পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শব্দটি যদি কেউ খুঁজে ফেরে, শব্দকোষ নয়—তাকে তাকাতে হবে এক মায়ের চোখের দিকে।
সেই চোখে যেমন আশীর্বাদের আলো, তেমনি থাকে দীর্ঘশ্বাসে চাপা কষ্টের ছায়া। বিশ্ব মা দিবসে এমন এক দৃশ্য ধরা পড়ল লন্ডনের নিঃশব্দ বিকেলে, যেখানে রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতা পেরিয়ে, নির্বাসনের দীর্ঘ রেখা ছিন্ন করে—এক মা তাঁর ছেলের বুকে ফিরে পেলেন শান্তির আশ্রয়। এই মা—তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, শতাব্দীর রাজনৈতিক প্রতিকূলতার প্রতিমূর্তি, বাংলাদেশের আপসহীন নেত্রী—বেগম খালেদা জিয়া। আর তাঁর বুকভরা অভিমান নিয়ে পথ চেয়ে থাকা সেই পুত্র, তারেক রহমান।
দীর্ঘ বছর ধরে রাজনীতি, ক্ষমতা ও প্রতিহিংসার দোলাচলে এই মা ও সন্তানের মাঝখানে জমে উঠেছিল এক মহাসাগরের দূরত্ব।
মায়ের কোমরে শিকল পড়েছে কারাবন্দিত্বের নামে, ছেলের পায়ে লেগেছে নির্বাসনের কাঁটা। তবু ভালোবাসা তো বাঁধ মানে না, ভালোবাসা তো রাষ্ট্রের আইনে চলে না।
তাই একদিন, বিশ্ব মা দিবসের চিরচেনা সৌরভে, পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন শহর লন্ডনে দেখা মিলল সেই মহামিলনের—যা কোনো কবির কল্পনাও ছাড়িয়ে যায়।
মায়ের শরীর ন্যুব্জ, চোখে ক্লান্তি, মুখে অসীম স্নেহ। ছেলের বুকে সেই মুখ লুকিয়ে যখন তিনি ফুঁপিয়ে কাঁদলেন, তখন লন্ডনের নিঃশব্দ রাস্তাগুলো যেন সেই কান্নার অনুবাদ করে ফেলল কাব্যে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ থামাতে পারেনি নিজের চোখের জল। কেউ বললেন, “এই দৃশ্য শুধু মা দিবস নয়, এ তো এক দেশের ইতিহাসের অশ্রু।” বাঙালি জাতি জানে, শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে খালেদা জিয়াকে অন্ধকারে রাখার কী নিষ্ঠুর পরিকল্পনা চলেছে। একদিকে মিথ্যা মামলায় তাঁকে বন্দী করা হয়েছে, অন্যদিকে তাঁর সন্তানকে বিদেশে আটকে রাখা হয়েছে তিলে তিলে। রাষ্ট্র যেন চেয়েছিল, মায়ের বুক খালি থাকুক, সন্তানের হাত খুঁজে না পাক মাতৃমুখ।
কিন্তু রাষ্ট্র জানে না—একজন মা কোনো শাসকের নির্দেশে ভালোবাসা থামান না।
আজ, এই কলামে আমি কেবল একজন রাজনীতিক নেত্রী কিংবা একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নয়, আমি দেখেছি একজন মাকে—যিনি হেরে যাননি, বরং যাঁর চোখের জল দিয়ে লেখা হয়েছে মমতার নতুন সংবিধান। এই দৃশ্য আমাদের চোখে এক নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে—যেখানে রাজনীতি নয়, মানবতা জিতেছে, ক্ষমতা নয়, ভালোবাসা জিতেছে।
লন্ডন থেকে ফিরে যাওয়ার সময় খালেদা জিয়া আবারও ছেলের বুক থেকে নিজেকে ছিঁড়ে এনে ফিরে গেলেন বাংলাদেশের দিকে। সেই বিদায় মুহূর্তে ছেলের চোখের ভাষা যেন বলেছিল—”মা, তোমার হাসি যেন আবারও ফিরিয়ে আনে আমাদের সব ছিনিয়ে নেওয়া দিনগুলোকে।” বিশ্ব মা দিবসের এই অনবদ্য মুহূর্ত যেন নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে দিল মা শব্দটিকে।
তাই বলতেই হয়—এই মা, এই দৃশ্য, এই ভালোবাসা—এমন নিদর্শন যুগে যুগে কেবল ইতিহাসের গাথায় থাকে না, থেকে যায় মানুষের হৃদয়ে। এই মা—বেগম খালেদা জিয়া—আজকের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মায়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন, যাঁর ভালোবাসা হার মানায় সব বাধা-বিপত্তিকে। আসুন, এই বিশ্ব মা দিবসে আমরা তাঁকে কুর্নিশ জানাই। এবং প্রতিজ্ঞা করি—এই মিলনের হাসিমুখ যেন আর না হারিয়ে যায় কাঁটাতারে, হুকুমে কিংবা নিষ্ঠুর রাষ্ট্রযন্ত্রের ইন্ধনে।