1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ০৯:১৩ অপরাহ্ন

ছাদের ধারে দাঁড়িয়ে এক স্বপ্নবালিকা

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫

আকাশ আজ নীল নয়, ধূসর। কিন্তু তার চোখে আছে এক অনাবিল আকাশ। যেন তার দৃষ্টির রেখায়ই সূর্য উঠবে, ঘুম ভাঙবে শহরের।
ছাদের ধারে দাঁড়িয়ে আছে সে। নাম তার শঙ্খধ্বনি। কেউ কখনো ডাকে না সেই নামে, শুধু তার মা একদিন বলেছিলেন—“তোর চোখে যে আলো, তাতে কাশফুলও ভুল করে বসন্ত ভেবে ফোটে।”
আজ দুপুরবেলা। চারদিক নিস্তব্ধ। শহরের ব্যস্ততা এখানে পৌঁছায় না। তালগাছের নিচে স্নিগ্ধ সবুজ ছায়া, আর ছাদের ইটের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শঙ্খধ্বনি—সে যেন এক জীবন্ত কবিতা।
তার পরনে কালো-সাদা প্রিন্টের শাড়ি। যেন এক পুরনো দিনের গল্প—যার প্রতিটি ভাঁজে লুকিয়ে আছে স্মৃতি, প্রেম, প্রতীক্ষা আর এক ফেলে আসা স্বপ্ন। সাদা ব্লাউজে যেন ঝলমল করছে তার সরলতা। তার ঠোঁটে যে হাসি, তা কোনো সাজের নয়—তা ভেতরের শান্তির, এক নিজেকে খুঁজে পাওয়ার উচ্ছ্বাস।
আজকের এই দিনটা তার জন্য আলাদা। সে জানে না কেন, কিন্তু মনে হয় কেউ আসবে। কেউ যাকে সে ভুলে যেতে চেয়েও পারেনি, কেউ যে একদিন বলেছিল, “তুমি যেন বাতাসে ভেসে বেড়ানো একটা গান।”
আকাশে পাখি উড়ে যাচ্ছে। বাতাসে চুল উড়ছে তার। সে চোখ মেলে তাকায় দূরে—যেখানে মেঘ আর গাছেদের আলিঙ্গন, সেখানে হয়তো তার স্বপ্নেরা গুঞ্জন করছে। শঙ্খধ্বনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। সময় স্থির হয়ে আসে। যেন এই ক্ষণেই সমস্ত ইতিহাস জমে আছে।
হঠাৎ করে তার মনে পড়ে যায়—বছর তিনেক আগে এক চিঠি এসেছিল। প্রেরকের নাম লেখা ছিল না। শুধু একটা লাইন—
“তোমার অপেক্ষা, এক ছাদের ধারে দাঁড়িয়ে থেকো।”
তখন সে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আজ, এই নির্জন দুপুরে, সেই চিঠির পংক্তি যেন পুনর্জীবিত হয়ে ফিরে এসেছে।
তালগাছের ফাঁক দিয়ে সূর্য একটু উঁকি দেয়। সময় এগোয়, কিন্তু শঙ্খধ্বনি দাঁড়িয়ে থাকে, স্থির, অনড়। সে হয়তো জানে না সে কার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু তার চোখে, ঠোঁটে, তার শাড়ির ছন্দে, তার দেহভঙ্গিমায়—সব কিছুতেই লেখা আছে সেই এক অপেক্ষার গল্প।
এই গল্পে কোনো শুরু নেই, কোনো শেষ নেই—আছে শুধু এক ছাদের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা এক স্বপ্নবালিকার হৃদয়ভরা প্রার্থনা।
ছাদের দেয়ালে হেলান দিয়ে শঙ্খধ্বনি দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে এখন আর কৌতূহল নেই, আছে স্থিরতা। অপেক্ষা করতে করতে তার হৃদয় এখন যেন এক সমুদ্র—শান্ত, অথচ গভীর। হাওয়ায় তার শাড়ির আঁচল উড়ছে, ঠিক যেমন উড়ে গিয়েছিল তার সেই শৈশব, সেই প্রথম প্রেম, আর এক হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন।
হঠাৎ এক ঝাঁক পাখি উড়ল আকাশে। তার দৃষ্টি সেদিকে গেল না। সে চুপ করে ছাদের নিচে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে, নিচের গেটের তালা খোলার শব্দ কানে এলো।
সে থমকে দাঁড়াল। শঙ্খধ্বনির বুকের ভেতরটা কেমন ধ্বনি তুলল। কেউ যেন ধীরে ধীরে উঠছে সিঁড়ি বেয়ে। পায়ের শব্দ—জানাশোনা এক ছন্দ। সে জানে, এই পায়ের শব্দ তার অপেক্ষার সুর হয়ে অনেকদিন ধরে তার নিঃশ্বাসে বাজছিল।
দেয়ালের কোণ ঘুরেই সে এসে দাঁড়াল। একটি লোক—চুলে অল্প পাক ধরা, হাতে ধরা পুরনো খাম। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শঙ্খধ্বনির চোখে।
শঙ্খধ্বনি কিছু বলল না। শুধু চোখে জলের রেখা এসে পড়ল। লোকটি চুপচাপ এগিয়ে এল, খামটি তার হাতে দিল।
খামে লেখা, সেই চেনা লেখা—
“তোমার অপেক্ষা, এক ছাদের ধারে দাঁড়িয়ে থেকো। আমি আর দেরি করব না।”
শঙ্খধ্বনি ফিসফিস করে বলল,
—“তুমি তো তিন বছর আগেই চিঠিটা পাঠিয়েছিলে। কেন আজ এলে?”
লোকটির কণ্ঠস্বর গভীর, কাঁপা কাঁপা—
—“তখন সাহস ছিল না। এখন পেরেছি। এখন যদি ফিরেও যাও, তবু আমার অন্তত বলা হবে—তোমাকে ভালোবাসি, সেই প্রথম দিনের মতো।”
শঙ্খধ্বনি কিছু বলল না। শুধু ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল, দেয়ালে হেলান দিল না আর, বরং লোকটির হাতটা ধরে রাখল।
আকাশে তখন রোদ পড়ে গেছে। গাছের পাতাগুলো যেন নতুন রঙে ঝিকিমিকি করছে। চারদিক নিস্তব্ধ, শুধু ছাদের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি মানুষ—যারা জানে, অপেক্ষা কখনো বৃথা যায় না।
শেষ হয় না এই গল্পের। শুধু সময় বদলায়, দিন পেরোয়। কিন্তু কোনো এক ছাদের ধারে দাঁড়িয়ে থাকে গল্পেরা—চুপচাপ, নিঃশব্দ, অথচ জীবনভরা।
শেষ পঙক্তি:
“কিছু গল্প শেষ হয় না—তারা শুধু এক সময় এসে নিজের ঘর খুঁজে পায়। আজ সেই গল্প নিজের ছাদে ফিরেছে।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট