1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১১:১৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
চট্টগ্রামের চেতনার দীপ্ত মশাল: দেশবিদেশে এক আলোকবর্তিকা ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন খোকসায় তুচ্ছ ঘটনায় বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা: এলাকায় শোকের ছায়াঁ জুতার মালার কি রাষ্ট্রীয় উদ্বোধন! চট্টগ্রামের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর:সংকটের আবরণে লুকানো এক সাংস্কৃতিক রত্ন ৪২টি মামলা নয়, রাজপথের পদক! চট্টগ্রামের সংগ্রামী সৈনিক আবু সুফিয়ান ‎কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক মাসুদ  গ্রেফতার “শোক বার্তা “ এসপি কর্তৃক কুষ্টিয়া মডেল থানা বার্ষিক পরিদর্শন চট্টগ্রামের নাগরিক আন্দোলনের সাহসী যোদ্ধা মঈনউদ্দীন মহসিনের স্মরণে অশ্রুসিক্ত শোকসভা প্রবাসী সাংবাদিকতা য়সাইফুল ইসলাম তালুকদারকে সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান করলো প্রবাসী কর্ণফুলী ক্রীড়া পরিষদ

জুতার মালার কি রাষ্ট্রীয় উদ্বোধন!

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫

যাদের গলায় একসময় ফুলের মালা পরিয়ে সম্মান জানিয়েছিল জনগণ, আজ তাদেরই গলায় পরানো হচ্ছে জুতার মালা। এ যেন ইতিহাসের নির্মম প্রতিশোধ কিংবা গণ-স্মৃতির এক ধ্বংসাত্মক বহিঃপ্রকাশ। এই দৃশ্য শুধু রাজনৈতিক বিক্ষোভ নয়, এটি একটি সমাজের মূল্যবোধ ও নৈতিক অবক্ষয়ের করুণ প্রতিফলন। যাদের করতালি আর বন্দনায় একদিন জনসভা মুখর ছিল, আজ তাদের ঘিরে স্লোগান উঠে—“গলায় জুতা, মুখে লজ্জা!” এই সংস্কৃতি দেখে আমি ভীষণভাবে আহত ও মানসিক ভাবে বিষণ্ন, এবং মানসিকভাবে এক গভীর আঘাত অনুভব করছি।

মানুষ বিচার চায়, প্রতিকার চায়—কিন্তু তা না পেলে যখন জুতা হয়ে ওঠে প্রতিবাদের ভাষা, তখন বোঝা যায় সমাজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্রের জায়গায় যখন প্রতিহিংসা আর অপমানের প্রকাশ পায়, তখন সেটি আর কৌতুক নয়—এটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা ও আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত দলিল। অপমানের প্রতিক্রিয়ায় আবারো নতুন অপমান জন্ম দিলে আমরা আর কখনও সভ্য সমাজে ফিরতে পারব না। আজ আমি এই ঘৃণার কথা লিখতে বসলাম—যা না লিখে থাকতে পারিনি, কারণ এই দৃশ্য আমাকে ভেতর থেকে নাড়া দিয়ে গেছে। কোনো রাষ্ট্র যখন মূল্যবোধ হারায়, তখন সম্মান আর অপমানের মাঝের রেখাটি মুছে যায়। ফুলের মালা যেখানে ছিল শুভেচ্ছার প্রতীক, সেখানে আজ জুতার মালা হয়ে উঠছে গণরোষের প্রতীক। এ যেন এক বিদ্রূপপূর্ণ বাস্তবতা—প্রতাপশালী ব্যক্তির গলায় জুতার মালা, আর সেটাই হচ্ছে “প্রশংসার” নতুন সংজ্ঞা!

নুরুল হুদার গলায় জুতার মালা: গণরোষের মহড়া ২০২৫ সালের জুন মাস। রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার হন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার একেএম নুরুল হুদা। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি সুনির্দিষ্ট মামলার ভিত্তিতে পুলিশ তাকে আটক করে। কিন্তু তার আগেই জনতা ধরে ফেলেছে “জনগণের শত্রু”—এমন ঘোষণায়। তারপর যা ঘটেছে, তা নিছক ঘটনা নয়—এটা ইতিহাসের অংশ। নুরুল হুদার গলায় জুতার মালা পরিয়ে স্থানীয় জনতা তাকে ঘিরে ধরে স্লোগান দেয়: “স্বৈরাচার হুদা, গলায় জুতা!”

ভিডিও ভাইরাল হয় মুহূর্তেই। সরকার বলেছে, এটা বেআইনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি আসে—আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। কিন্তু জনতা যেন জবাব দিয়েই রেখেছে—

“যে বিচার হয় না, তার বিচার হয় গলায় জুতা দিয়ে।” মুক্তিযোদ্ধার গলায়ও জুতার মালা! ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ৭৮ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হায় কানু, যিনি ছিলেন জাতীয় Bir Pratik ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য—তাকেও জুতার মালা পরিয়ে অপমান করা হয়। এই দৃশ্য শুধু মর্মান্তিক নয়, তা জাতির আত্মার ওপর আঘাত। যে মানুষ দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে লড়েছিলেন, আজ তাকে অপমান করা হচ্ছে জনতার হাতে।

প্রশ্ন জাগে—“এই দেশ কাদের? মুক্তিযোদ্ধাদের না দুর্নীতিবাজদের?” জুতার মালার রাজনীতি: অপমানের উৎসব-কয়েক দশক আগেও গলায় মালা মানেই ছিল সম্মান। আজ সেটা বদলে গিয়ে হয়েছে বিদ্রূপ। জুতার মালা এখন “জনরোষের রাষ্ট্রীয় উপহার”! রাজনীতি, দুর্নীতি, ভোটচুরি আর বিচারহীনতা— এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে জনগণের হাতে এখন আর শ্লোগান নয়, জুতা। এ যেন এক নতুন “গণতন্ত্র”— “জুতা আগে, বিচার পরে!” এই অসভ্যতা কেন থামে না? কারণ রাষ্ট্র নিজেই ব্যর্থ—

বিচার না করে জনগণকে “সহনশীল” হতে বলে। আর জনতা বলে,

“তোমরা যদি শাসন না পারো, আমরা শাসন করব জুতার মালায়!”

এ এক চরম ব্যর্থতার পরিচয়। রাষ্ট্র যেখানে নাগরিকদের আস্থার জায়গা হতে পারছে না, সেখানে গণ-অপমানই হয়ে উঠছে গণ-বিচার। সরকার কি ব্যর্থ নয়? হ্যাঁ, ব্যর্থ। কারণ সরকার যদি সত্যিই আইন কার্যকর করত, তাহলে কেউ জুতার মালা নিয়ে রাস্তায় নামত না। এই অপমানের দায় শুধু জনতার নয়—দায় রাষ্ট্রের, বিচার ব্যবস্থার, আর রাজনৈতিক প্রতারণার।  ভবিষ্যতের রূপরেখা: জুতার পথে গণতন্ত্র- যদি এই ধারা চলতেই থাকে, আগামী দিনে হয়তো বাজেটে “জুতার মালা বিতরণ তহবিল” রাখা হবে। রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী বা নির্বাচন কমিশনারদের সফরে ফুলের মালা নয়— বিক্ষোভকারীরা দাঁড়িয়ে থাকবে হাতে একজোড়া ছেঁড়া জুতা নিয়ে!

এখনই সময় সতর্ক হবার

যে রাষ্ট্রে জুতার মালা পরানো হয় মুখ বন্ধ করতে না পেরে, সেখানে গণতন্ত্র শুধু কাগজে থাকে, মানুষের হৃদয়ে নয়।

এই রীতি বন্ধ করতে হলে দরকার—

✔️ প্রকৃত বিচার ✔️ আইনের শাসন

✔️ জনআস্থার পুনরুদ্ধার,অন্যথায় ভবিষ্যতের বাংলাদেশ পরিচিত হবে একটি জুতামালাধারী সভ্যতা হিসেবে!

গলায় জুতা নয়, মুখে বিচার চাই।

এটাই হোক আগামীর শ্লোগান। এই লেখা লিখতে গিয়ে “জুতা পেটানোর ইতিহাস”—সুস্পষ্টভাবে উঠে আসে:জগৎজুড়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবাদের ভাষা বহুরূপী। কখনো তা শান্তিপূর্ণ অবস্থান, কখনো পোস্টার বা প্ল্যাকার্ড, আবার কখনো তা পরিণত হয় নাটকীয় ও প্রতীকী কোন কর্মে। এর মধ্যে সবচেয়ে তীব্র ও অপমানজনক প্রতীক হিসেবে বহু সংস্কৃতিতে ব্যবহৃত হয়েছে জুতা পেটানো বা জুতা নিক্ষেপ—যা মূলত অপমান, প্রতিবাদ এবং গণরোষের এক বহুল ব্যবহৃত সাংস্কৃতিক ভাষা। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে জুতাকে অশুচি ও অবমাননাকর প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ইসলামি সমাজে জুতা পবিত্রতার পরিপন্থী—তাই কারও দিকে জুতা ছোড়া নিছক শারীরিক আঘাত নয়, বরং তা একটি মানসিক ও সামাজিক অপমানেরও প্রকাশ। বিশ্ব রাজনীতিতে জুতা দিয়ে অপমানের ঘটনা অনেকবার ঘটেছে। ২০০৮ সালে বাগদাদে এক সংবাদ সম্মেলনে ইরাকি সাংবাদিক মুনতাজার আল-জায়েদি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের দিকে জুতা ছুঁড়ে মারেন। তিনি বলেছিলেন, “এই জুতা ইরাকের শহীদদের পক্ষ থেকে।” এই দৃশ্য বিশ্বজুড়ে ‘জুতা প্রতিরোধ’ নামে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে ওঠে। ২০১১ সালে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ করাচির আদালত চত্বরে জনতার রোষের মুখে জুতা নিক্ষিপ্ত হন। একইভাবে ২০১৮ সালে লাহোরে এক ধর্মীয় সভায় নওয়াজ শরীফের দিকেও জুতা ছোড়া হয়। ভারতীয় রাজনীতিতেও এমন ঘটনা কম নয়। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, বিজেপির লালকৃষ্ণ আদবানি, অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ বহু নেতা জনরোষের শিকার হয়েছেন—জুতা ও কালি নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে। এসব ঘটনা মূলত রাজনৈতিক ক্ষোভ, বিশ্বাসভঙ্গ ও সামাজিক অসম্মতির বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশেও জুতা পেটানোর ইতিহাস কম নয়। ১৯৮০-৯০ এর দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা তার কুশপুত্তলিকা বানিয়ে জুতা দিয়ে পেটাত। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর কুশপুত্তলিকায় জুতা মারার কর্মসূচি পালিত হয় দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনবিরোধী আন্দোলনেও পুতুল ও প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপের চিত্র দেখা গেছে। ২০২৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হায় কানু, একজন জাতীয় Bir Pratik ও কৃষক লীগ নেতা, চৌদ্দগ্রামে গ্রামবাসীর হাতে জুতার মালা পরিয়ে অপমানিত হন—যা জাতির জন্য গভীর লজ্জার ও হতবোধের এক ঘটনা হয়ে রইল।

২০২৫ সালে রাজধানীর উত্তরায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার একেএম নুরুল হুদার গলায় জুতার মালা পরিয়ে জনতা তাকে ঘিরে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। জুতা পেটানো বা ছোড়া—আইনের চোখে অপরাধ হলেও, অনেক ক্ষেত্রেই তা অসহায় জনতার ক্ষোভ ও অবদমনিত হতাশার প্রকাশভঙ্গি। যখন রাষ্ট্র বিচার দিতে ব্যর্থ হয়, তখন একজোড়া জুতাই হয়ে ওঠে প্রতিবাদের প্রতীক। তবে এই অপসংস্কৃতি রুখে দিতে হলে প্রয়োজন ন্যায়বিচার, আইন প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক জবাবদিহিতা।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট