গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনকারী তিস্তা নদীর উপর নির্মিত ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ মওলানা ভাসানী সেতুর ফলক ও ম্যুরাল উন্মোচন করে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বুধবার দুপুরে সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে চৌরাস্তার মোড়ে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উদ্বোধনোত্তর মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ মিয়া, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহামদ, নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজ কুমার বিশ্বাসসহ এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। আনন্দে মেতে ওঠে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সৌদি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এবং চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন সেতুটি নির্মাণ করেছে। প্রায় ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের আওতায় মূল সেতুর পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, নদী শাসন ও আধুনিক লাইটিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে।
সেতুটিতে ২৯০টি পাইল, ১৫৫টি গার্ডার, ৩০টি পিলার এবং ২৮টি স্প্যান বসানো হয়েছে। দুই প্রান্তে দেড় কিলোমিটার করে নদী শাসন করা হয়েছে। এছাড়া ৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে ৫৮টি ব্রিজ ও কালভাট। জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে মোট ১৩৩ একর।২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও প্রকৃত নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। ২০২৪ সালের জুনে অবকাঠামোর কাজ শেষ হলেও নানা জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে আজ থেকে সেতুটি সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলো।এই সেতু চালু হওয়ায় গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলো। ফলে সড়কপথে যাতায়াতের সময় প্রায় ৪ ঘণ্টা কমবে এবং ঢাকার দূরত্ব কমবে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। স্থানীয়রা আশা করছেন, এ সেতু দুই জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জীবনমানে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি পণ্য পরিবহন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় আসবে গতি। নিশ্চিত হবে কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য।
সেতুটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত সূচিত হলো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় জনসাধারণ।