ভোর নামলে কিছু মুখ আলো হয়ে ওঠে। কিছু নীরবতা ভরে ওঠে ভাষাহীন কবিতায়। ফারহানা ইয়ামিন—সে যেন এমন এক নাম, যে ভোরবেলা চায়ের ধোঁয়ার মতো ধীরে ধীরে জেগে ওঠে হৃদয়ের গহীনে, ঠিক যেমন চন্দ্রবিন্দুর মতো নীরব অথচ নিবিড়।
একটি রাজনীল শাড়ি, যার নকশার প্রতিটি কুন্তল যেন কোনও পুরাতন পুঁথির শিরোনাম। কপালে কোনো টিপ নেই, কিন্তু চোখে এক নিঃশব্দ দীপ্তি, যা শত গহনার ঊর্ধ্বে। তাঁর এক পাশে রাখা লাল রঙের চায়ের কাপ, আর টেবিলের ওপরে সেই অদৃশ্য অপেক্ষার ছায়া—যেখানে সময় থেমে আছে, আর হৃদয় ধুকপুক শব্দে বলে ওঠে: “সে কি আজ আসবে না?”
তিনি বসে আছেন, যেন ভোরের পাশে এক দৃষ্টি হয়ে। এক হাত গাল ছুঁয়ে রাখা, সেই চিরপরিচিত নারীমুহূর্ত—যেখানে কেউ একজন শুধু দেখে, কিন্তু বুঝতে পারে না, কত কবিতা জমে থাকে এমন এক শান্ত মুখাবয়বে। হয়তো কোনো পুরনো ভালোবাসার স্মৃতি জেগে উঠেছে, হয়তো আজকের সকালের পেছনে ঘুমিয়ে আছে এক চিরন্তন প্রণয়।
চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছে, আর সেই ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে এক অদৃশ্য পত্র লেখার ইচ্ছা জন্ম নিচ্ছে—
“প্রিয়, এই চায়ের কাপে আজ আমি তুমিই মিশিয়ে নিয়েছি… কেবল তুমি অনুপস্থিত, বাকিটুকু ভরে আছে তোমার স্মৃতিতে।”
এই ছবি শুধু একটি মুহূর্ত নয়। এটি একটি উপন্যাসের প্রথম অধ্যায় হতে পারে, কিংবা কোনও অসমাপ্ত কবিতা, যেটি শুরু হয় “ভালোবাসা” শব্দ দিয়ে, আর শেষ হয় “অপেক্ষা” দিয়ে। আলো-ছায়ায় ঢাকা চারপাশ যেন এক কাচঘেরা বাস্তবতা, আর তার ভেতর ফারহানা—একজন নারী, যিনি একাই সাজিয়ে নেন ভালোবাসার সকালের আয়োজনে ভোরের সমস্ত কাব্য।
এই গল্পটি নয় কোনও ক্লিশে প্রেমের, বরং এক সৌন্দর্যবোধসম্পন্ন আত্মমগ্নতার—যেখানে ভালোবাসা নিজের মধ্যেই প্রজ্বলিত হয়, বহির্বিশ্বের উপস্থিতি ছাড়াই।
এই ভোর, এই চা, এই নারী—সব মিলে এক ধ্বনিময় নিঃশব্দতা। যেন রবীন্দ্রনাথের কোনো গীতবিতান থেকে হঠাৎ খসে পড়া একটি পঙ্ক্তি, অথবা জীবনানন্দের অলস আলোয় ভেজা কোনো বিস্মৃত দুপুর।