গত ১৯ আগস্ট ২০২৫ তারিখে “Channel 24” কর্তৃক প্রচারিত “চট্টগ্রামে ব্যাটারি রিকশা আটক ঘিরে ট্রাফিক পুলিশের টাকার খেলা” শীর্ষক সংবাদটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ সাহেবের এই প্রতিবাদ বিবৃতি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী শুধু দায়িত্বশীলতার সাথেই নয়, বরং সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে। বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ যখন জনমনে ভুল ধারণা তৈরি করে, তখন এমন দৃঢ় অবস্থান জনগণকে সত্য জানতে সহায়তা করে এবং পুলিশের প্রতি আস্থা আরও সুদৃঢ় করে। সংবাদটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, উক্ত প্রতিবেদনে উপস্থাপিত তথ্যসমূহ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে প্রচারিত হয়েছে। পুলিশের পেশাদার দায়িত্ব পালনে কোনো অনিয়ম নেই-চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ নগরীর যানবাহনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। নগরীর সড়কগুলোতে অবৈধ ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন যানবাহনের কারণে প্রতিদিন নানামুখী সমস্যা তৈরি হয়, যা যানজট, দুর্ঘটনা ও জনদুর্ভোগ বাড়ায়। এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৮৯(২) ধারা মোতাবেক নিয়মিত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং বিধি মোতাবেক জরিমানা আদায় করা হয়।
উল্লেখ্য, এই জরিমানার অর্থ কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে নয়, বরং সরকার নির্ধারিত কোষাগারে জমা হয়। সিএমপি কর্তৃপক্ষ রাজস্ব স্ট্যাম্প ট্রেজারি থেকে সংগ্রহ করে থাকে এবং সরকারি কোড নং-১-৫০৪৩-০০০০-১১২১ এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ জমা প্রদান করা হয়। ফলে এখানে আর্থিক অনিয়ম বা অবৈধ লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই।
সংবাদ সংগ্রহের নামে আইন ভঙ্গ-
অভিযোগ রয়েছে, উক্ত প্রতিবেদনের সাংবাদিক বিনা অনুমতিতে পুলিশ বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে প্রবেশ করে ভিডিও ধারণ করেছেন, যা স্পষ্টতই আইনবহির্ভূত এবং সরকারি কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য প্রতিবেদককে যথাযথ নিয়মনীতি, জরিমানা আদায়ের প্রক্রিয়া ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দেখাতে চাইলে, সাংবাদিক তা উপেক্ষা করে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করেছেন। এ ধরনের আচরণ কেবল সাংবাদিকতার নীতিবিরোধী নয়, বরং জনমনে পুলিশ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টির এক অপচেষ্টা।
পুলিশের সততা ও দায়িত্বশীলতা-
বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের প্রধানতম আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই পুলিশের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বোচ্চ সততা, পেশাদারিত্ব এবং নিষ্ঠার সাথে জনসেবায় নিয়োজিত রয়েছে। এ বাহিনী কারো প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট নয় এবং কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ড বরদাশত করে না।
ভবিষ্যৎ সতর্কবার্তা-চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন— ভবিষ্যতে কোনো গণমাধ্যম বা ব্যক্তি যদি পুলিশের কার্যালয়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে ভিডিও ধারণ কিংবা অনভিপ্রেত আচরণ করেন, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমকে অনুরোধ জানানো হয়েছে— দায়িত্বশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে সত্য তুলে ধরতে, যাতে জনমনে বিভ্রান্তি না সৃষ্টি হয়। দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার মতামত-পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ সাহেবের সাম্প্রতিক প্রতিবাদকে আমরা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ হিসেবে দেখি। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার যে অঙ্গীকার করেছেন, তা কেবল একটি প্রশাসনিক ঘোষণা নয়, বরং নাগরিক সমাজের নিরাপদ ভবিষ্যতের প্রতি এক গভীর দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। আজকের বাস্তবতায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কেবল পুলিশের কাজ নয়, এটি সমগ্র সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব। কিন্তু একজন পুলিশ কমিশনার যদি সততার সঙ্গে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে অন্যায়, অপরাধ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ উঁচিয়ে ধরেন, তবে সেটি নিঃসন্দেহে পুরো বাহিনীকে অনুপ্রাণিত করে এবং জনগণকে আশ্বস্ত করে। এই প্রতিবাদ প্রমাণ করে যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন আর শুধু দেখেশুনে থাকার অবস্থানে নেই—বরং তারা দৃঢ়ভাবে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে প্রস্তুত। আমরা মনে করি, গণমাধ্যমেরও এখানে বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। পুলিশের ইতিবাচক উদ্যোগ, অপরাধ দমনে দৃঢ় অবস্থান এবং নাগরিক সচেতনতার প্রচারণা যদি সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে নিয়মিতভাবে স্থান পায়, তবে সাধারণ মানুষও অনুপ্রাণিত হবে। জনগণের পাশে পুলিশ—এই বার্তাটি যত বেশি প্রচার হবে, সমাজের অপরাধপ্রবণতাও তত দ্রুত হ্রাস পাবে। চট্টগ্রাম একটি ঐতিহাসিক ও বাণিজ্যনগরী। এখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচল, কোটি কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, এবং বহুমুখী কর্মচাঞ্চল্য ঘটে। এ নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মানে দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তিকে সুরক্ষিত করা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে পুলিশ কমিশনারের প্রতিবাদী অবস্থান কেবল প্রশাসনিক স্বার্থ নয়—এটি জাতীয় স্বার্থেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা আশাবাদী যে, পুলিশের এই সততা ও অঙ্গীকারকে সমর্থন দিয়ে নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম এবং সবস্তরের মানুষ একসাথে এগিয়ে আসবে। কারণ একটি শহর তখনই নিরাপদ হয়, যখন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণ মিলিতভাবে অপরাধের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনারের প্রতিবাদ তাই কেবল একটি তাৎক্ষণিক বক্তব্য নয়, বরং এটি একটি নৈতিক ঘোষণা—যার ওপর ভর করে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ চট্টগ্রাম গড়ে উঠতে পারে।