ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেনকে নিয়ে কটাক্ষ: চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেনকে নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্টে ব্যঙ্গ, অপমান এবং বিকৃত তথ্যের মাধ্যমে তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা আমরা গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি। একজন সমাজসচেতন, আদর্শবান, এবং সারাজীবন গণমানুষের পক্ষে লড়াই করে যাওয়া মানুষের বিরুদ্ধে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষা ব্যবহার কোনোভাবেই একজন সচেতন নাগরিক, বিশেষ করে সুশীল সমাজের অংশ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন রাজনীতির হঠাৎ ভেসে আসা চরিত্র নন। তিনি চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন বিগত চার দশকের বেশি সময় ধরে। আশির দশকে তিনি ছিলেন রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতা—একজন সংগ্রামী কর্মী, যিনি গনআন্দোলনের মধ্যে দিয়ে নেতৃত্ব গড়ে তুলেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অবস্থায় তিনি যে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেছিলেন, তা ছিল আদর্শ ও মূল্যবোধে উজ্জ্বল।
তিনি কোনোদিন রাজনীতি বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানে আসন গ্রহণের জন্য সুবিধাবাদী পথ অনুসরণ করেননি। বরং অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নির্ভীক কণ্ঠে সত্য উচ্চারণই ছিল তাঁর নৈতিক অবস্থান। তার ডাকে চট্টগ্রামে বহুবার রেলপথ ও সড়ক অবরোধ, ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সেই কর্মসূচিগুলো ছিল চট্টগ্রামের অধিকার ও অবহেলিত নাগরিক সেবা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দীর্ঘদিনের অবজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা।
যে ব্যক্তি চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে প্রায়শই লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চট্টগ্রামের দাবি তুলে ধরেছেন, সেই মানুষটিকে ব্যঙ্গ করে “রূপ পাল্টানোর অধ্যায়” বলাটা কেবল দৃষ্টিকটুই নয়—তা তাঁর দীর্ঘ সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগকে অবমূল্যায়ন করা।
ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বহু আগেই যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনলাইন টেলিভিশন “CCF TV” চালু করেছেন। এটি কোনো হঠাৎ উদ্ভূত উদ্যোগ নয়। এই টেলিভিশন মূলত সারা বিশ্বের ছড়িয়ে থাকা চট্টগ্রামবাসী, চট্টগ্রাম ভিত্তিক সংগঠন ও নাগরিকদের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করার একটি প্ল্যাটফর্ম। এখান থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়ন ভাবনা, সমস্যা, সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে নিয়মিত বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। এর মাধ্যমে শুধু চট্টগ্রামের কথা নয়, বাংলাদেশের বিকাশধারাকে প্রবাসে বসেও তুলে ধরছেন তিনি।
তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদ গ্রহণ করেছিলেন সময়ের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে। কিন্তু যখন দেখেছেন তাঁর আদর্শ ও অবস্থান সংগঠনের ভেতরে প্রতিফলিত হচ্ছে না, তখন সাহসের সঙ্গে পদত্যাগ করেছেন। একে যদি কেউ ব্যঙ্গ করে দেখে, তবে তা ব্যক্তি মনোভাবের সংকীর্ণতারই বহিঃপ্রকাশ।
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সর্বদা দল-মত নির্বিশেষে চট্টগ্রামের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আমরা যারা তাঁর সহযাত্রী, জানি তিনি কখনো সুবিধা আদায়ের রাজনীতি করেননি। তিনি নীতির প্রশ্নে আপসহীন এবং মূল্যবোধে অনড়। তাঁকে কটাক্ষ করে লেখা যে বক্তব্যটি ভাইরাল হয়েছে, সেটি সুশীল সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
সাংবাদিকদের দায়িত্ব সত্যের পক্ষে কলম চালানো। মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই আছে, কিন্তু কারও ব্যক্তিগত আক্রমণ বা চরিত্র হননের অধিকার কারো নেই।
ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন আজীবন গণতন্ত্রের পক্ষে, সমাজের নিপীড়িত মানুষের পাশে এবং চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নের আন্দোলনে ছিলেন এবং থাকবেন। তাঁকে ছোট করতে চাওয়া মানে চট্টগ্রামের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনকেই ছোট করে দেখা।
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে আমরা এই অপচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং আশা করি সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং বিবেকবান মানুষ এই ধরনের মিথ্যাচার ও কটাক্ষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন – চট্টগ্রামের গর্ব, আমাদের অহংকার।
তাঁর নেতৃত্বেই আমরা চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।