংলাদেশ” শ্লোগানে প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের উদ্যোগে গাছের চারা বিতরণ রিলিজের পরই সাড়া ফেলেছে ‘যোগফলে হয় ভুল’, প্রশংসিত নির্মাতা জয় রাফি চকরিয়ায় থানার বিশেষ অভিযানে ৭ আসামি গ্রেফতার শিবগঞ্জে প্রগতি সংস্থার আয়োজনে বাল্যবিবাহ ও আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক শিক্ষার্থী সমাবেশ সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে : মুহাম্মদ আফাজ উদ্দিন ২ কেজি গাঁজাসহ টাঙ্গাইলের দুই যুবক গ্রেফতার, আমি আওয়ামীলীগ পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছি না :: কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন বানচালের জন্য একটি চক্র গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত: কে এম মামুনুর রশিদ জয়পুরহাটে সাবেক এমপি গোলাম মোস্তফার বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত

খোলা চিঠি বরাবর: ড. মুহাম্মদ ইউনুস

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৫

খোলা চিঠি
বরাবর: ড. মুহাম্মদ ইউনুস
নোবেলজয়ী ও প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়,
বিষয়: মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছনা মানে জাতির আত্মমর্যাদার অবমাননা
ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যার,
আসসালামু আলাইকুম।
আপনাকে এই খোলা চিঠি লিখছি এক গভীর ব্যথা, লজ্জা ও বেদনার মুহূর্তে।
“বিগত সময় থেকে আজ পর্যন্ত যতজন বীর মুক্তিযোদ্ধা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন—সেটি যে সরকারের আমলেই ঘটুক না কেন, আমি প্রতিটি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এই খোলা চিঠি লিখছি।”
গতকাল ঢাকায় ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক ঘটনার কথা আপনিও নিশ্চয়ই জেনেছেন—যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের স্বাধীনতার মশাল প্রজ্বলন করেছিলেন, যাদের রক্ত, ঘাম আর ত্যাগে এই লাল-সবুজ পতাকা আমাদের হাতে এসেছে, সেই মুক্তিযোদ্ধারাই চরমভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এই দৃশ্য কেবল তাদের জন্য নয়, সমগ্র জাতির জন্য এক অমোচনীয় কলঙ্ক।
স্যার -এই লজ্জা আমরা রাখি কোথায়?
যাদের রক্তে রঞ্জিত এই লাল-সবুজ পতাকা, যাদের বুকের সাহস আর আত্মত্যাগে জন্ম নিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ—আজ তারাই নিজের জন্মভূমিতে অপমানিত, লাঞ্ছিত, নিরাপত্তাহীন! যে বীরেরা ১৯৭১-এ মৃত্যুকে তুচ্ছ করে আমাদের জন্য মুক্ত আকাশ উপহার দিয়েছিলেন, আজ তাদের বুকের উপরই চাপানো হচ্ছে অপমানের শেকল। এই দৃশ্য শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নয়—আমাদের জাতির বিবেককেই বিদ্ধ করছে। আমরা কি এতটা অকৃতজ্ঞ? আমরা কি সত্যিই সেই রক্তঋণের মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ?
মহোদয়,
আমি যখন মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত হতে দেখি, তখন মনে হয় যেন আপনাকেও অপমান করা হলো। কারণ, ১৯৭১ সালে আপনি যখন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন, তখন শুধু একজন অর্থনীতিবিদ বা শিক্ষক ছিলেন না—আপনি ছিলেন প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের এক অক্লান্ত সৈনিক। আপনি লেখনীর মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জনমত গঠনের মাধ্যমে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ ও মানবিক সহায়তা সংগ্রহের মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়েছিলেন। আপনি ছিলেন সেই নীরব কণ্ঠস্বর, যে কণ্ঠ বিশ্ববাসীর কানে পৌঁছে দিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যা আর নির্যাতনের খবর। আপনার ভূমিকা কোনো অংশে কম নয় একজন ফ্রন্টলাইনের মুক্তিযোদ্ধার।
আপনার জীবনীতে আমরা পড়েছি—কিভাবে আপনি মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের কাছে গিয়েছেন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট কিংবা টাইম ম্যাগাজিনের সাংবাদিকদের সঙ্গে কাজ করেছেন, কিভাবে জাতিসংঘ ও হোয়াইট হাউসে চিঠি পাঠিয়ে পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন গড়ে তুলেছিলেন। শুধু তাই নয়, যুদ্ধকালীন সময়ে শরণার্থীদের খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা—এসব কাজও আপনি অক্লান্তভাবে করেছেন।
তাহলে আজ প্রশ্ন জাগে—যদি সেই মুক্তিযোদ্ধারা লাঞ্ছিত হন, তাহলে কি আপনার সেই অবদানও অবমানিত হয় না? আপনার সেই রক্ত-ঘাম দিয়ে গড়া আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাও কি মাটিতে মিশে যায় না?
মহোদয়,
মুক্তিযোদ্ধাদের এই লাঞ্ছনা কেবল একজন বা দুজন মানুষের অপমান নয়—এটি আমাদের সমগ্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি অবমাননা। এটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে হেয় করা। এটি সেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ত্যাগকেও অস্বীকার করা, যিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে সম্মুখ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শহীদ জিয়ার মতো বীর মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারকে যারা অস্বীকার করে, তারা মূলত গোটা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেই বিকৃত করার চেষ্টা করছে।
আজ আমরা যদি মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হই, তাহলে আসলে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করতে। আমাদের পতাকার লাল অংশে যে শহীদের রক্তের স্মারক রয়েছে, সেটিকে আমরা নিজের হাতে মলিন করছি।
আপনার মতো মানুষ, যিনি মুক্তিযুদ্ধকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উচ্চকণ্ঠে তুলে ধরেছিলেন, আজ যদি দেখেন যে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের দেশেই অপমানিত হচ্ছেন—তাহলে নিশ্চয়ই আপনার হৃদয় রক্তাক্ত হচ্ছে। আপনার মতো একজন নোবেল জয়ী বিশ্বনন্দিত বাঙালি যদি আজকের এই লজ্জার বিষয়ে কথা না বলেন, তাহলে হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না।
ডক্টর ইউনুস স্যার,
এই চিঠির মাধ্যমে আপনাকে অনুরোধ করছি—আপনি আবারো কণ্ঠ তুলুন। আপনি বলুন, মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছনা মানে জাতির লাঞ্ছনা। আপনি বলুন, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে, তারা আসলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকেই অস্বীকার করে। আপনি বলুন, মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান মানে জিয়াউর রহমানসহ সব সেক্টর কমান্ডারদের ত্যাগকে অস্বীকার করা।
আমরা জানি, আপনার কণ্ঠ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখনো প্রতিধ্বনিত হয়। আপনার কথা বিশ্ব শুনবে। তাই আজ এই দুঃসময়ে আপনাকে দরকার আমাদের।
হে প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক,
হে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সহযোদ্ধা,
হে অর্থনৈতিক মুক্তির অগ্রদূত—
আপনার প্রতি আজকের এ আবেদন: মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষায় আবারো সামনে আসুন। বলুন, এই জাতি আর কোনোদিন যেন এমন লজ্জা ডেকে না আনে।
শেষ করছি গভীর বেদনা আর অশ্রুভেজা কলমে একটাই প্রশ্ন রেখে—
এই লজ্জা আমরা রাখি কোথায়?
শ্রদ্ধাভরে,
মো. কামাল উদ্দিন
সাংবাদিক, লেখক ও টেলিভিশন উপস্থাপক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট