1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৫৪ অপরাহ্ন

হাইকোর্টের রায় অবজ্ঞা করে রংপুরে শিক্ষক নিয়োগে চাঞ্চল্যকর অনিয়ম!

 মোঃ উজ্জ্বল সরকার
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

হাইকোর্টের রায় অবজ্ঞা করে কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুরে শিক্ষক নিয়োগে চাঞ্চল্যকর অনিয়ম!

 হাইকোর্টের রায়কে অবজ্ঞা করে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক নিয়োগে চাঞ্চল্যকর অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জনাব আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও পুনরায় চাকরিতে ফিরে আসার অপচেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।

১৯৯৮ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক (কৃষি) পদে আলতাফ হোসেন ২০০১ সালের ১ এপ্রিল যোগদান করেন বলে দাবি করেন। তবে দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তার কোন নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র কিংবা প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষা বোর্ডে খুঁজে পাওয়া যায়নি।২০১২ সালে অডিট চলাকালে তার কাছে নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র চাইলে তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন। এছাড়া তদন্তে উঠে আসে, যোগদানের সময় তার কাছে সহকারী শিক্ষক পদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল না। তিনি এসএসসিতে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ ছিলেন এবং ২০১২ সালে অর্থাৎ নিয়োগের ১১ বছর পর একটি কৃষি ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।২০০৬ সালের ১৬ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদের সভায় তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়। যদিও ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে তার পুনঃনিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়, শর্ত ছিল—তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করবেন। ২০০৭ সালের ৩ এপ্রিল তাকে অস্থায়ী ভিত্তিতে পুনরায় নিয়োগও দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রচলিত আইনে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের শর্তে চাকরি প্রদানের কোনো বিধান নেই।২০১২ সালে তাকে বরখাস্ত করে কেকা সরকার নামে আরেকজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আলতাফ হোসেন এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করেন এবং সব কটিতেই হেরে যান। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করলে বিষয়টি মহামান্য হাইকোর্টে গড়ায়।রিট পিটিশন নং ১৪৬৭৯/২০১৮ অনুযায়ী, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড তদন্ত শেষে মতামত দেয়, তার চাকরির যোগ্যতা ছিল না এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যথাযথ নথির অভাব ছিল।পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়—অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জনাব এ.ডব্লিউ.এম রায়হান শাহ, জেলা শিক্ষা অফিসার রোকসানা বেগম এবং শিক্ষক প্রতিনিধি এ.কে.এম মনিরুজ্জামান এই কমিটিতে ছিলেন। তদন্তে প্রমাণিত হয়, আলতাফ হোসেন ২০০১ সালে যোগদানের সময় যোগ্যতা অর্জন করেননি এবং কোনও আইনত ভিত্তিতে তাকে পুনঃনিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়।

তিনি পরে রিট পিটিশন নং ৮৩৪৯/২০২১ ও ১০২৩৬/২০১৯ দায়ের করেন। প্রথমটি প্রাথমিক শুনানিতেই খারিজ হয়ে যায়। দ্বিতীয় রিটে দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ১৮ মে তার আবেদন খারিজ করে। তিনি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে সিভিল পিটিশন নং ৩৬০১/২০২৩ দায়ের করেন, যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।এছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (এইচআরএম) প্রফেসর মো. নাসির উদ্দিন ও অফিসার ইনচার্জ (কমার্শিয়াল সেল) জনাব সিদ্দিকুর রহমান তদন্তে মত দেন যে, বেতন ও চাকরি সংক্রান্ত বিষয় প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির মাধ্যমেই নিষ্পত্তিযোগ্য।সর্বশেষ ৯ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে পরিচালনা পর্ষদের সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জনাব আবদুল মান্নান মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার উদ্যোগ নেন।স্থানীয় শিক্ষা মহলে প্রশ্ন উঠেছে—একজন অযোগ্য ব্যক্তি কীভাবে দীর্ঘ সময় ধরে একটি সম্মানিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে গেছেন, আর বারবার আদালতে হেরে যাওয়ার পরও কেন তার পুনঃনিয়োগের আবেদন গুরুত্ব পাচ্ছে?তদন্তকারী মহলের দাবি, আলতাফ হোসেনের বিষয়টি এখন আপিল বিভাগের বিচারাধীন এবং আদালতের চূড়ান্ত রায় ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তই গ্রহণযোগ্য নয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট