সাংবাদিকতা শুধুই পেশা নয়, এটি একটি দায়িত্ব— অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম চালানো, সমাজের অন্ধকার থেকে সত্যকে টেনে আনা। এই পথ কখনো সহজ ছিল না, এখনো নয়। আর এই কঠিন পথেই আমি চলছি দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু আজ, আমি নিজেই অপপ্রচারের শিকার, এক বিকৃতমনা অপরাধী ওয়াসিমের মিথ্যার জালে। এই ওয়াসিম, যার বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ এলাকায়, সে শুধু একজন বিভ্রান্ত ও হতাশ তরুণ নয়— সে একাধিক অপরাধে জড়িত একটি চিহ্নিত নাম। আমি তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও অসৎ আচরণের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছিলাম, যা পুরোপুরি তথ্যনির্ভর ও ন্যায়ভিত্তিক। কিন্তু সেই প্রকাশের পরই সে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
ওয়াসিম কে? অপরাধী না প্রতিহিংসাকারী?
এই নামটি চরণদ্বীপ ও আশপাশের এলাকায় অপরিচিত নয়। তার বিরুদ্ধে আছে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগ, জাল কাগজপত্র তৈরি, এবং নিরীহ মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগ। অথচ সে নিজেকে সমাজকর্মী কিংবা নেতা সাজিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ায়। আমি তার এসব অনিয়ম ও অপরাধ নিয়ে তদন্ত করে সংবাদ প্রকাশ করলে, সে আমার বিরুদ্ধে নানাভাবে প্রতিশোধ নিতে শুরু করে— কখনো ফেসবুকে অশ্লীল ও ভিত্তিহীন পোস্ট দিয়ে, কখনো ইনবক্সে হুমকি দিয়ে, আবার কখনো আমার পারিবারিক ও পেশাগত মানহানির চেষ্টা করে। অপপ্রচার তার হাতিয়ার, সত্য তার ভয়- ওয়াসিমের মূল অস্ত্রই হলো অপপ্রচার। সে জানে তার বিরুদ্ধে সত্যি তথ্য রয়েছে, তাকে আর বেশিদিন আড়ালে রাখা যাবে না। তাই সে আমার মত সাহসী লেখকদের নিঃশেষ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
সে এমনভাবে আমার নাম জড়িয়ে মিথ্যা বক্তব্য ছড়ায়, যাতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। অথচ তার বিরুদ্ধে আমার প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো আজও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্তাধীন, এবং কিছু বিষয়ে প্রাথমিক তথ্যও সরকারিভাবে নিশ্চিত হয়েছে।
আমার নীরবতা নয়, জবাব চাই
আমি নীরব থাকলে শুধু নিজের নয়, সমাজের বিরুদ্ধেও অন্যায় করতাম। আমি কলম ধরেছি সত্যের পক্ষে, অপপ্রচারকারীর বিরুদ্ধে। আমি চাই— প্রশাসন এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিক। তার ফেসবুক পোস্টগুলো পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে, কতটা বিদ্বেষ, কতটা মানসিক বিকারগ্রস্ততা এবং কতটা অপরাধের আভাস লুকিয়ে আছে তার ভাষায়। একটি প্রশ্ন, আমাদের সবার জন্য- যদি কোনো দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি কিংবা মাদকসেবীর বিরুদ্ধে একজন সাংবাদিক সত্য তুলে ধরেন— তবে কি তার পুরস্কার হবে অপপ্রচার, হুমকি আর চরিত্রহনন?
আমার ঘটনা এর উত্তর হয়ে থাকুক না।
ওয়াসিমের মতো লোকজন সমাজের ঘুণপোকা। তাদের অপপ্রচার, মিথ্যা, হুমকি— এসবই প্রমাণ করে তারা আসলে সত্যকে ভয় পায়। আমি ভয় পাই না, কারণ আমি জানি আমি সঠিক। আমি সত্য বলেছি, বলব— এবং সকল সত্যপ্রেমী মানুষকে আহ্বান করব, পাশে দাঁড়ান। নীরব থাকবেন না-“চরণদ্বীপে ওয়াসীমের অপরাধ সাম্রাজ্য: নদীপথে মদের গন্ধ, অস্ত্রের ঝনঝনানি” প্রতিবেদন: অনুসন্ধান টিমের কিছু কথা –চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর প্রত্যন্ত ইউনিয়ন চরণদ্বীপ—একসময় কৃষি ও নদীকেন্দ্রিক শান্তিপূর্ণ এই জনপদ এখন ভয়, আতঙ্ক আর অপরাধের কারণে বারবার সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। এককভাবে এই পরিবর্তনের নেপথ্যে উঠে এসেছে একটি নাম—মোহাম্মদ ওয়াসীম, পিতা আব্দুস চোবান। আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ওয়াসীম চরণদ্বীপ এলাকায় গত এক দশকে গড়ে তুলেছে একটি সুসংগঠিত অপরাধ সাম্রাজ্য, যার পরিধি মাদক উৎপাদন থেকে শুরু করে চোরাই মোটরসাইকেল সিন্ডিকেট, নারী পাচার,গরু চুরি, অস্ত্র সরবরাহ, নদী ডাকাতি পর্যন্ত বিস্তৃত। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, চরণদ্বীপের দুর্গম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ওয়াসীম ও তার সহযোগীরা তৈরি করেছে গোপন চোলাই মদের কারখানা। এই বিষাক্ত মদ স্থানীয় যুব সমাজের ধ্বংস ডেকে এনেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, “প্রতিদিন রাতেই মদের গন্ধ পাওয়া যায়, কে জানে কত ছেলেমেয়ে নেশায় মরছে, কিছু বললেই হুমকি দেয়।”
চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে চুরি হওয়া মোটরসাইকেল চরণদ্বীপ হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ওয়াসীমের নেতৃত্বেই চলছে এই চোরাই বাহন সিন্ডিকেট। বোয়ালখালী থানার একটি গোপন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন মাসে চরণদ্বীপ থেকে উদ্ধার হওয়া তিনটি চোরাই মোটরসাইকেলের সূত্র ওয়াসীমের সঙ্গে মিলে গেছে।
সর্বাধিক ভয়াবহ অভিযোগগুলোর একটি হলো—ওয়াসীম স্থানীয় দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জাল ফেলেছে পতিতাবৃত্তির চক্রে। এক নারী, যার বোন নিখোঁজ, জানালেন— “ওদের মানুষ চিনতাম না। টাকার লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে ওদের আর খুঁজে পাইনি। সবাই বলে, ওয়াসীমই নিয়ে গেছে। কর্ণফুলী নদীপথে মাছ ধরা নৌকা, কাঠের ট্রলার কিংবা ছোট বাণিজ্যিক নৌযান—সবই ওয়াসীমের ডাকাত দল থেকে নিরাপদ নয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সে নিজে সরাসরি অস্ত্র হাতে না থাকলেও সংঘবদ্ধ চক্রকে অস্ত্র সরবরাহ করে এবং তাদের পরিচালনা করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে বলেন, রাতে নদীতে যাওয়া মানে জীবন হাতে নিয়ে যাওয়া। কিছু বললেই বলে, ‘ওয়াসীম ভাইয়ের কাছে বিচার দিছি’—মানে পুলিশও কিছু করতে পারে না।” অভিযোগ রয়েছে, ওয়াসীম দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক প্রভাব ও কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতায় আইনের হাত এড়িয়ে চলছে।
স্থানীয়রা বলছেন— “থানায় গেলেও কেস নেয় না। বলে প্রমাণ দাও। প্রমাণ দিলেও কোর্টে গিয়ে হারায়। কেন হারায়, সবাই জানে।” চরণদ্বীপবাসীর একটি প্রশ্ন এখন দিন দিন গর্জে উঠছে—আর কতকাল ওয়াসীমের মতো অপরাধীদের হাতে জিম্মি থাকবে একটি জনপদ?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে প্রশাসনকে।
তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীর বিরুদ্ধে শক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
নইলে চরণদ্বীপ হবে অপরাধীদের আশ্রয়স্থল, আর মানুষ হারাবে বিশ্বাস—আইন, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি।
বোয়ালখালীর বাতাসে এখন আর আগেকার সেই শান্ত নদীর গন্ধ নেই—গোলাবারুদের ধোঁয়া, চোলাই মদের গন্ধ আর নদীপথে বন্দুকের ঝনঝনানি মিশে এক অশান্ত সময়ের পূর্বাভাস দেয়। এই সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এক নাম: ওয়াসীম। একসময় ‘তুচ্ছ মদের কারবারি’ হিসেবে পরিচিত যে যুবক, সে এখন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীপথের অপরাধ-নাট্যমঞ্চের মূল কুশীলব। চোলাই মদের অবৈধ ব্যবসা দিয়ে শুরু—আজ তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত অস্ত্র ব্যবসা, নদী ডাকাতি ও চাঁদাবাজির মতো নানা অপরাধে।
প্রতিদিন সিরিয়া ফরেস্ট ঘাট থেকে পাহাড়ি বড়খোলা চাকমাপাড়া পর্যন্ত এক বিশাল গোপন চেইনে তৈরি হচ্ছে বিষমদ। এই মদের একমাত্র সঞ্চালক ও নিয়ামক এখন ওয়াসীম। মদের বোতল থেকে শুরু করে নদীপথে যাতায়াত করা নৌকাগুলো পর্যন্ত তার অনুমতি ছাড়া কিছুই নড়বে না—এই ভয়ই তার শাসনের অস্ত্র।
তার বাহিনী পাহারা দেয় নদীপথ। কেউ নিয়ম ভাঙলে চলে প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়া, বোট আটক, চাঁদাবাজি, এমনকি নিপীড়ন। চট্টগ্রামের অপরাধ ইতিহাসে কর্ণফুলী নদী যেন আর নদী নয়, রক্ত আর মদের বয়ে চলা এক প্রাচীন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়াসীমের অপরাধচক্রের মূলে রয়েছে এক বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার—ওয়ান শুটার, শর্টগান, রাইফেল—সবই তার নিয়ন্ত্রণে। সে শুধু নিজে ব্যবহার করে না, ভাড়া দেয় নদীর ডাকাতদের কাছে। রিংকু, সাদ্দাম মেম্বারের মতো দুর্ধর্ষ ডাকাতরা এখন ওয়াসীমের অস্ত্রে সজ্জিত।
১৯৯৭ সালে কর্ণফুলীতে এক নজিরবিহীন ডাকাতি চালিয়ে নজরে আসে ওয়াসীমের দল। অভিযানে তার নেতা আব্দুল হাকিম মারা গেলেও ওয়াসীম পালিয়ে যায়। গণপিটুনির শিকার হয়েও সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে না। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোর দুটিই এখনো তার সংগ্রহে রয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি।
তার পরিবারের নামও যুক্ত হয়েছে অপরাধের ইতিহাসে। জেঠা মোনাফ চেয়ারম্যানের নির্বাচনী সহিংসতায় ব্যবহৃত অস্ত্র, শ্বশুরের নির্বাচনে রক্তাক্ত লড়াই—সব মিলিয়ে ওয়াসীম যেন এক পারিবারিক অপরাধ ঐতিহ্যের উত্তরসূরি।
তার গড়ে তোলা নেটওয়ার্কে রয়েছে জামাল, বাট্টো নুরুল, ইসমাইল, সাহেরের ছেলে আলমগীর প্রমুখ—যারা চট্টগ্রামের বন্দর, পাহাড়তলী, অক্সিজেন, চাক্তাইয়ের অলিগলি পর্যন্ত ছড়িয়ে দিচ্ছে তার মদের সাম্রাজ্য। প্রশাসনের একাংশ ওয়াসীমকে ধরতে উদ্যোগ নিলেও রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে প্রতিবার সে বেরিয়ে এসেছে বীরদর্পে। একসময় যাঁরা তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, সেই ওসি রাজ্জাক ও এসআই সাইফুল পর্যন্ত আজ নীরব দর্শক। ওয়াসীম হয়ে উঠেছে ‘ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা এক দানব’। তার আয়ের উৎস অবৈধ, কিন্তু তার দখল বৈধ রাজনীতিকেও লজ্জায় ফেলে। তরুণদের একাংশ তাকে ‘আইডল’ ভাবছে, অস্ত্র হাতে নদীর রাজত্বের স্বপ্ন দেখছে। বোয়ালখালীর নদীপথে আজ আর মাছ ধরা হয় না, শোনা যায় শুধু অস্ত্রের আওয়াজ। ওয়াসীম একক কোনো ব্যক্তি নয়, সে এক প্রতীক—একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রব্যবস্থার, এক চুপ করে থাকা প্রশাসনের, এবং এক ভয়ংকর সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি। এখন যদি তাকে প্রতিহত করা না হয়, গ্রেফতার করে তার অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস না করা হয়, তাহলে বোয়ালখালী একদিন অস্ত্র, মদ আর ভয়ঙ্করতা দিয়ে ঢাকা পড়ে যাবে।
সেই দিন বেশি দূরে নয়, যখন সেখানে জন্মাবে না কোনো স্বপ্ন, তৈরি হবে না কোনো ভবিষ্যৎ। সময় এখনই—একটি জোরালো, নিরপেক্ষ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সমন্বিত অভিযান ছাড়া এই অন্ধকার থামানো যাবে না। নইলে কাল ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।